অভাবের কারণে নয় মাসের শিশু সন্তানকে মাত্র ৫০০ টাকায় দত্তক দিয়ে দেন মা শরীফা খাতুন। বিষয়টি গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ওই নবজাতককে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকির হোসেন।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) বিকেলে পঞ্চগড় সদর উপজেলার ইউএনও জাকির হোসেন পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিবারের সদস্যদের কাছে শিশুকে হস্তান্তর করেন।
জানা গেছে, মানসিক ভারসাম্যহীন শরীফা খাতুন জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট মুসলিমবাগ এলাকায় তিন সন্তানকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে ভিক্ষাবৃত্তি করে বসবাস করতেন। গত এক বছর আগে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় শরীফা খাতুনের। এর পর সন্তানদের নিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলতো তার পরিবার।
গত মঙ্গলবার নিজের নয় মাসের কন্যা সন্তানকে পঞ্চগড় পৌরসভার দক্ষিণ তেলিপাড়া এলাকায় একটি হলুদ ক্ষেতে রেখে ভিক্ষা করতে যায় শরীফা খাতুন। এসময় শিশুটিকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করেন স্থানীয় রুনা আক্তার নামে এক নারী। পরে শিশুসহ শরীফাকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান তিনি। রুনার কোনো সন্তান না থাকায় শিশুটিকে দত্তক নিতে চাইলে মাত্র ৫০০ টাকার বিনিময়ে নিজ সন্তানকে রেখে চলে যান শরীফা। নিজ সন্তানকে দত্তক দিয়ে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছিলেন শরীফা। পরে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেন ইউএনও জাকির হোসেন। বর্তমানে শিশুটিকে দেখভাল করছে শরীফার ১৬ বছরের বড় ছেলে নয়ন।
পরিবারের সদস্য জানায়, একটা ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার শরীফা। উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় ভিক্ষা করে চলতেন তিনি। নিজ সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন তিনি। টানা চারদিনে শিশুটির কোনো সন্ধান দিতে পারেননি তিনি। একসময় ঠিকানা জানায়। অবশেষে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় নিজ পরিবারের কাছে ফিরেছে শিশুটি। অসহায় পরিবারটি সরকারি সহায়তা পেলে হয়ত একটু ভালো থাকতে পারবে।
শরীফার বড় ছেলে নয়ন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, চারদিন আগে মা আমার বোনকে নিয়ে পঞ্চগড়ে যায়। পরে একসময় বাড়িতে এসে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। পরে বিষয়টি জানার জন্য ও বোন কোথায় তা জানতে চাইলে তিনি কিছু জানাচ্ছিলেন না। পরে অনেক কৌশলে বোনের অবস্থান জানতে পারি। পরে সেই বাড়িতে গিয়ে বোনকে ফেরত চাইলে তারা দিতে অস্বীকার করেন। আরো জানতে পারি ৫০০ টাকার বিনিময়ে বোনকে দত্তক দিয়ে দেন। পরে তারা একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে নেন। পরে সাংবাদিক ও পুলিশ এসে তদন্ত করে আমাকের বোনকে আনতে নির্দেশ দিলে মাকে নিয়ে গিয়ে বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসি।
মোস্তাফিজুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, অনেক আগ থেকে ওই মহিলাকে দেখছি। সে ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চালান। তবে কয়েকদিন আগে নিজের সন্তানকে মানুষের কাছে দিয়ে এখন প্রায় পাগল হয়ে বেড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের হস্তক্ষেপে সুষ্ঠু সমাধান করে ভারসাম্যহীন নারীর কাছে তার বাচ্চা ফেরত দেওয়া হয়েছে। যেহেতু ওই নারীর বাড়ি বোদা উপজেলায়, সেখানকার ইউএনওকে জানিয়ে সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন