চালের ছিদ্র দিয়ে রোদ ঢুকছে। বর্ষাকালে পড়ে পানিও। বেড়া না থাকায় হুহু করে ঢুকছে উত্তুরে হাওয়া। এই হাওয়ার মুখেই জড়োসড়ো হয়ে পাঠ নিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। কোনো কোনো শ্রেণিকক্ষে চেয়ার-টেবিল, এমনকি বসার বেঞ্চ পর্যন্ত নেই। এমন দৈন্যদশা খুলনার কয়রা সরকারি মহিলা কলেজের। মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় প্রতিষ্ঠানটিতে অধ্যয়নরত ৯ শতাধিক শিক্ষার্থীর দুর্ভোগের শেষ নেই।
বুধবার দুপুরে কলেজটিতে গিয়ে দেখা গেছে, তিনতলাবিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনটি শুধু পাকা। কাছেই একতলা টিনশেডের ছাত্রীনিবাস। এ ছাড়া কোনো পাকা ভবন নেই। শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য বাঁশের খুঁটির ওপর টিনের চালা ও বেড়া দেওয়া শ্রেণিকক্ষ রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে দুটির অবস্থা বেহাল। সেখানে পাঠদানের পরিবেশই নেই। অন্য তিনটি কক্ষে পালাক্রমে পাঠদান চলে। এর একটিতে দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ক্লাস নিচ্ছিলেন একজন শিক্ষক। ওই সময় শ্রেণিকক্ষের বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন বেশ কিছু শিক্ষার্থী। ক্লাস শেষ হলে ওই কক্ষে তাদের ক্লাস নেওয়া হবে।
অপেক্ষারত শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষে পড়েন। তাদের একজন শিল্পী আকতার। তিনি বলেন, ‘একটি সরকারি কলেজে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই, এটা ভাবাও যায় না। ছোটকাল থেকেই শুনে আসতেছি আমাদের এলাকা অবহেলিত। এর প্রমাণ কলেজে এসে দেখতি পাচ্ছি।’ মুসলিমা পারভীন নামে আরেক ছাত্রী বলেন, ‘ভাঙাচোরা ক্লাসরুমে এসে মন খারাপ হয়ে যায়। আসতে মন না চাইলেও পড়াশোনার তাগিদে আসতি হয়।’
এ শিক্ষার্থীরা জানান, কলেজে পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও দুটিতে ক্লাস করার পরিবেশ নেই। বাকি তিনটির অবস্থাও মানসম্মত নয়। যে কারণে নিয়মিত ক্লাস করতে পারছেন না। শ্রেণিকক্ষের অভাবে ছাত্রী নিবাসের একটি কক্ষেও ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ফলে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হচ্ছে আবাসিক ছাত্রীদের।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী তিথি বৈদ্যসহ হোস্টেলের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, ছোট ছোট কক্ষে তিনজনের থাকাই কষ্টকর। সেখানে পাঁচ-ছয়জন করে থাকতে হচ্ছে। এতে পড়াশোনা করা যায় না। তা ছাড়া সামনের ডোবার নোংরা পানিতে মশা-মাছি বংশবিস্তার করছে।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অরুণ কুমার মল্লিক বলেন, শ্রেণিকক্ষের সংকট তো আছেই। যেগুলো আছে সেগুলোরও বেড়া ভাঙা, চাল ফুটো, মেঝে এবড়োখেবড়ো। মানসম্মত শ্রেণিকক্ষ না থাকায় শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজের নাম শুরুতে ছিল জোবেদা খানম মহিলা কলেজ। সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা জি এম সোহরাব আলী কলেজ এলাকায় তিন বিঘা জমি ও অন্য স্থানে আরও ২২ বিঘা জমি কিনে দেন। পাশাপাশি নগদ ১৫ লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ২০১৬ সালের মার্চে জাতীয়করণ করা হয়। তখন নাম বদলে রাখা হয় কয়রা সরকারি মহিলা কলেজ। এখানে বর্তমানে কলেজে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠদান করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন ৩১ জন। এ ছাড়া অফিস সহকারীসহ মোট কর্মচারী আছেন ১৮ জন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। জাতীয়করণের পর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে সংকট আরও বেড়েছে। নতুন ভবন নির্মাণে তারা চেষ্টা করছেন। তিনি আরও বলেন, কলেজটির নামকরণের জটিলতায় বেশ কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন থমকে ছিল। এখন সেই জটিলতা কেটে গেছে। দ্রুত সব সংকট কেটে যাবে বলে তাঁর আশা।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন