বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে বেহাল অবস্থা চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের। কয়েক বছর মেরামত না হওয়ায় হাজীগঞ্জ থেকে খাজুরিয়া অংশের প্রায় ১৭ কিলোমিটার সড়কে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
গাড়ি চালক ও যাত্রীরা বলছেন, সড়কের বেহাল অবস্থা। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা যেতে এক ঘণ্টার পথ। এখন যেতে লাগছে প্রায় তিন ঘণ্টা। এ অবস্থায় সড়কটি সংস্কার ও ফোর লেন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
তবে সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলে দ্রুতই সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হবে। কবে নাগাদ সংস্কারকাজ শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না তারা।
চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, সড়কটির বিভিন্ন স্থানে রয়েছে নানা সমস্যা। বিশেষ করে হাজীগঞ্জ থেকে খাজুরিয়া পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রাস্তা পড়ে আছে একেবারে বেহাল অবস্থায়। প্রায় দেড় বছর ধরে উয়ারুক, দোয়াভাঙ্গা, জগতপুর, কালিয়াপাড়া, খাজুয়ারিয়া এলাকার রাস্তায় ছোট বড় গর্ত। একেকটি গর্ত ২ থেকে ৪ ফুট আর গভীরতা ৩ থেকে ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত। অনেকগুলো বিটুমিন এক জায়গায় জড়ো হয়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয়েছে টিলা। রাস্তার দুই পাশে জঙ্গলের কারণে পথচারীদের চলাচলের ফুটপাতও নেই।
পরিবহন চালকরা জানান, বাস-ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহন সড়কের গর্তের মধ্যে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ঢালাই উঠে গেছে। পাথর ও ইটের সুরকিগুলো এদিক-ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যার ফলে গাড়ি ব্রেক করলে স্লিপ কেটে দুর্ঘটনায় পতিত হচ্ছে। এসব কারণে যানবাহন চলাচলের প্রায় অযোগ্য হয়ে পড়েছে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়কের এই ১৭ কিলোমিটার এলাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে না।
দুর্ভোগের কথা জানিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সড়কে বড় বড় গর্তের কারণে গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। গাড়ি চালানো যায় না, উল্টে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়।’
স্থানীয় বাসচালক মিজান খান বলেন, ‘লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ভোলা ও চট্টগ্রামের অনেক পরিবহন চাঁদপুর হয়ে বিভিন্ন সড়কের পাশাপাশি এই সড়কটি ব্যবহার করে। তাই সড়কটিতে অনেক চাপ থাকে। তার মধ্যে আবার সড়কটির বেহাল দশার কারণে তৈরি হয়েছে দুর্ঘটনার বহু ফাঁদ।’
সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে উল্লেখ করে বোগদাদ বাসের চালক রহমান খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিন চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কে চারবার যাত্রী নিয়ে গাড়ি আসা যাওয়া করি। খাজুরিয়া থেকে উয়ারুক পর্যন্ত রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। গর্তে পড়ে গাড়ির স্প্রিং ভেঙে যায়, স্টেয়ারিংয়ের সঙ্গে যে জয়েন্ট থাকে সেটি ভেঙে যায়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ি অনেক সময় খাদে পড়ে যায়। এতে চালক ও যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরি।’
একই সড়কের পিকআপচালক জহির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সড়কের কাজ ভালোভাবে করে করেন না দায়িত্বশীলরা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এই সড়কটির সংস্কারকাজও হয় না। এখন বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের গর্ত হয়ে গেছে। খুব সতর্কভাবে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। তারপরও ঘটছে দুর্ঘটনা।’
একই কথা জানিয়েছেন বাসচালক সফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘এই সড়কে যানবাহনের বেশি চাপ থাকে। চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বোগদাদ, আইদি, পদ্মাসহ বিভিন্ন পরিহন চলাচল করে। পাশাপাশি চলাচল করে পণ্যবাহী ট্রাক। গর্তে পড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। সড়কটি ফোরলেন করা হলে আমাদের ভোগান্তি কমতো।’
স্থানীয় শিক্ষার্থী আপন বলেন, ‘এই সড়কে দিন দিন যান চলাচল বাড়ছে। অনেক খানাখন্দ হয়ে গেছে। তাই সময়ের প্রয়োজনে সড়কটি চারলেন করা উচিত। তাহলে সবার সুবিধা হবে।’
কচুয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘বালুবাহী ট্রাকগুলো মাত্রাতিরিক্ত ওজনের মালামাল নিয়ে চলাচলের কারণে রাস্তার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। কুমিল্লা অংশে সব সময় কাজ হওয়ায় সেটুকু ভালো থাকে। কিন্তু চাঁদপুর অংশে খাজুরিয়া থেকে হাজীগঞ্জ পর্যন্ত বড় গাড়ি চলাচল করতে খুবই সমস্যা হচ্ছে। এমনকি রিকশা বা অটোরিকশা চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। আমি মনে করি, এটি আমাদের প্রতি একটি বৈষম্য। সড়কটি চারলেনে উন্নীত করার দাবি জানাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওয়াছিউদ্দিন আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে সড়কটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের জনবল দিয়ে মেরামত করেছি। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। সংস্কারের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তা অনুমোদন হয়েছে। কুমিল্লা অফিস থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তা মূল্যায়নের পর কাজ শুরু হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন