রাজধানীজুড়ে তাণ্ডব ও ভাঙচুর চালিয়েছেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। তিন দিনের মধ্যে রাজধানীতে ব্যাটারি রিকশা বন্ধে দেওয়া হাই কোর্টের নির্দেশের প্রতিবাদে গতকাল নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবরোধ করে নৈরাজ্য চালান তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় সড়কে যানবাহন চলাচল, রাজধানীজুড়ে তৈরি হয় তীব্র যানজট। ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। রিকশাচালকদের অবরোধে সাময়িক বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল, বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ট্রেনের শিডিউল। গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত আগারগাঁও, কল্যাণপুর, গাবতলী, টেকনিক্যাল, মহাখালী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, ডেমরা, খিলগাঁওসহ মহানগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। তারা আগারগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান। মহাখালীতে সেনাকল্যাণ সংস্থার (এসকেএস) শপিং মল এবং সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথ ভাঙচুর করেন। মিরপুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষুব্ধ রিকশাচালকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টার পর আন্দোলনকারীদের সংখ্যা মহাখালী এলাকায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে। পৌনে ৩টার দিকে সেখানে ১০০-এর মতো আন্দোলনকারী ছিলেন। পরে তাদের পুলিশ ও সেনা সদস্যরা রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন। তারা রাস্তা থেকে সরে গেলে একদিকে যেমন মহাখালী রেললাইনের অবরোধ শেষ হয়, তেমন রাস্তার অবরোধও শেষ হয়। বিকাল ৩টায় মহাখালীর সব রাস্তায় যান চলাচল শুরু হয়। যান চলাচল শুরু হলেও সারা দিনের অবরোধের রেশ কাটেনি, যান চলাচলে ছিল ধীরগতি।
এদিকে কল্যাণপুর, আগারগাঁও, পল্লবীর সড়কেও আন্দোলন করেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। ঢাকা মহানগরী এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় রাজধানীর কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়ার মধ্যবর্তী স্থানে আন্দোলন করেন চালকরা। দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। এর ফলে আগারগাঁও থেকে মিরপুর ১০ নম্বর পর্যন্ত সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়। যদিও বিকাল ৪টার আগেই চালকরা চলে যান, তবে তাদের আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট যানজটের রেশ রয়ে যায় রাত অবধি। এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের প্রতিবাদে সকাল ১০টার দিকে মহাখালী রেলগেট অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন চালকরা। এতে ঢাকা থেকে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ১০টার পর কমলাপুর স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। রেল যোগাযোগ ও সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
জনসাধারণের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ সময় সেনা সদস্যদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন তারা। পরে সেনাবাহিনী ধাওয়া দিলে চালকরা রাস্তা থেকে সরে যেতে বাধ্য হন। বিকাল ৩টার পর ওই এলাকায় যান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। শুরু হয় ট্রেন চলাচল। অন্যদিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান নেওয়া চালকদেরও ধাওয়া দেন সেনা সদস্যরা। ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের অবরোধে সৃষ্ট তীব্র যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। মহাখালীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে বলেন, ‘ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তে আমাদের পেটে লাথি দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন কী করব? চুরি করব নাকি ছিনতাই করব? রিকশা না চালাতে পারলে কী করে চলব? কীভাবে টাকা আয় করব? আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছেড়ে যাব না।’
ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন দাবি করে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা বলেন, ‘হঠাৎ বিনা উসকানিতে আমাদের লাঠিপেটা করা হয়। আমরা তো পেটের দায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। তাহলে কেন বিনা কারণে আমাদের এভাবে মারা হলো?’
এসকেএস শপিং মল ও সিটি ব্যাংকের বুথ ভাঙচুর : অবরোধ চলাকালে মহাখালীতে এসকেএস শপিং মল ও সিটি ব্যাংকের একটি বুথ ভাঙচুর চালান ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। দুপুর ১২টার দিকে আন্দোলনকারী চালকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। বিক্ষুব্ধ চালকরা এসকেএস শপিং মল ও রাওয়া ক্লাবে ভাঙচুর চালান। শপিং মলের আমানা বিগ বাজার সুপার শপ ও একটি ক্যাফেতে হামলা চালানো হয়। অন্যদিকে এসকেএস শপিং মলের সামনে সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথেও ভাঙচুর চালান আন্দোলনরতরা। সিটি ব্যাংকের ওই এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে বড় বড় ইট ও পাথর দিয়ে এটিএম বুথের গ্লাস ভেঙে চুরমার করে দেন ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। আমি তখন এটিএম বুথের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তারা যখন এটিএম বুথে হামলা করে তখন আমি পালিয়ে যাই।’ এদিকে মহাখালীতে অবস্থিত রাওয়া ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়, সেখানেও ব্যাপক ভাঙচুর করেছেন আন্দোলনরত ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। রাওয়া ক্লাবের ভবনের সামনের দেয়ালে ব্যাপক ভাঙচুরের চিহ্ন দেখা যায়।
ক্লাবের ভবনের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত নয়ন বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে একদল ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক রেললাইনের পাথর দিয়ে ভবনের গ্লাসে ভাঙচুর চালান। তারা সংখ্যায় অনেক ছিল। আমরা দ্রুত ভবনের মূল ফটক বন্ধ করে দিই।’
আগারগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা : আগারগাঁওয়ে আন্দোলনকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। দুপুর ১২টার দিকে আগারগাঁও মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, সকাল ১০টা থেকে আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকরা। এর ফলে গাবতলী হয়ে পঙ্গু হাসপাতালের সড়কটি অবরুদ্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল এ সড়কে যান চলাচল। পরে পুলিশ ও শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। অবরোধকারীদের সরে যেতে বলেন শিক্ষার্থীরা। তখন দুই পক্ষে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। হাতাহাতিও ঘটে। চালকরা ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন