পুরান ঢাকার বংশাল পুরোনো চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত ‘বংশাল ত্রিকোণমিতি’ পার্ক। কাগজে-কলমে নাম এটা হলেও এখনও লোকমুখে প্রচলিত ‘লেডি বাগান’ পার্ক নামটি। পার্কের বৈশিষ্ট্যে যা থাকে বা পার্ক বলতে যা বোঝায় এর আকৃতি বা বৈশিষ্ট্যে তার কোনও ছাপ নেই। আয়তনেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সবচেয়ে সংকীর্ণ পার্ক এটি।
পার্কটির অবস্থান দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়। সংকীর্ণ ত্রিভুজের মতো দেখতে পার্কের চারদিকে লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা। সিটি করপোরেশনের তালিকায় ‘বংশাল ত্রিকোনাকৃতি’ পার্ক নাম হলেও কোনও নামফলক বা সাইনবোর্ড নেই, ফলে বোঝার উপায় নেই এটি কোন জায়গা।
পার্কের মূল ফটকটি তালাবদ্ধ। এর সীমানা ঘিরে চটপটি, ফুচকা, চা আর রিকশা-ভ্যান মেরামতের দোকান। পুরো পার্কের চারপাশ ঘেঁষে আবর্জনার কনটেইনার। ভেতরে ময়লা আবর্জনার স্তূপ। দখলে-দূষণে যে জীর্ণ অবস্থা, তা দেখে কেউ আঁচ করতে পারবে না এটি একটি পার্ক।
একসময় পার্কটির ব্যপ্তি আরও বিস্তৃত ছিল। বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে এই পার্কের আয়তন মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ২ একর। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, আগে পার্কটি আয়তনে বেশ বড় ছিল। একসময় পার্কের অভ্যন্তরে ‘যুব পাঠাগার’ নামে একটি লাইব্রেরি এবং শরীরচর্চার ক্লাবও ছিল। তবে স্বাধীনতার পর কয়েক দফায় রাস্তা সম্প্রসারণের সময় পার্কের অর্ধেকের বেশি জায়গা হারিয়ে গেছে।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা সোহরাব হোসেন বলেন, ব্রিটিশ আমলে লেডিসরা (ব্রিটিশ নারীরা) এখানে বেড়াতে আসতো। তাই সবাই এটাকে লেডি বাগান বলতো। পরে ওটাই নাম হয়ে যায়। এই এলাকায় আর কোনও পার্ক নাই। এলাকার মানুষ যে একটু হাঁটাহাঁটি করবে তারও উপায় নেই। সিটি করপোরেশন থেকে এর আগে পার্কটি সংস্কার করা হলেও অযত্ন অবহেলায় এর এখন বেহাল দশা।
বংশালের বাসিন্দা মো. আবু বকর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই মাঠে আমরা ফুটবল খেলছি। এখন হাঁটার জায়গাও নাই। সবচেয়ে বড় কথা এই পার্ক অব্যবস্থাপনার কারণে এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। অথচ কিছু সময় আগেও লাখ টাকা খরচ করে সংস্কার করা হয়েছে। তখন কাউন্সিলর বলেছিল একটা দৃষ্টিনন্দন পার্ক করবে। কিন্তু তা আর হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফের উদ্যোগে পার্কে একটি ফোয়ারা তৈরি হয়। কিন্তু দেখভালের হবে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে নতুন করে পার্কটিতে সৌন্দর্য বর্ধনের কথা থাকলেও কেবল সীমানা নির্ধারণ করেই দায় সেরেছে সিটি করপোরেশন।
৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, এটা আসলে কোনও পার্কের আওতায় পড়ে না। এর অভ্যন্তরে খেলাধুলা তো দূরের কথা, হাঁটাচলার জায়গা পর্যন্ত নেই। খামোখা এটাকে পার্ক বলাই বেমানান। তবে যেহেতু এটা ঐতিহ্যবাহী একটা পার্ক ছিল সেকারণে সিটি করপোরেশনের উচিত যেটুকু জায়গা আছে তার সৌন্দর্য বর্ধন করে বসার জায়গা করা। তাহলে এলাকার বাসিন্দারা দিনশেষে অন্তত বসে আড্ডা বা গল্প করতে পারবে।
পার্কের সৌন্দর্য বর্ধন এবং রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সবগুলো পার্কে নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা আছে। আমরা এবিষয়ে আলোচনা করব।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন