নগরীর সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংয়ের (সিআরবি) সাত রাস্তার মোড় গোল চত্বরে বসছে না বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল। তবে সেখানে ম্যুরালের পরিবর্তে ট্রেনের ইঞ্জিন বসানোর চিন্তা করছে রেলওয়ে কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে এ প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে রেলওয়ে সদরদফতরে। যদিও বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, তৎকালীন রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপির প্রচেষ্টায় এবং রেলওয়ের অর্থায়নে ম্যুরালটি নির্মাণ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট ম্যুরালটি নির্মাণে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে বড় আকারের ম্যুরাল হওয়ার কথা ছিল এটি। ৭ ফুট বেদির ওপর ৫৭ ফুট উঁচু হতো ম্যুরালটি। যেটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ৬ লাখ টাকা। ম্যুরালটি নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স।
ম্যুরাল নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের দিন প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক রেলপথ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি বলেছিলেন, ‘ম্যুরালটি হবে ৭ ফুট বেদির উপর ৫৭ ফুট উঁচু। বেদিতে ঝরনা হবে, শাপলা ফুট ফুটে থাকবে। ম্যুরালে এমনভাবে আলোর ব্যবহার হবে যাতে নান্দনিকতা ফুটে ওঠে। ত্রিকোণাকৃতির এই ম্যুরাল যেন বহুদূর থেকে যাতে দেখা যায়। মানুষ যেন এখানে এসে ম্যুরাল নিয়ে ছবি তুলতে পারে- এমন নান্দনিকতা ফুটিয়ে তোলা হবে।’
ম্যুরাল নির্মাণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কর্ণফুলী বিল্ডার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্সের মালিক শাহাদাত হোসেন তানিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এক কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি সিআরবির গোল চত্বরে স্থাপন করা হচ্ছিল। ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ অনেকাংশ শেষ হয়েছে। ম্যুরাল নির্মাণও শেষ পর্যায়ে ছিল। শুধুমাত্র এনে বসিয়ে দেওয়ার কাজটাই বাকি ছিল। আর মাত্র ৮-১০ দিন সময় পেলে পুরো কাজ সম্পন্ন করতে পারতাম। আমার অনেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। একটা টাকাও বিল নিতে পারিনি। ৫ আগস্টের পর ম্যুরাল নির্মাণের কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন রেলওয়ে থেকেও ম্যুরাল নির্মাণে কোনও সাড়া পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর দেশের দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। আমরা যারা আগে রেলওয়েতে ঠিকাদারি কাজ করতাম এখন রেলওয়ের কার্যালয়ে আসতে পারছি না। মূলত রেলওয়ে কার্যালয় এখন বিএনপি সমর্থিত ঠিকাদারদের দখলে। তাদের ভয়ে আমরা রেলওয়ে কার্যালয়ে আসতে পারছি না। আমার বিভিন্ন কাজের অনেক টাকা বিল বকেয়া আছে। এ টাকাও পরিশোধ করছে না রেলওয়ে।’
এ ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তা ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু জাফর মিঞা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন কী ম্যুরাল হবে নাকি অন্য কিছু হবে এ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। এ কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রায় এক কোটি টাকায় ব্যয়ে সিআরবির গোল চত্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ কাজ চলছিল। ম্যুরালটি সাবেক রেলওয়ের সংসদীয় কমিটির সুপারিশের রেলওয়ের অর্থে নির্মাণ করা হচ্ছিল। এ প্রকল্প এখনও বাতিল হয়নি। এখানে ম্যুরাল হবে নাকি অন্য কিছু বসবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। সিদ্ধান্ত রেলওয়ে সদরদফতর থেকে আসতে হবে। আমরা চাচ্ছি, আমাদের এখানে ট্রেন চলাচল শুরুর দিকের যে ইঞ্জিন আছে, সেটি নিয়ে বসাতে। দেখা যাক কী হয়।’
রেলওয়ে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এম আর মঞ্জু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রেলওয়ের সঙ্গে ম্যুরালের সম্পর্ক কী? তাও আবার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয় ম্যুরাল নির্মাণের খরচে। এগুলো ম্যুরাল নির্মাণের নামে কতিপয় ব্যক্তিদের টাকা পকেটে ঢোকানোর প্রকল্প ছিল। যারা রেলওয়ের অর্থে এ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিআরবি এক সময় ছিল আসাম-ব্ঙ্গেল রেলওয়ের সদরদফতর। এটি অনেক স্মৃতি বিজড়িত স্থান। এখানে ট্রেন চলাচল শুরুর দিকের ইঞ্জিন আছে। যেগুলো এখন আর ট্রেনে চলাচল করছে না। এর মধ্যে একটি ইঞ্জিন এখানে রাখা যেতে পারে। যেটি দর্শনার্থীরাও উপভোগ করবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন