আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি থাকলেও আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। গুমের শিকার পরিবারের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সরকার বিবেচনা করছে। আমরা সবার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে গুম-অপহরণের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা কঠিন বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা। গতকাল গুলশানের এক হোটেলে এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইন ভলান্টিয়ার ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স-এর প্রোগ্রামে এ কথা বলেন তিনি।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ১৫ বছরের শাসনকে কয়েক সপ্তাহে মোকাবিলা করা খুব কঠিন। গুম-বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, এই সরকার সব সরকারের মতো না। আমরা কোনো পলিটিক্যাল ফিগার না। আল্লাহর রহমতে আমরা প্রত্যেকে আমাদের প্রফেশনে প্রতিষ্ঠিত। তাই আগের সরকারের পুনরাবৃত্তির প্রশ্নই আসে না। কোনো সরকার কিন্তু গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন গঠন করেনি। আমাদের সরকার পরিচালনায় যদি কোনো ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনারা নিশ্চয়ই সমালোচনা করবেন।
স্বজনদের উদ্দেশ্যে আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে থাকবো। আমাদের আন্তরিকতা নিয়ে কোনো সন্দেহ রাখবেন না, শুধু এটুকু দাবি করবো। আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের আন্তরিকতা আর সাহসের কোনো অভাব নাই। আমরা এটার শেষ দেখে ছাড়বো। খুন করার চেয়েও কাউকে গুম করাকে আরও জঘন্য অপরাধ আখ্যায়িত করে আসিফ নজরুল বলেন, একটা মানুষ যখন মারা যায়, আপনি জানেন তার ডেডবডি আছে। আর এটা কী দুঃসহ ব্যথা! আপনি জানেন না বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। তিনি বলেন, আপনারা ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন, আমিও তো মানুষ। আমারও তো সন্তান আছে। আমার বাচ্চাটা যদি গুম থাকে, আমার কী হবে? আমি যদি গুম হই, আমার স্ত্রীর কী হবে? আমি যদি গুম হই, আমার মায়ের কী অবস্থা হবে? এগুলো চিন্তা করলে মনে হয় যে, যারা এসব গুমের নির্দেশ দেয়, যারা গুম করে, আমার মনে হয় যে, তাদের পরিবারগুলোতে আমরা এসব পরিবারের সামনে নিয়ে আসি।
অনুষ্ঠানে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান বলেন, ন্যায়বিচার সবার অগ্রাধিকার। শুধু গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবারের জন্য নয়, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার প্রত্যেকের জন্য। গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবারের এক সদস্য কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, এই সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ, অন্তত একটা সন্ধান দিন আমাদের। আমাদের সাহায্য করুন। দশ বছর ধরে সন্তানকে খোঁজার বর্ণনা দিয়ে রওশন আরা বলেন, আমার ছেলেকে রাতের অন্ধকারে গুম করা হয়েছে। কতো জায়গায় খুঁজছি, কোথাও পাইনি। ফিরে পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে এখনো খুঁজছি। পাঁচ বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে ফেলা নাসরিন জাহান জানান, অন্ততপক্ষে আমাদের একটা সন্ধান দিন যে আছে বা নাই। নামাজের বিছানায় বসে যাতে অন্তত কিছু বলতে পারি। আমরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন