এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্কের জের ধরে খুন হয়েছেন শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম। পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত শিল্পপতির বান্ধবী রুমা নামের এক নারী ও তার সহযোগী রুকুকে রাজধানীর বনানীর একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে। এর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের লেক থেকে সাত টুকরা লাশ উদ্ধার এবং পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। গ্রেফতারের সময় হত্যায় ব্যবহৃত হেক্সো ব্লেড, চাপাতি, নিহতের সাফারি পোশাক উদ্ধার করে পুলিশ।
জসিম উদ্দিন মাসুম ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক ও সস্তাপুর ঈদগাহ মসজিদ কমিটির সভাপতি ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গ্রেফতার রুমার সাথে ব্যবসায়ী মাসুমের অবৈধ সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এসপি বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমকে হত্যা করে লাশ সাত টুকরা করে গুমের চেষ্টায় রুমা নমে এক নারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, শিল্পপতি জসীমউদ্দিন মাসুমের ক্ষতবিক্ষত সাত টুকরা লাশ রূপগঞ্জ লেক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ডিসিস্টের পরিচয় জানতে পারি। তার সাথে রুমা নামের একটি মহিলার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তিনি হত্যা করে লাশটি টুকরা করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন। হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা নিহতের প্রেমিকা রুমা (২৮) ও তার সহযোগী রুকু (২৮)-কে গ্রেফতারসহ উদঘাটন করা হয়েছে হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
এসপি বলেন, জানা গেছে,তরুনীকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তারা প্রায় সময় মিরপুরের একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে মিলিত হতেন। ওই ফ্ল্যাটে নিহত ব্যবসায়ী জসিমউদ্দীন অপর এক নারীকে নিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পারেন রুমা। এতে রাগে-ক্ষোভে রোববার নিহত জসীমউদ্দিনকে মিরপুরের শেওরাপাড়ার ফ্ল্যাটে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে গিয়ে দুধের সাথে চেতনানাশক দ্রব্য মিশিয়ে জসীমউদ্দিনকে পান করান। তিনি অচেতন হয়ে পরলে তাকে হত্যা করে লাশ কয়েকটি টুকরা করা হয়। পরে টুকরাগুলো রুমা নিজেই দু'দফায় উবারে এবং সিএনজিতে করে ফেলে যান।
তিনি আরো বলেন, আমরা লাশের টুকরা ও এই কাজে ব্যাবহৃত চাপাতি ও জামার টুকরা উদ্ধার করেছি। এ কাজে রুমাসহ অপর একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গত বুধবার দুপুরে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টর থেকে মাসুমের লাশের খণ্ডাংশগুলো উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, তিনটি পলিথিন ব্যাগে একজন পুরো শরীরের অন্তত সাতটি অংশ পাওয়া গেছে।
নিহতের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন যে দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি শিল্পপতি। চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সাথে কারো শত্রুতা রয়েছে বলে জানা নেই।
নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ১০ নভেম্বর বিকেলে বাসা থেকে গাড়িতে করে বের হয়ে গুলশান যান জসিম উদ্দিন। এর পর ব্যক্তিগত গাড়িচালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন, অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় জিডি করেন তার বড় ছেলে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ লিয়াকত আলী জানান, স্থানীয়রা বুধবার সকালে লেকের পাড়ে তিনটি কালো পলিথিন ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে এক এক করে পলিথিনের ব্যাগগুলো খুললে একজন পুরুষের শরীরের মাথা, দুটি হাত, শরীরের পেছনের অংশ, নাড়ি ভুঁড়ি, বাম পা, বাম উরুর কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন