বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ পৌর শহরে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন মো. জহুর আলী (৩০)। ঘটনার এক মাস পর তাঁর বড় ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছিলেন। এই মামলায় আসামি ধরা ও ছাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গুলিবিদ্ধ জহুর আলী। আজ বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে ওই মামলা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এর আগে বাদী হাফিজ আহমদ মামলা দায়েরের এক মাস ২০ দিন পর আদালতে হলফনামা দিয়ে বলেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি কোনো কিছু জানেন না, কোনো আসামিকে চেনেন না। এই আপসনামা দেওয়ার পর গত সোমবার তিনি আদালতে এলে সেখান থেকে একদল যুবক তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে সদর থানায় পৌঁছে দেওয়া হয়।
গুলিতে আহত মো. জহুর আলী এখন ঢাকা পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) আছেন। লাইভে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট সুনামগঞ্জ শহরে গুলিবিদ্ধ হন। পুলিশ তাঁর বাঁ পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এর এক মাস পর সাংবাদিক মাসুম হেলাল তাঁদের মামলা করার কথা বলেন। তাঁরা তখন মাসুম হেলালকে বলেছিলেন, যেহেতু পুলিশ তাঁকে গুলি করেছে তাই পুলিশের বিরুদ্ধে এই মামলা করবেন। পরে দেখা যায়, মামলায় ৯৯ জন আসামির নাম। নাম ছাড়া আরও আসামি ২০০ জন। মামলা দায়েরের সময় মাসুম হেলাল ৩০ হাজার টাকা দিয়ে বলেন, একজন তাঁকে চিকিৎসার জন্য দিয়েছেন।
এই মামলা নিয়ে মহাবিপদে আছেন উল্লেখ করে জহুর আলী আরও বলেন, ‘পুলিশ আমারে গুলি করছে। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করব। কিন্তু পরে দেখি মাসুম হেলাল সবাইরে মামলায় ঢুকাইয়া দিছে। এই মামলা নিয়া এখন ব্যবসা শুরু হইছে। সে (মাসুম হেলাল) কোটি টাকা নিছে। শুনছি সে এখন কানাডা চইলা যাইব। টাকা নিয়ে জেলে ঢুকায়, বের করে। মামলায় যারার নাম নাই তারারে পুলিশ ধরে বেশি। লোকজন বলে, ‘‘আমরা টাকা নিচ্ছি।’’ এটা মিথ্যা। আমরা কোনো টাকা পাই নাই। আমরা গরিব মানুষ। এখন আমরা পড়ছি মহাবিপদে। সোমবার কোর্ট থেকে আমার ভাইরে তুলে নেওয়া হইছে।’ জহুর আলীর লাইভের ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জহুর আলী বলেন, ‘আমি সোমবার সুনামগঞ্জে গিয়েছিলাম। রাস্তায় বের হইতে পারি না, লজ্জা লাগে। গুলি খাইলাম, এখনো হাসপাতালে আছি। চাকরি গেছে। আমার মামলা নিয়া যেন ব্যবসা, হয়রানি বন্ধ হয়।’ তবে তিনি তাঁর ঘটনার বিচার চেয়ে বলেন, ‘ঘটনায় আরও অনেকে আহত হইছিল, কেউ মামলা করছে না। এখন সবাই এই মামলা নিয়া খেলছে। টাকা কামাচ্ছে। আমারে গুলি করছে পুলিশ। সেই ওসি খালেদ এখনো তো গ্রেপ্তার হয় নাই।’
উল্লেখ্য, এই মামলায় সুনামগঞ্জের বাসিন্দা সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে এম এ মান্নান, মুহিবুর রহমানসহ বেশির ভাগই এখন জামিনে আছেন।
সাংবাদিক মাসুম হেলাল দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও বাংলাভিশনের সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি। তিনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি উকিল না, রাজনৈতিক কর্মীও না। আমার কথা বললে, তারা কারও প্ররোচনায় বলতে পারে।’
জহুর আহমদের (৩০) বাড়ি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বাধনপাড়া এলাকায়। তিনি শহরের একটি সার-বীজের দোকানে চাকরি করতেন। তাঁদের গ্রামের বাড়ি জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার এরোয়াখাই গ্রামে। মামলা দায়েরের পর বাদী হাফিজ আহমদও একপর্যায়ে স্বীকার করেন তিনি এত এত লোককে আসামি দিতে চাননি। ওই সাংবাদিকই সব করেছেন। আদালতে দেওয়া হলফনামায় তিনি লিখেছেন, ঘটনার দিন তিনি বাড়িতে ছিলেন। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জ থেকে অনেক দূরে। তাই তিনি ঘটনার বিষয়ে কোনো কিছু জানেন না। আসামিদেরও চেনেন না।
এই মামলায় নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না বলে দাবি করেন সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক। তিনি বলেন, যাদের নাম আসামির তালিকায় আছে, তারা পালিয়েছে। এটা ঠিক অজ্ঞাতনামা আসামি বেশি ধরা হচ্ছে। পুলিশ খোঁজ নিয়ে, ভিডিও ফুটেজ দেখে যারা ঘটনায় যুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করছে। নিরপরাধ কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন