নাজিম উদ্দিনের ইচ্ছা ছিল উচ্চশিক্ষিত হয়ে চাকরি করে সংসারের হাল ধরবে। একটি বুলেটে অকালে প্রাণ হারায় কলেজ শিক্ষার্থী নাজিম। ৫ আগস্ট দুপুরে রাজধানীর উত্তরার পূর্ব থানা এলাকায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে সে মারা যায়। পরদিন সকালে লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। ছেলের মৃত্যুর পর বদলে গেছে মা শিমুলা আক্তারের জীবন।
নাজিম নেত্রকোনার বারহাট্টার চিরাম ইউনিয়নের ভাটগাঁও গ্রামের রুস্তম আলীর ছেলে। বারহাট্টা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল ছোট।
এলাকাবাসী ও নাজিমের স্বজনেরা জানান, রুস্তম আলীর ভিটেমাটি ছাড়া কিছুই নেই। এক যুগ ধরে পরিবার নিয়ে তিনি রাজধানীর উত্তরা আজিমপুর এলাকায় থাকতেন। সেখানে রুস্তম ও তার স্ত্রী একটি সাবান কারখানায় চাকরি করেন। নাজিম গ্রামে নানার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। গত ১৬ জুলাই সে বারহাট্টা সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। দুই দিন পরে উত্তরায় মা-বাবার কাছে চলে যায়। সেখান থেকে আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যায়।
এখনো ছেলের কবরের পাশে বসে থাকেন বাবা রুস্তম আলী। দাঁড়িয়ে কাঁদেন মা শিমুলা আক্তার ও বোন নাজমা আক্তার। প্রতিবেশীরা তাদের সান্ত্বনা দেন।
রুস্তম আলী বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে আছিল। এইডাই আমার জীবনের একমাত্র সম্বল ছিল। তারে গুলি কইরা মাইরা ফালাইছে। আমার আর কিছু বাকি রইল না। যারা আমার নিষ্পাপ ছেরাডারে মারছে, আমি তাদের বিচার চাই।’
নাজিমের মা শিমুলা আক্তার বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। থাহনের জায়গাটা ছাড়া কোনো জমিজমা নাই। ঢাহায় ফ্যাক্টরিতে কাম করি। যা পাই তা দিয়া নিজেরা চলি, আর ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাই। ছেলেডার স্বপ্ন আছিল পড়াশোনা কইরা শিক্ষিত হইয়া বড় একটা চাকরি করব। সংসারের অভাব দূর হইব। মুহূর্তে আমার সবকিছু শেষ হইয়া গেছে।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মা শিমুলা আক্তার বলেন, ‘আন্দোলন চলার সময় ফ্যাক্টরি বন্ধ আছিল। আমরা সবাই বাসায় ছিলাম। ছেলে প্রতিদিনই আন্দোলনে যাইত। ৫ আগস্ট দুপুরে বাইর হইলে কিছুক্ষণ পর আমি মোবাইলে কল দিলে রিসিভ কইরা কইছিল, আম্মা, আমি একটু পরে আইতাছি। চিন্তা কইরো না। এটাই শেষ কথা আছিল। পরে বিকালে কল দিলে একজন ফোন ধইরা কয়, আপনার ছেলের মাথায় গুলি লাগছে। আমরা দৌড়ে যাইয়া উত্তরা পূর্ব থানার সামনে গিয়া দেহি নাজিমরে ঘটনাস্থল থাইক্কা আন্দোলনকারীরা হাসপাতালে লইয়া যাইতাছে। কিন্তু হাসপাতালে গেলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে।’
নাজিমের চাচা আরব আলী বলেন, ‘খুবই শান্ত ছেলে ছিল নাজিম। যে ক্ষতি হয়েছে, তা কোনো কিছুতেই পূরণ করা যাবে না। আল্লাহ তার জান্নাত নসিব করুক।’
এ বিষয়ে নেত্রকোনার শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা মো. রিফাত রেজুয়ান জয় বলেন, ‘আন্দোলনে জেলার যারা আহত বা নিহত হয়েছেন, তাদের তালিকা করছি আমরা। কেন্দ্র থেকে নেতারা আসবেন, তাদের সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’
বারহাট্টা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা আক্তার বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে উপজেলার নাজিম উদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে গত রোববার ২৫ হাজার টাকা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পরিবারটিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন