রায়ের অনুলিপি ১২ বছরেও কারাগারে না পৌঁছানোয় হাই কোর্টের রায়ে খালাসের পরও ১২ বছর কারাভোগ করেছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব শুকুর আলী। প্রধান বিচারপতির বিশেষ উদ্যোগে অবশেষে গত রবিবার কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি। জানা যায়, একটি হত্যা মামলায় ২০০৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শুকুর আলীকে মৃত্যুদ দেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত। ওই বছরই শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ডের রায় হাই কোর্টে আসে ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হিসেবে। এরপর জেল আপিল করেন শুকুর আলী।
২০১২ সালের ২৭ মে দেওয়া রায়ে শুকুর আলীর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বাতিল করে তাকে খালাস দেন হাই কোর্ট। একই সঙ্গে অন্য কোনো মামলায় জড়িত না থাকলে মুক্তির নির্দেশ দেন। তবে এ রায়ের অনুলিপি ১২ বছরেও পৌঁছায়নি কারাগারে। শুকুর আলী মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার সিপাহীপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল জলিল বেপারির ছেলে।
শুকুর আলীর আইনজীবী হাসান মোহাম্মদ আবদুল ফাত্তাহ সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। তারা নোটিস পেয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে জানান, শুকুর আলীর সাজা মওকুফের ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে একজন খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিনা অপরাধে এক যুগের বেশি কারাগারের অভ্যন্তরে আটক থাকাটা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি এবং আইনের চোখে তিনি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার হকদার। তার জীবন থেকে এক যুগের বেশি সময় কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। যাদের অবহেলায় বেকসুর খালাস হওয়ার পরও শুকুর আলী দীর্ঘদিন কারাগারে আটক ছিলেন, সেই অবহেলাকারীরা আইনগতভাবে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরসূত্রে জানা গেছে, শুকুর আলীর জেল আপিলের বিষয়ে জানতে ২০২০ ও ২০২১ সালে তাকে দ প্রদানকারী আদালতে চিঠি পাঠানো হলেও ফলাফলসংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ গত বছর আবারও চিঠি দিলে দণ্ড প্রদানকারী আদালত থেকে জানানো হয়, এ বিষয়ে হাই কোর্ট থেকে নথি ফেরত আসেনি। সর্বশেষ আইনজীবী হাসান মোহাম্মদ আবদুল ফাত্তাহর নোটিসের মাধ্যমে জানা যায়, শুকুর আলীকে হাই কোর্টের রায়ে ২০১২ সালে খালাস দেওয়া হয়েছে। এরপর এ বিষয়ে আপিল বিভাগেও কোনো আবেদন করা হয়নি। বিষয়টি আমলে নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বিচারিক আদালতে প্রতিনিধি পাঠিয়ে এবং চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করলে আদালত পরিবর্তিত আদেশ প্রেরণ করেন। এরপর গত ১০ নভেম্বর রবিবার দুপুরে শুকুর আলীকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন