সাভারের উদ্ধার হওয়া নারীর মরদেহের মৃত্যু রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। নিহত শান্তনার স্বামী নয়ন সবসময় সন্দেহ করতো যে তার স্ত্রী অন্য কোনো ছেলের সাথে মেলামেশা করে। হত্যার দিন শান্তনা তার মায়ের সাথে কথা বলছিলেন। কিন্তু স্বামী নয়ন সন্দেহ করেন যে শান্তনা অন্য কোনো ছেলের সাথে কথা বলছে। আর সেই সন্দেহ থেকেই এই হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিনুর কবির।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, পরকীয়া সন্দেহে গৃহবধু শান্তনাকে হত্যার পর মরদেহকে চার খণ্ড করে লাশ গুমের চেষ্টা করে ঘাতক স্বামী নয়ন। শান্তনার দ্বিতীয় স্বামী হচ্ছেন নয়ন। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জহুরুলের সঙ্গে বিয়ে হয় শান্তনার। পরে তাদের প্রতিবেশী নয়নের সাথে পরকিয়া জড়িয়ে যান শান্তনা। ৭ মাস আগে শান্তনাকে ফুসলিয়ে সাভারে নিয়ে আসেন নয়ন। জহুরুলের ঘরে শান্তনার ১৫ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। এছাড়া ঘাতক নয়নেরও আগের স্ত্রী এবং তিন সন্তান রয়েছে।
শাহিনুর কবির বলেন, সাভারে বিরুলিয়ার বসবাসের শুরু থেকেই শান্তনা এবং নয়নের মধ্যে পারিবারিক কলহ লেগে থাকতো। নয়ন সবসময় শান্তনাকে সন্দেহ করতো যে তার স্ত্রী বিভিন্ন ছেলেদের সাথে পরকিয়ায় লিপ্ত হচ্ছে, বিভিন্ন রকম অনৈতিক কর্মকাণ্ডে সন্দেহ করতো এবং এ নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকতো। নিহত শান্তনা গত তিন আগে তার মাকে কল করে জানায়, নয়ন সবসময় আমাকে সন্দেহ করে মারধর করে। তোমরা এ বিষয়ে কাউকে কিছু বলো না তাহলে সে আমাকে মেরে ফেলতে পারে। মাকে ফোন করার বিষয়টি নয়ন জানতে পেরে শান্তনাকে মারধর করে। এ সময় শান্তনা রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেলে নয়নও তার পিছনে পিছনে বের হয়ে যায় এবং দত্তপাড়া এলাকার সেতু নার্সারীর পাশ দিয়ে ঘুরাফেরা করে। আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়েছি যে, নয়নই শান্তনাকে হত্যা করেছে।
তিনি আরও বলেন, হত্যার আলামত হিসেবে আমরা একটি দা উদ্ধার করেছি। ভিকটিমের মাথাটি দ্বিখণ্ডিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিকে কেউ যাতে না চিনতে পারে এ জন্য তার জামা কাপড় সব খুলে ফেলা হয়েছে। মাথা এবং দুই কনুই কেটে আলাদা করা হয়েছে যাতে লাশ শনাক্ত করা না যায়। আমরা ঘটনাস্থলের আশপাশে তল্লাশি চালিয়ে রক্তমাখা জামাকাপড় এবং খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছি। সেখানে ঘাতকের এক জোড়া স্যান্ডেলও পড়ে ছিল। এ ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। হত্যাকাণ্ডের সাথে আরও কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এর আগে সোমবার দিবাগত রাতে সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া মহল্লার সেতু নার্সারি থেকে গৃহবধুর শান্তনার বিবস্ত্র ও খণ্ডিত মরদেহ উদ্ধার করে সাভার মডেল থানা পুলিশ। প্রথমে মাথাহীন ও দুই হাতের কবজি কাটা অবস্থায় গৃহবধুর উলঙ্গ দেহ পাওয়া যায়। পরে মরদেহের প্রায় ১৫০ গজ দূরে পলিথিনে মোড়ানো দুই হাত ও মাথা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সকালে মোবাইল ট্রাকিং করে নিহতের স্বামী নয়নকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমামেরড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যান্ড ইমামের
নিহত শান্তনা ধামরাই উপজেলা বালিয়া এলাকার মৃত সাবন আলীর মেয়ে। অপর দিকে ঘাতক স্বামী নয়ন মিয়া টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার মইশাগড়া গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। শান্তনা-নয়ন দম্পতি সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের দত্তপাড়া মহল্লায় সোহেলের ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। নয়ন রাজমিস্ত্রীর কাজ করতো এবং শান্তনা বাড়িতেই থাকতো।
নিহতের বোন পারুল বলেন, আমার বোনের একটি মেয়ে আছে নবম শ্রেণিতে পড়ে। নয়ন যাদু করে আমার বোনকে পাগল বানাইছে। এ জন্য নয়নকে ছাড়া সে কিছুই বুঝতো না। সোনার সংসার ছেড়ে নয়নের সাথে পালিয়ে গেছে। আমরা কবিরাজের কাছে গেছিলাম, কবিরাজ বলছিল নয়ন আমার বোনকে বাঁচতে দিবে না। আজকে সেই কথাই সত্যি হলো। আমার বোনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এর বিচার চাই।
সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিঞা বলেন, নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার বোন পারুল বেগম বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বুধবার ঘাতক নয়নকে আদালতে পাঠানো হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন