ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ র্যাবের সাবেক ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক যুগেরও বেশি সময় আগে র্যাবের গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির লিমন হোসেন।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এই অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। তারিক আহমেদ সিদ্দিক ছাড়াও এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক (র্যাবের গোয়েন্দা শাখার তৎকালীন পরিচালক) জিয়াউল আহসান ও র্যাব-৮-এর তৎকালীন ক্যাম্প কমান্ডার মেজর রাশেদের নামও রয়েছে লিমনের এই অভিযোগে।
অভিযোগ দায়েরের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘২০১১ সালে এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারী সরকারের সন্ত্রাসী র্যাব বাহিনী দ্বারা আমি নির্যাতিত হয়েছিলাম।
নির্যাতনের এক পর্যায়ে আমার শার্টের কলারে ধরে পায়ে গুলি করে। এর ফলে আমার একটি পা কেটে ফেলতে হয়েছে। সারাজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করি আমি।’
পা হারানোর পর হয়রানি-দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে লিমন বলেন, ‘আমার নামে মামলা করা হয়েছিল।
এক পা নিয়ে কোর্টে হাজিরা দিতে হয়েছে। আমার পরিবার, আত্মীয়স্বজনদের হয়রানি করেছে র্যাব। র্যাবের বিরুদ্ধে আমার মা বাদী হয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেছিলেন। র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা করায় আমি ও আমার পরিবার ৮-১০ বছর গ্রামের বাড়ি থাকতে পারিনি।
পার্শ্ববর্তী জেলা পিরোজপুরে ভাড়া থাকতে হয়েছে।’
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘২০১১ সাল থেকে ১৩ বছর বহু চেষ্টা করেছি, অনেক আকুতি-মিনতি করেছি ন্যায় বিচারের জন্য। ন্যায় বিচার তো পাইইনি, উল্টো হয়রানির শিকার হয়েছি। এখন মানুষের একটা আস্থা ও ভালোবাসার জায়গা হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আমি এই ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হয়েছি ন্যায় বিচারের জন্য।
’
সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করে লিমন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী হাসিনার শাসনামলে আমরা চাইলেও অপরাধী সবাইকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। নানা বাধাবিপত্তি আর অনেক রকমের হুমকি ধামকি ছিল। তাই কয়েকজনকে আসামি করতে পারিনি। তাদের মধ্যে অন্যতম হল- তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, জিয়াউল আহসান ও বরিশাল র্যাব-৮ এর তৎকালীন প্রধান মেজর রাশেদ। এই তিনজনকে কোনো ভাবেই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। আজকে ট্রাইব্যুনালে এই তিনজনের নামও অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছি। মোট আসামি ৯ জন। সবাই র্যাবের সদস্য।’
র্যাব সন্ত্রাসী সংগঠন মন্তব্য করে লিমন হোসেন বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে সাত খুন থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের মাজার ডাকাতি, এ রকম অজস্র অভিযোগ র্যাবের বিরুদ্ধে। চাঁদাবাজি, গুম, খুনের অভিযোগ রয়েছে। র্যাবকে আমার কাছে সন্ত্রাসী সংস্থা মনে হচ্ছে। এ জন্য র্যাব বিলুপ্তির দাবি জানাচ্ছি।’
ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যে সময়টা আমার আনন্দ করার কথা, খেলাধুলা করার কথা, সে সময় আমার পা হারাতে হয়েছে। আমি ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছি। গুলি করার সময় আমার বয়স ছিল ১৬ বছর। কিন্তু র্যাব আমাকে ২৬ বছর দেখিয়ে মামলা করেছিল।’
উল্লেখ্য, ঝালকাঠির রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের লিমন হোসেন ২০১১ সালে ২৩ মার্চ মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে পা হারান। ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে আটক করার পর তার পায়ে গুলি করা হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র্যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৩ সালে তাকে দুটি মামলা থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। ওই ঘটনার সময় লিমনের বয়স ছিল ১৬ বছর। তাকে পঙ্গু হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করে বাম পা হাঁটুর নিচ পর্যন্ত থেকে কেটে ফেলেন। শারীরিক এই অবস্থার মধ্যেও আইন বিষয়ে পড়াশোনা শেষে এখন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন লিমন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন