পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত ঐতিহ্যে ভরা জেলা চাঁদপুর। ইলিশবাড়ি নামে পরিচিত বিখ্যাত এই জেলায় রয়েছে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় ফরাজীকান্দি ইউনিয়নে রয়েছে মুঘল আমলের ইসলামি স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন এক গম্বুজ মসজিদ।
জানা গেছে, এটিই বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট মসজিদ। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটিতে রয়েছে একটিমাত্র জানালা ও একটি দরজা। একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৬ জন ব্যক্তি নামাজ পড়তে পারেন এই মসজিদটিতে। আর সে কারণে মসজিদটিকে ৬ ঘইরা মসজিদও বলে থাকেন অনেকে।
এই মসজিদ নিয়ে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক ভ্রমণ টিংকু চৌধুরী বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ৫৯টি জেলায় ঘুরে সেখানকার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করেছি। মতলবের ছোট হলদিয়ার এক গম্বুজ মসজিদটি আমার দেখা দেশর সবচাইতে ছোট এক গম্বুজ মসজিদ।’
তবে দুঃখজনক বিষয় হলো সংস্কারের অভাবে বাংলাদেশের অন্যতম নিদারুণ নির্দশন এক গম্বুজ মসজিদটি আজ হুমকির মুখে। দেয়ালে ধরেছে ফাটল, নষ্ট হয়ে গেছে দরজা ও জানালা। মসজিদের পূর্ব পাশে রয়েছে বড় একটি পুকুর। ভাঙনের মুখে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে এই নিদর্শনটি। যেকোনো সময় ঘটতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা। দেশের এই ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার জোড় দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
৪শ বছর আগের মুসলিম স্থাপত্যের এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মতলব উত্তর উপজেলার এই সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আশ্রয়স্থলটি প্রাচীন বিস্ময়ে পরিপূর্ণ । এই স্থানের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাংস্কৃতিক প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধ সবাইকে আকর্ষিত করে থাকে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসেন এই মসজিদটি দেখতে ।
মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ছোট হলদিয়া গ্রামে অবস্থিত এই এক গম্বুজ মসজিদটি। এই মসজিদটি রূপ সরকার প্রায় ৪শ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করেন বলে জানা যায়।
ইতিহাসবিদ, এশিয়াটিক সোসাইটি ও জাতীয় আর্কাইভসের তালিকাভুক্ত গবেষক অধ্যাপক কামরুজ্জামান শিকদার জানান, যখন মসজিদটি রূপ সরকার প্রতিষ্ঠা করেন তখন মতলব উত্তর ছিল চরাঞ্চল। ছিল না তেমন কোনো বসতি। পুরো ছোট হলদিয়া এলাকায় নেতৃত্ব দেয়ার মতো ৬টি পরিবার এখানে বসবাস করতো। রূপ সরকার এই অঞ্চলের ৬টি বংশের ৬ প্রধানের নামাজ আদায়ের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন এই ছোট পরিসরের একগম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি।
মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহাসিক এই নিদর্শন সংরক্ষণ ও আশেপাশে কয়েকটি মসজিদ থাকায় এখন আর কেউ এখানে নামাজ আদায় করেন না। মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনোপ্রকার সরকারি অনুদানও আসে না।
কালের সাক্ষী ৪শ বছরের পুরোনো এই এক গম্বুজ মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য সরকার ও বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল হালিম সরকার জানান, বংশ পরম্পরায় এই মসজিদের দেখাশোনা করেন নবাব আলী সরকার, আহমদ উল্লাহ সরকার ও সানাউল্লাহ সরকার। মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মো. সানাউল্লাহ সরকার বলেন, আমার দাদা, বাবা এবং পূর্বপুরুষরা এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণ করেছেন। আমরাও করছি। তবে সাধ্য কম থাকায় ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছি না। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি সহায়তা পাই তাহলে এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণে সুবিধা হতো।
ইউপি সদস্য মো. আব্দুল হালিম সরকার আরও বলেন, এই মসজিদটি আমাদের পূর্ব পুরুষদের দেওয়া। এক৭ শতাংশ জায়গা আছে মসজিদের নামে। এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রশাসনের সহায়তা চাই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার একি মিত্র চাকমা বলেন, আমি নিজে গিয়ে এই মসজিদটির খোঁজখবর নেব। যদি ঐতিহাসিক কোনো নিদর্শন হয় তাহলে আমরা সাধ্যমতো দেখব এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে অবহিত করার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব।
ইত্তেফাক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন