আগে সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম খেতেন। অথচ কয়েক বছর গাড়ি চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বান্দরবানের লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামালের গাড়িচালক জিয়াউর রহমান। তবে দুই বছর ধরে নানা অজুহাতে গাড়ি না চালিয়েও সরকারি বেতন নিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামালের গাড়িচালক হওয়ার সুবাদে ভাগ্য বদলে গেছে জিয়াউর রহমানের। নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। লামায় গড়েছেন কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। গড়ে তুলেছেন মিরিঞ্জা ভ্যালি রিসোর্ট অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট নামে রিসোর্ট। গত দুই বছর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে উপজেলা পরিষদের গাড়ি না চালিয়েও বেতন নিচ্ছেন প্রতি মাসে। নিজেই পাজেরো জিপ গাড়ি কিনে জেলাজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর রিসোর্ট ব্যবসা দেখাশোনা করছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা পরিষদের দুজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আওয়ামী সরকারের সময়ে প্রভাবশালী উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন মো. মোস্তফা জামাল। তার মাধ্যমে নানা প্রকল্পের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন জিয়াউর রহমান। টেন্ডার বাণিজ্য, প্রকল্প পাইয়ে দেওয়ার নামে নিয়েছেন কোটি টাকা। লামা শহরের অদূরে পাহাড়ের ওপর গড়েছেন রিসোর্ট। রিসোর্টে যাওয়ার জন্য কিনেছেন পাজেরো জিপ গাড়ি।
রিসোর্টের দুজন কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে রিসোর্টে বেশিরভাগ সময় দিচ্ছেন জিয়াউর রহমান। প্রতিদিন হাজারো পর্যটককে সামাল দিতে হয়। রাতে সেখানে জমে আড্ডা। এসব কারণে গত দুই বছর ধরে সরকারি গাড়ি চালান না। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সবাই জানলেও নিচ্ছেন না ব্যবস্থা।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত দুই বছর ধরে সরকারি গাড়ি চালান না জিয়াউর রহমান। তবে প্রতি মাসে তাকে বেতন দেওয়া হয়।
লামার বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একজন গাড়িচালক কীভাবে এত টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন, তা তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। দুর্নীতি করা ছাড়া এত টাকার মালিক হওয়া সম্ভব নয়।’
লামার আরেক বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘আওয়ামী সরকার পতনের পর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পালিয়ে গেছেন। তবে গাড়িচালক জিয়াউর রহমানের প্রভাব আগের মতোই আছে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে লামা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তফা জামালের মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি পলাতক আছেন। তবে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে জানাতে পারেননি দলের নেতাকর্মীরা।
লামা পৌরসভার সাবেক মেয়র জহির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান সরকারি গাড়ি না চালালেও বেতন নিচ্ছেন নিয়মিত। কীভাবে বেতন নিচ্ছেন, তা আমি জানি না। তবে তাকে শহরে ব্যক্তিগত গাড়ি চালাতে দেখি প্রায় সময়। গাড়ি নিয়ে তার গড়ে তোলা কোটি টাকার রিসোর্টে আসা-যাওয়া করেন। একজন গাড়িচালক কীভাবে এত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তা আসলেই রহস্যজনক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়িচালক জিয়াউর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি সড়ক দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পাওয়ায় গাড়ি চালাতে পারছি না। তবে সরকারি বেতন পাচ্ছি এটি সত্য। গাড়ি চালিয়ে সরকারি বেতন নেওয়ার ইচ্ছে নেই আর। তাই চাকরি ছেড়ে রিসোর্টে সময় দিচ্ছি।’
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিয়াউর রহমান মূলত উপজেলা প্রশাসনের গাড়িচালক। এজন্য তাকে সরকারি বেতন দেওয়া হয়। তিনি বিগত কয়েক বছর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি চালাতেন। তবে গত দুই বছর ধরে গাড়ি না চালিয়েও বেতন নিচ্ছেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে কীভাবে বেতন নিতেন, তা আমার জানা নেই। সরকার পতনের পর থেকে সাবেক চেয়ারম্যান পলাতক থাকায় তার গাড়িচালককে আমাদের প্রয়োজন পড়েনি। এজন্য ডাকা হয়নি। যদি আমাদের গাড়ি চালানোর প্রয়োজন হয়, তখন তাকে ডাকা হবে।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন