দুই ছেলের পর বিবি মরিয়মের জন্ম। তাই পরিবারের সবার আদরের ছিল মেয়েটি। সাড়ে চার বছরের মরিয়মকে সামনের বছর স্কুলে দেওয়ার কথা ছিল। পড়ালেখা শিখিয়ে বড় করবে, এমন স্বপ্ন ছিল মরিয়মের মা–বাবার। ডেঙ্গুতে সেই স্বপ্ন ধূসর হয়ে গেল। ডেঙ্গু আক্রান্ত বিবি মরিয়ম গত বৃহস্পতিবার রাতে পাড়ি দিয়েছে না ফেরার দেশে।
মৃত্যুশয্যায় শুয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মা ইয়াসমিন বেগমকে সান্ত্বনা দিয়ে গেছে ছোট্ট মরিয়ম। মায়ের চোখের জল মুছে দিয়ে মরিয়ম বলেছে—‘কেঁদো না আম্মু।’ ইয়াসমিনের কাছে আদরের মেয়ের শেষ কথাটুকুই এখন সবচেয়ে বড় স্মৃতি। নগরের চৈতন্যগলি কবরস্থানে চিরনিদ্রায় মরিয়ম। চলে যাওয়ার দুই দিন পরও একমুহূর্তের জন্য মেয়েকে ভুলতে পারছেন না মা ইয়াসমিন ও বাবা মো. ইব্রাহিম।
নগরের পূর্ব মাদারবাড়ির কামাল গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন মো. ইব্রাহিম। বাড়ি ভোলা জেলায়। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। ছোট্ট একটি দোকানের আয়ে চলছিল জীবন। বড় ছেলে জাহিদুল ও মেজ ছেলে ইসমাইল মাদ্রাসায় পড়ে। ইব্রাহিম-ইয়াসমিন দম্পতির সুখের দিনে কাল হয়ে এল ডেঙ্গু।
আজ শনিবার দুপুরে ইয়াসমিন মুঠোফোনে মেয়ের জ্বরের আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন। ২ নভেম্বর মেয়ের জ্বর আসে। গত রোববার মেয়েকে স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এরপর মরিয়মের পাতলা পায়খানা শুরু হয়। ওষুধেও কাজ হচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে পড়েন মা–বাবা। ইয়াসমিন বলেন, ‘গত বুধবার মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। সেখানে ভর্তি করে চিকিৎসা চলছিল। মেয়ে সারাক্ষণ বলত, ব্যথা করছে তার। খুব কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা। অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারলাম না।’
হাসপাতালটিতে মরিয়মের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার পর মরিয়মের মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার দুই ঘণ্টা আগে মেয়ের সঙ্গে ইয়াসমিনের শেষ কথা হয়। ‘আমার মেয়েটা যন্ত্রণায় ছটফট করছিল কেবল। মেয়ের কষ্ট দেখে আমিও সহ্য করতে পারছিলাম না। সে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে কাঁদতে বারণ করল। তার আব্বুকে ডাকল, চাচাকেও ডাকল। এরপর আর কোনো কথা বলেনি।’ ফোনের ওপারে গলা ধরে আসে ইয়াসমিনের।
মরিয়মের মামা জানে আলম বলেন, মেয়েটিকে সবাই খুব আদর করত। কাছাকাছি বাসা হওয়ায় প্রায়ই নানার বাসায় আসত। সামনের বছর স্কুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন সব শেষ হয়ে গেল।
চট্টগ্রামে এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩২ জন। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা থেকে আজ সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৩৯ জন। একই সময়ে মারা গেছেন বাসবি আচার্য (৪৫) নামের এক নারী। নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন মোট ৩ হাজার ৩০৪ জন। গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১৪ হাজারের বেশি। মারা গিয়েছিলেন ১০৭ জন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন