ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে হযবরল অবস্থা দেখা দিয়েছে। দফায় দফায় দাম কমানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। আবার মার্কেটে ইন্টারনেটের দাম কমেছে। কিন্তু সরকারি খাতায় দাম কমেনি। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যে। তাঁরা জানান, ‘আমাদের জন্য ব্যান্ডউইথের উচ্চ দাম নির্ধারণ করা থাকলেও মোবাইল অপারেটরদের জন্য নিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তো ২০০ টাকায় ব্যান্ডউইথ কেনে!’ ইন্টারনেটের দাম কমানো নিয়ে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনকে (বিটিআরসি) চিঠি পর্যন্ত দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উল্টো ইন্টারনেট বাজারে বৈষম্য চলছে বলে দাবি করছেন তাঁরা। ব্যবসায়ীরা জানান, মোবাইল অপারেটররা ২০০ টাকায় ব্যান্ডউইথ কিনে যে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছেন, আইআইজি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৩৬৫ টাকায় ব্যান্ডউইথ কিনে সে একই সেবা দিতে হচ্ছে। আইআইজি থেকে ব্যান্ডউইথ নিয়ে আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো তৃণমূল পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত তাদের মোট গ্রাহক প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ। জানা যায়, ৩ হাজার প্রতিষ্ঠানের আইএসপি লাইসেন্স থাকলেও ২ হাজার ৩০০ প্রতিষ্ঠান আইএসপিএবির সদস্য।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, আইআইজি খাতে ব্যান্ডউইথ (বিভিন্ন স্ল্যাবে) যে মূল্যে বিক্রি হচ্ছে, সে দর নির্ধারণ হয়েছে ২০২১ সালে। এর মধ্যে তিন বছরের বেশি পার হয়েছে। কিন্তু সে দামেই ব্যান্ডউইথ বিক্রি করতে হচ্ছে। সে দর রিভিউর সময় হয়েছে। দর রিভিউ হলে ইন্টারনেটের দাম কমবে বলেও দাবি করেন তাঁরা। এদিকে বিটিআরসিসূত্র জানিয়েছেন, আগামীকাল রবিবার বিটিআরসি চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছেন। বৈঠকে কীভাবে, কত দিনের মধ্যে ইন্টারনেটের দাম কমানো যায় তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। পরে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে। এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ-উল বারী জানান, ইন্টারনেটের দাম কমাতে সরকার কাজ করছে। ইন্টারনেটের দাম পানির দরে হওয়া উচিত। ডিজিটাল সেবা সম্প্রসারণ করতে ইন্টারনেটের দাম কমাতেই হবে, যা নিয়ে কাজ করছে বিটিআরসি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্যোগ নিলে ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর বিষয়টি সহজ হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে ইন্টারনেটের দাম কমাতে বিটিআরসিকে চিঠি দেয় ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইআইজিএবি)। সংগঠনের পক্ষ থেকে ২৯ অক্টোবর পাঠানো চিঠিতে বিদ্যমান বাজারমূল্যের চেয়েও বিভিন্ন স্ল্যাবে দাম কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইআইজিএবির প্রস্তাবিত ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হলে আইএসপিগুলো প্রতি মেগা ব্যান্ডউইথে ৫০-৭৫ টাকা (বিভিন্ন স্ল্যাবে) কমাতে পারবে বা গ্রাহকের কাছ থেকে কম রাখতে পারবে। এতে গ্রাহকের ইন্টারনেট খরচ কমবে, কিন্তু ব্যবহার বাড়বে। তবে এ নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেছে আইএসপিএবি। তারা বলছেন, বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম কমালেও তারা কমাতে পারবেন না। বরং তারা একই দামে আগের তুলনায় গ্রাহকের সেবার মান আরও ভালো দিতে পারবেন। ব্যান্ডউইথ বেশি দিতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইজিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বৃদ্ধি এবং প্রান্তিক পর্যায়ে ইন্টারনেট পৌঁছানো ও ব্যবহারকারী বাড়াতে আমাদের এ উদ্যোগ। বর্তমান সরকারও চাইছে ইন্টারনেটের দাম কমাতে। ফলে সরকারের সঙ্গে আমরাও উদ্যোগী হয়েছি। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে ইন্টারনেটের দাম কমবে। ব্যবহারকারীরা সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘যতদূর জানি বিটিআরসি বিষয়টিতে ইতিবাচক ভূমিকা নিচ্ছে। শিগগিরই তারা ইন্টারনেটের দাম কমানোর ঘোষণা দিতে পারে বলে জেনেছি।’ এদিকে ইন্টারনেটের ব্যবসায় বৈষম্য তুলে ধরে আইএসপিএবির সভাপতি এমদাদুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘তিন বছর ধরে ইন্টারনেটের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে হযবরল অবস্থা দেখতে পাচ্ছি। মার্কেটে ইন্টারনেটের দাম কমেছে। কিন্তু সরকারি খাতায় দাম কমেনি। বিটিআরসি বলছে, আইআইজিরা ব্যান্ডউইথ বিক্রি করবে ৩৬৫ টাকায়। বিটিআরসি এ দামের ওপর রাজস্ব আদায় করে। বিক্রির ওপর তারা ১০ ভাগ রাজস্ব পায়। কিন্তু বাজারে এখন ব্যান্ডউইথের দাম ২০০ থেকে ২২০ টাকায় চলছে। এতে দামে পার্থক্য প্রায় ১৪০ টাকা।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের জন্য ব্যান্ডউইথের উচ্চ দাম নির্ধারণ করা থাকলেও মোবাইল অপারেটরদের জন্য নিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা তো ২০০ টাকায় ব্যান্ডউইথ কেনে। এ টাকার ওপর বিটিআরসি অপারেটরদের কাছ থেকে রাজস্ব নেয়। এখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করার দাবি জানিয়েছি বিটিআরসির কাছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিটিআরসি ইন্টারনেটের দাম কমালেও আমরা গ্রাহক পর্যায়ে কমাতে পারব না। তবে গ্রাহককে আগের তুলনায় ভালো মানের সেবা দিতে পারব। একই দামে বেশি ব্যান্ডউইথ দেওয়া সম্ভব হবে।’ বিটিআরসি তাদের ওয়েবসাইটে সর্বশেষ সেপ্টেম্বরের ইন্টারনেট গ্রাহকের তথ্যচিত্র তুলে ধরে। সেখানে দেখা যায়, দেশে মোট ইন্টারনেট গ্রাহক ১৩৮ দশমিক ৬২ মিলিয়ন। এর মধ্যে মোবাইল অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক ১২৪ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন আর আইএসপি ও পাবলিক সুইচড্ টেলিফোন নেটওয়ার্কের (পিএসটিএন) গ্রাহক ১৩ দশমিক ৭৪ মিলিয়ন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন