দুই বাংলাদেশি নারীকে চীনে পাচারের চেষ্টাকালে চীনের দুই নাগরিককে হাতেনাতে ধরার পরও ছেড়ে দিয়েছে বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন নিয়ন্ত্রিত এভিয়েশন সিকিউরিটি (এভসেক)। গত ২৬ অক্টোবর এ ঘটনা ঘটলেও তারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে যায়।
চীনা দুই নাগরিককে ছেড়ে দেওয়ার তথ্য বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে। তবে এই ঘটনা জানেন না বলে জানিয়েছেন এভসেকের পরিচালক উইং কমান্ডার জাহাঙ্গীর হোসেন।
তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি এই ঘটনা জানি না। আমরা বিমানবন্দরে সঠিকভাবে কাজ করছি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে মামলাও হচ্ছে। কোনও ধরনের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পড়ছি না।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৬ অক্টোবর দুই চীনা নাগরিক মে পেনগাই (পাসপোর্ট নম্বর EM4483709) ও তিয়ান জেংওয়েন (পাসপোর্ট নম্বর EJ4374299) বাংলাদেশি দুই তরুণী মালিনা মারাক (১৯) (পাসপোর্ট নম্বর A14766889), রানী আক্তার (২৬) (পাসপোর্ট নম্বর A15271844) ডিপারচার এলাকায় চায়না ইস্টার্ন ফ্লাইটের চেক-ইন কাউন্টারের সামনে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এ সময় এভসেক সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে ঘটনা জেনে চার জনকেই তাদের হেফাজতে নেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই চার জন ছিল ২টা ৫৫ মিনিটে চায়না ইস্টার্ন ফ্লাইটের বহির্গমন যাত্রী। চীনের দুই নাগরিক রানী আক্তার ও মালিনা মারাককে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে বিয়ে করে চীনে নিয়ে যাচ্ছিল।
ওই দুই তরুণী বিমানবন্দরে এসে একে অপরের সঙ্গে দেখা ও কথাবার্তা হওয়ার পর বুঝতে পারেন তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে চীনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তারা বিষয়টি অনুধাবন করার পর চাইনিজ যাত্রীদের সঙ্গে যেতে অস্বীকৃতি জানান এবং বাগবিতণ্ডায় জড়ান।
এভসেকের সদস্য ও কর্মকর্তারা তাদের হেফাজতে নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে গেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশে দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরে তারা এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সহায়তা নিয়ে থানায় দেওয়ার সাহায্য চাইলে এপিবিএন বিষয়টি মানবপাচার অপরাধ সংক্রান্ত হওয়ায় এভসেকের সদস্যদের মানবপাচার সংশ্লিষ্ট শাখায় যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি এপিবিএন’র অধিক্ষেত্রের বাইরের এলাকা হওয়ায় এভসেককেই আইনানুগ ব্যবস্থার বিষয়ে তাদেরই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করা উচিত বলে জানানো হয়।
জানা যায়, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টও এপিবিএনের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, তাদের এখানে আইনগতভাবে কিছু করার নেই। এ সময় এভসেকের অফিসাররা কিছু সময় চান এবং সিআইডির মানবপাচার সেলের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। পরে এভসেক দুই চীনা নাগরিক ও বাংলাদেশি দুই তরুণীকে এপিবিএন অফিসে রাখার অনুরোধ করেন। সে অনুযায়ী এপিবিএন জিডিমূলে অফিসে রাখা হয় (জিডি নম্বর ৩৩৮, তারিখ ২৬/১০/২০২৪)। পরে রাত ১১টার দিকে যাত্রীদের এভসেকের ওয়ারেন্ট অফিসার আলমগীর হোসেনের (এভসেক-৫, শিফট-বি) কাছে হস্তান্তর করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাত আনুমানিক ১২টার দিকে এভসেক কোনও আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে বাংলাদেশি ও চীনা যাত্রীদের তাদের নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেয়। তারা সবাই আগমনী ক্যানোপি-২ দিয়ে টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের বাইরে চলে যান।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিভিল অ্যাভিয়েশন এপিবিএনের কর্মক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলার কারণে বিমানবন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিভিন্ন বাহিনী থাকা সত্ত্বেও এরকম একটা ঘটনায় কোনও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি। ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং উদ্বেগজনক।
তারা বলছেন, মাঝে মধ্যেই এভসেক সদস্যরা নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে পড়ছেন। অনেক সময় তা চেপে যাওয়ারও চেষ্টা করছেন। দুই নিরাপত্তা বিভাগের মধ্যে সমন্বয় থাকলে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা হতো না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন