সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা অঞ্জনা রহমান। যার ঝুলিতে আছে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং তিনটি বাচসাস পুরস্কার। এমন একজন খ্যাতিমান জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রীকে কিনা দেখামাত্র পুলিশে ধরিয়ে দিতে বললেন খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল!
হ্যা, অবাক হওয়ার মতো ঘটনা হলেও এটাই সত্যি। বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে অঞ্জনার ছবিসহ একটি পোস্ট দিয়ে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ভক্তদের কাছে আর্জি জানান ডিপজল। অভিনেতা লেখেন, ‘ওয়ারেন্টের আসামি অঞ্জনাকে ধরিয়ে দিন। দেখামাত্রই থানায় খবর দিন।’
কিন্তু ঘটনার নেপথ্যে কী? অঞ্জানার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টই বা কেন?
জানা যায়, গত বছর সহকর্মী ডিপজলের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার নেন অঞ্জনা। শর্ত ছিল, ছয় মাসের মধ্যে ধার পরিশোধ করতে হবে, অঞ্জনাও তাতে রাজি হন। কিন্তু ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও অঞ্জনা ডিপজলের পাওনা টাকা ফেরত দেননি বলে অভিযোগ।
একপর্যায়ে ডিপজল তার টাকা ফেরত চাইলে অঞ্জনা চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি তাকে ডাচবাংলা ব্যাংকের একটি চেক দেন। কিন্তু সেটি ডিসঅনার হয়। তাতে আরও ক্ষেপে যান ডিপজল। তিনি গত ২৩ মার্চ টাকা পরিশোধ করতে অঞ্জনাকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।
নোটিশে ডিপজল উল্লেখ করেন, এক মাসের মধ্যে তার পুরো অর্থ ফেরত দিতে হবে, অন্যথায় তিনি অঞ্জনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু এবারও ধার শোধ করতে ব্যর্থ অঞ্জনা। ফলে তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি জারি হয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা। এরপরই ডিপজলের ওই ফেসবুক পোস্ট।
কিন্তু শুধু কী ধার শোধ না করার ক্ষোভ?
কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে, শুধু পাওনা টাকার জন্য নয়, আরও একটি বিষয়ে অভিনেত্রী অঞ্জনার প্রতি ভিষণ ক্ষুব্ধ ডিপজল। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচনে মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে লড়েছিলেন ডিপজল-অঞ্জনা দুজনই। বিজয়ীও হয়েছিলেন। কিন্তু গোল বাঁধে অন্যখানে।
ওই নির্বাচনে সভাপতি পদে ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে হেরে যান ডিপজলের প্যানেলের মিশা সওদাগর। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান ভোটে জিতেও আইনি জটিলতায় চেয়ারে বসতে পারেননি। রাজনৈতিক ও আইনি প্রভাব খাটিয়ে সেই চেয়ার দখল করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ।
এ ঘটনায় মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে সহসভাপতি দুই পদে জয় পাওয়া ডিপজল ও রুবেলসহ নির্বাচিত কেউই কাঞ্চন-নিপুণ কমিটির সঙ্গে কাজ করেননি। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী হওয়া অঞ্জনা রহমান। বলতে গেলে তিনি পুরো মেয়াদ নিপুণের ছায়াসঙ্গী হয়ে ছিলেন। সব মিটিং এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতও থেকেছেন।
কাহিনি এখানেই শেষ নয়, চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত শিল্পী সমিতির ২০২৪-২৬ মেয়াদের নির্বাচনে মিশা-ডিপজলদের প্যানেল ছেড়ে নিপুণের প্যানেল থেকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে প্রার্থীও হন অঞ্জনা। যদিও হেরে যান। কিন্তু তাতে অঞ্জনার প্রতি ডিপজলদের ক্ষোভ একটুও কমেনি।
ফলে প্রশ্ন উঠছে, প্যানেল ছেড়ে বেরিয়ে বিপক্ষ প্যানেলের সঙ্গে কাজ করা এবং প্রার্থী হওয়াই কি কাল হলো সোনালি দিনের চিত্রনায়িকা অঞ্জনার জন্য?
তা না হলে মাত্র দেড় লাখ টাকার জন্য ধণাঢ্য ব্যবসায়ী-অভিনেতা ডিপজল জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত একজন জ্যেষ্ঠ অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবেন, আবার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে বলবেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না চলচ্চিত্রপাড়ার অনেকের কাছেই।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন