২০৯ কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্যরে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে ঢিমেতালে। ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই মহাসড়কের কাজ শেষ করার সময় বেঁধে দেয়া হয় ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সেই হিসেবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রকল্পের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি হয়েছে ১১.০৫%। ১৩টি নির্মাণ প্যাকেজের মাধ্যমে এই উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকা ও বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ অন্যান্য অঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত হলে ঢাকার সাথে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং বিভাগীয় শহর সিলেটসহ বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সরাসির সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে। একই সাথে এসব এলাকার আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি পাশের দেশগুলোর সাথে উপ-আঞ্চলিক বাণিজ্য সম্প্রসারণ সহজ বলেও প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। আর এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার (জিওবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর।
সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এবং খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। আর সম্ভাব্য কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয় ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। প্রকল্পের প্রধান প্রধান অঙ্গের মধ্যে সড়কের দৈর্ঘ্য রয়েছে ২০৯.৩২৮ কিলোমিটার, সেতু রয়েছে ৬৬টি (৬০২০.০০ মিটার) ফ্লাইওভার/ওভারপাস রেল ওভারব্রিজ ১৩টি (৭৭৮০.১৯), স্টিলের ফুট ওভারব্রিজ ২৬টি এবং বক্স কালভার্ট ৩০৫টি (১৪৮৯.০০ মিটার)। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৮ লাখ ৮১ হাজার টাকা। এরমধ্যে জিওবি তিন হাজার ৬৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা এবং ডিপিএ ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, ওভারপাস রেলওয়ে ওভারব্রিজ, স্টিল, বক্স কালভার্ট নির্মাণের অগ্রগতি হচ্ছে ১১.০৫%। অপর দিকে আর্থিক ব্যয় হওয়ার কথা বলা হয়েছে ১৩.৪৭%।
গতকাল সন্ধ্যার পর সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, এখন পর্যন্ত এই প্রকল্প কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ১২ শতাংশ। ১১.০৫ শতাংশ বলা হলে তিনি বলেন, এরপর বাকি কাজ হয়েছে। এত ধীরগতি? তাহলে ২০২৬ সালে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হবিগঞ্জ এবং সিলেট সড়কে ভূমি অধিগ্রহণে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। জমি না পাওয়ার কারণে মনে হচ্ছে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যাবে না। সেই হিসেবে আরো এক বছর কাজের সময় বাড়তে পারে। তবে প্রকল্পে ব্যয় মনে হয় আর বাড়বে না। এই মুহূর্তে প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা ও হালচাল সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্পের রাস্তা দুই লেনের আছে। এটি চার লেনের হবে। এর দু’দিক থেকে দু’টি সার্ভিস লেন হবে। সার্ভিস লেন দিয়ে ধীরগতির গাড়ি চলবে। আর মূল দু’টি লাইন দিয়ে বড় গাড়ি চলবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ ফজলুল করিম বলেন, প্রকল্পের মূল কাজ শুরু হয়ে গেছে। ব্রিজ, কালভার্ট, বক্স কালভার্ট ও ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলছে। মোট কত টাকার এই প্রকল্প এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা না দেখে বলতে পারছি না।
প্রকল্পের ১৩টি পৃথক প্যাকেজে শুরু হওয়া কাজের অগ্রগতিতে দেখা গেছে, কাঁচপুর ইন্টারসেকশন টু সনপাড়া বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত জায়গায় দু’টি সেতুর মধ্যে দু’টির কাজই চলমান রয়েছে। ২৮৬টি পাইল, দু’টি এবাটমেন্ট-এর কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ছয়টি কালভার্টের মধ্যে চারটির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ৫.০ কিলোমিটার অংশে মাটি ভরাটের কাজ চলমান রয়েছে। একইভাবে অন্যান্য প্যাকেজের কাজের বেশির ভাগ অংশে কাজ চলমান রয়েছে বলে প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন