সমঝোতা প্রচেষ্টার জন্য মনের পরিবর্তন এবং রক্তাক্ত ও প্রতিশোধপরায়ণ অতীতের স্মৃতি মুছে ফেলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত আচিম ট্রস্টার।তিনি বলেছেন, ‘সমঝোতার জন্য আমাদের দুঃখিত শব্দটি শুনতে হবে। যে অপরাধ ও ভুল করা হয়েছে তার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। আমারও ভুল হতে পারে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত আমি এটি এখানে শুনিনি।’
সম্প্রতি জার্মান ঐক্য দিবস উপলক্ষে দূতাবাসে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।
আচিম ট্রস্টার আরও বলেন, তদন্ত ও সত্য স্বীকার করা ছাড়া সমঝোতা সম্ভব নয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি জার্মানির সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
সংহতির গুরুত্ব প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত একজন বাংলাদেশি রাজনীতিকের মন্তব্য উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। একই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও রুয়ান্ডার মতো দেশের সফল অভিজ্ঞতা এবং ফ্রান্সের সঙ্গে জার্মানির সংহতির নজিরগুলো বাংলাদেশ বিবেচনা করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এটি এমন একটি ধারণা যা সাম্প্রতিক অতীতে দক্ষিণ আফ্রিকা বা রুয়ান্ডার মতো দেশগুলোতে ভালো কাজ করেছে, তবে ইউরোপেও সমানভাবে কাজ করেছে। বাংলাদেশে এমনটি না হওয়ার এবং উন্নত সাম্প্রদায়িকতায় অবদান রাখার কোনো কারণ আমি দেখি না।’
জার্মান রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশি জনসাধারণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয়ের প্রত্যাশা পূরণ করে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারেরর দপ্তরের সহায়তায় ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসের ঘটনাবলির তদন্তকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রশংসা করেন।
জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমি আস্থাবান যে চ্যালেঞ্জিং সময়েও বাংলাদেশ ও জার্মানির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুসম্পর্ক বিকশিত ও প্রস্ফুটিত হওয়ার ধারা অব্যাহত থাকবে। জার্মানি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ ও মিশনকে সমর্থন করে এবং অতীতের মতো এবারও সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জার্মানি গত ৫২ বছর ধরে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় উন্নয়নে একটি প্রমাণিত অংশীদার এবং এর সাফল্যে অবদান রাখতে পেরে আমরা গর্বিত।’
জার্মানি রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭ সাল থেকে শরণার্থী শিবিরের আশেপাশে মানবিক কার্যক্রমে ৩০৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে দেশটি।’
রাষ্ট্রদূত ট্রস্টার বলেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জার্মানির সম্পর্ক আগের মতোই অব্যাহত রয়েছে। জার্মানি বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস পণ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ। অন্যান্য প্রতিশ্রুতিশীল খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
জার্মান সরকার দেশে দ্রুত নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে এবং যে সংস্কার শুরু হয়েছে তা স্বীকার করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংকিং খাত।
দূতাবাসের পক্ষ থেকে জার্মান ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয়েছে এবং তারা সবাই বাংলাদেশের প্রতি অব্যাহত আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলেও জানান রাষ্ট্রদূত ট্রস্টার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার এজেন্ডার সাফল্যকে সাধুবাদ জানাবেন তারা। এর ফলে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ব্যবসা জোরদার ও সম্প্রসারিত করতে পারবেন।’
জার্মান সরকার ধরে নিয়েছিল যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে সহযোগিতার সাধারণ ভিত্তি-দ্বিপক্ষীয়ভাবে পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তার সহযোগিতার কাঠামোটি বিস্তৃত হয়েছে। রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘তারা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের অংশীদার এবং তারা যৌথভাবে এর সর্বোত্তম ব্যবহার করতে আশাবাদী, বাংলাদেশের জনগণের সুবিধার জন্য, স্বাধীনতা, অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র এবং সকলের জন্য আরও সমৃদ্ধির জন্য হঠাৎ করে যে সুযোগ এসেছে তা গ্রহণ করতে।’
ট্রস্টার বলেন, ‘গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমরা এই মূল্যবোধে বিশ্বাস করি এবং আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশের সমাজের একটি বড় অংশ এই আকাঙ্ক্ষার জন্য চূড়ান্ত পর্যন্ত প্রচুর ব্যক্তিগত ত্যাগ স্বীকার করতে ইচ্ছুক ছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই দুঃখজনক ক্ষতির জন্য শোক করছি এবং তাদের অসামান্য সাহসকে আমাদের স্মৃতিতে রাখব।’
‘বাংলাদেশের অনেক নাগরিক মনে করেন, তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন’, যোগ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন