অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। বিগত ১৬ বছর তিনি ছিলেন দেশবাসীর কাছে অত্যন্ত পরিচিত এক মুখ। কারণ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি ছিলেন খুবই সোচ্চার। সে কারণে সরকারের সব মহলে তিনি ছিলেন খুবই প্রভাবশালী।
আওয়ামী লীগ সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের মতোই ছিল তাঁর আচরণ। সে কারণে ওই সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা মনে করতেন খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সরকারের চেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল খুরশীদ আলমের। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই দাপুটে খুরশীদ আলম খান অনেকটা আড়ালে চলে গেছেন। দুদকের পক্ষেও কোনো মামলার বিষয়ে তিনি কথা বলেন না।
অনেকের প্রশ্ন- তিনি এখন কোথায়? ২৯ আগস্ট বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, খুরশীদ-কাজল দুর্বৃত্ত চক্র খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে ফরমায়েশি সাজা দিয়েছে। এ দুর্বৃত্ত চক্র বিএনপিসহ বিরোধী দল-মতের বহু মানুষের জীবন তছনছ করে দিয়েছে। দুদকের মতো একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে হাসিনা খুরশীদ-কাজল গংয়ের মতো ছাত্রলীগের ক্যাডার দিয়ে সম্পূর্ণভাবে লীগের প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকে ৩৭টি মামলা রয়েছে।
৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাঁর ১০ বছরের সাজা হয়। ১৩টি মামলা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে জরুরি শাসনকালে। এর মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি, চারটি মানহানি ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা রয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদ দেন বিচারিক আদালত।
পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া হাই কোর্টে আপিল করলে তা খারিজ হয়ে যায়। একই সঙ্গে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাজার পরিমাণ বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদ দেন হাই কোর্ট। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ অন্য তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদ দেওয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদ স্থগিত করেন হাই কোর্ট। ঢাকার কমলাপুর আইসিডি ও চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ে গ্লোবাল অ্যাগ্রো ট্রেড কোম্পানি লিমিটেডকে (গ্যাটকো) ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলা করে দুদক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকেও ১০ বছরের কারাদ দেওয়া হয়। গত বছরের ৩০ মে ড. ইউনূসকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করে দুদক। মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। এসব মামলায় খালেদার বিপক্ষে উচ্চ আদালতে সরব ছিলেন খুরশীদ আলম খান। দুদকসূত্র জানান, খুরশীদ আলম খানের নিয়োগ এখনো বাতিল হয়নি। তবে তাঁকে দুদকের পক্ষে উচ্চ আদালতে কোনো মামলায় মুভ করতে নিষেধ করা হয়েছে। জানতে চাইলে খুরশীদ আলম খান বলেন, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দুদকের যেসব মামলা ছিল, সেগুলোয় তিনি নিজ থেকে কিছু করেননি। তিনি শুধু দুদকের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং সাংবাদিকদের কাছে আইনি ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন