বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্যপদ পাওয়ার মূল যোগ্যতা হচ্ছে টেক্সটাইল মিল মালিক হতে হবে। কিন্তু টেক্সটাইল মিল না থাকার পরও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বিটিএমএ সদস্য ও পরিচালক পদ বাগিয়ে নিয়েছেন নরসিংদীর রাশেদুল হাসান রিন্টু। কাগজে-কলমে ম্যানচেস্টার কম্পোজিটের মালিক দেখানো হলেও বাস্তবে মিলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এ কারণে রিন্টুর সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে।
বিটিএমএ-এর তথ্যমতে, ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি টেক্সটাইল প্রোডাক্ট প্রসেসর (অ্যাসোসিয়েট) ক্যাটাগরিতে ম্যানচেস্টার কম্পোজিট নামে রিন্টুর মিলকে সদস্যপদ দেওয়া হয়। মিলের ঠিকানা দেখানো হয় ১০২/৫ চাওলা, নরসিংদী সদর, নরসিংদী। এ সদস্যপদ প্রাপ্তির সুবাদে প্রতিষ্ঠানটির মালিক হিসাবে রাশেদুল হাসান রিন্টু ২০২১-২৩ এবং ২০২৩-২৫ মেয়াদের জন্য বিটিএমএ-এর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। এ কারণে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ ও সরকারি দপ্তরে ভিআইপি সুবিধা ভোগ করেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিটিএমএ-এর সদস্যপদ প্রাপ্তির আবেদনে ম্যানচেস্টার কম্পোজিটের যে ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে কোনো টেক্সটাইল মিল নেই। ওই ঠিকানায় স্যুন ব্যাটারি ইন্ডাস্ট্রিজ নামে একটি চাইনিজ ব্যাটারি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। বিটিএমএতে রক্ষিত সদস্য মিলের সংশ্লিষ্ট ফাইলে সদস্যপদের জন্য আবেদনপত্রের খালি ফর্ম, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ইস্যুকৃত ট্রেড লাইসেন্স ও চিশতিয়া সাইজিং নামের অন্য প্রতিষ্ঠানের টিআইএন সার্টিফিকেট ব্যতীত ম্যানচেস্টার কম্পোজিট মিল সংক্রান্ত কোনো নথিপত্র নেই। অর্থাৎ রিন্টু বিটিএমএ সদস্যপদ বাগিয়ে নিতে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।
বিটিএমএ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিটিএমএ একটি বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মিলটির কাছে টেক্সটাইল মিলসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাঠাতে চিঠি দেওয়া হলেও প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে কোনো জবাব ও নথিপত্র পাওয়া যায়নি। এমনকি বিটিএমএ-এর প্রেরিত পত্রের প্রাপ্তিস্বীকারও করা হয়নি। পরে বিটিএমএ-এর সদস্যপদ প্রদান সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশক্রমে বিটিএমএ-এর পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ম্যানচেস্টার কম্পোজিটের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। পাশাপাশি সংগঠনের মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন মোতাবেক রাশেদুল হাসান রিন্টুকে পরিচলনা পর্ষদের সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিটিএমএ-এর একাধিক পরিচালক যুগান্তরকে জানান, সরকারের প্রভাব খাটিয়ে রিন্টু বিটিএমএ-এর সদস্যপদ লাভ করেন। এক্ষেত্রে সেক্রেটারিয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা তাকে সহায়তা করেন। আইনকানুন না মেনেই তাকে সদস্যপদ দেওয়া হয়। তারা জানান, একটি পরিচ্ছন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন হিসাবে বিটিএমএ নতুন রূপে সামনের দিকে এগোতে চাচ্ছে। তাই সদস্যদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায় বা টেক্সটাইল মিল নেই-এমন কোনো ব্যক্তি যেন সংগঠনের সঙ্গে থাকতে না পারে, সেজন্য বিশেষ নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। সেই নিরীক্ষার জন্য ম্যানচেস্টার কম্পোজিটের যাবতীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। পরে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় লোক পাঠিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে ম্যানচেস্টার কম্পোজিটের স্বত্বাধিকারী রাশেদুল হাসান রিন্টু যুগান্তরকে বলেন, সদস্যপদ বাতিলের বিষয়ে বিটিএমএ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। বিটিএমএ সেক্রেটারিয়েট থেকে পর্ষদ সভায় অংশ না নিতে মেসেজ দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী আমি আর বোর্ড সভায় অংশগ্রহণ করছি না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন