চাঁদপুরের হাইমচরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে মামলা তুলে না নেওয়ায় আহসান হাবিব (২৭) নামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ককে কুপিয়ে গুরুতর জখমের অভিযোগ উঠেছে বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে। আহত আহসান হাবিব দক্ষিণ আলগী গ্রামের আবু পাটোয়ারীর ছেলে। তিনি হাইমচর সরকারি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
আহতের পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সকালে হাইমচর সরকারি কলেজের সামনে বিএনপি নেতা সরদার আব্দুল জলিল মাস্টারের ভাগনে মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে এ হামলা হয়। এ সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে তাকে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এ ঘটনায় নুর মিয়া আখনের ছেলে সিয়াম হোসেনকে আটক করেছে হাইমচর থানা পুলিশ।
আহত আহসান হাবিব বলেন, ‘গত ৪ আগস্ট হাইমচর উপজেলায় শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে হামলা চালান আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। ওই ঘটনায় গত ১৭ আগস্ট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর হোসেন পাটোয়ারীসহ ৪৩ জনের নামে মামলা করি। সেই মামলা তুলে নিতে উপজেলা বিএনপি নেতা সরদার আব্দুল জলিল মাস্টার আমাকে বারবার হুমকি দিচ্ছিলেন। সেই জের ধরে তার কর্মীরা আমার ওপর হামলা চালায়।’
আহতের মামা দুলাল পাটোয়ারী জানান, তার ভাগনে আহসান হাবিব হাইমচর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। আন্দোলনে হাবিব গুরুতরভাবে আহত হয়। পরে নিজে বাদী হয়ে হাইমচর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা করার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল মাস্টার তাকে নিরপরাধ মানুষকে মামলায় জড়ানোর জন্য বলেন। সে রাজী না হওয়ায় পরে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন। তার কথা না শোনায় তিনি তার ভাগনে মিরাজকে দিয়ে কয়েকবার তার ওপর হামলা করান। শেষ পর্যন্ত হাবিবকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে পরিকল্পনা করে কুপিয়ে জখম করে তারা। আহসান হাবিব বর্তমানে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। হামলার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট অনুরোধ জানান তিনি।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দক্ষিণ আলগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সর্দার আব্দুল জলিল মাস্টার।
তিনি বলেন, ‘আহসান হাবিবের সঙ্গে আমার কোনও দ্বন্দ্ব নেই। আমি কেন তাকে আওয়ামী লীগের মামলা তুলে নিতে বলবো? আমি আওয়ামী লীগের সময় তিনবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। বিএনপি করায় নির্যাতিত হয়েছি এবং জেল খেটেছি। সে যদি আমার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করে, সেটা সত্য নয়।’
হাইমচর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. কামরুল ইসলাম জানান, কলেজের সামনে আজ (মঙ্গলবার) যে ঘটনাটি ঘটে গেলো, তা অনাকাঙ্ক্ষিত ছিল। আমাদের কলেজে কখনও এমন জঘন্যতম হামলার ঘটনা ঘটেনি। আহত আহসান হাবিব ও মিরাজ দুজনই এ কলেজের ছাত্র। আহসান হাবিবের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা আলমাস উদ্দিন আখনের ছেলে সিরাজুল ইসলাম মিরাজকে কলেজ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তাকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হবে।’
তিনি আরও জানান, মিরাজ একাদশ শ্রেণির ছাত্র। এর আগেও তার বিরুদ্ধে কলেজশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সাথে অশোভন আচরণের অভিযোগ ওঠে।
হাইমচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন সুমন জানান, সমন্বয়ক আহসান হাবিবের ওপর হামলার ঘটনায় সিয়াম নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। আহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদের আটকের চেষ্টা চলছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন