রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রায় ১ হাজার ৯০০ ইটভাটা রয়েছে, যার বেশির ভাগই অবৈধ। এসব ইটভাটা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। সেই সঙ্গে ধোঁয়ায় থাকা ক্ষতিকর কার্বন ডাইঅক্সাইড মানবশরীরে ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, কয়লাচালিত এসব ইটভাটা উত্তরাঞ্চলের ২০ হাজার একরের বেশি জমি গিলে খেয়েছে। অবৈধ এসব ইটভাটায় পরিবেশের ক্ষতি হলেও স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের দাবি, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তারা। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিএসটিআইয়ের সাম্প্রতিক অভিযান সত্ত্বেও থেমে নেই এসব ঘিরে রমরমা ব্যবসা।
রংপুর ও রাজশাহী (বগুড়া) পরিবেশ অফিসসূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রায় ১ হাজার ৯০০ ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে রংপুর বিভাগে প্রায় ১ হাজার ও রাজশাহী বিভাগে প্রায় ৯০০ ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই অনুমোদনহীন। সরকারি বিধিবিধান লঙ্ঘন করে এবং কোনো কিছু বিবেচনায় না নিয়ে ইট প্রস্তুত করছে। জনবসতি, ফসলি জমি এমনকি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে ইটভাটা করা হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটাগুলো প্রতি বছর প্রায় ১৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা পুড়ে প্রতি মৌসুমে ৫০০-৬০০ কোটি পিস ইট প্রস্তুত করছে। ভাটায় ব্যবহৃত কয়লার কালো ধোঁয়া থেকে নিঃসৃত কার্বন ডাইঅক্সাইড পরিবেশদূষণের পাশাপাশি মানবদেহে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেললেও স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। যেখানে সেখানে ইটভাটা গড়ে ওঠায় প্রতি বছর আবাদি জমি কমছে।
সূত্রমতে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় ইটভাটা রয়েছে অন্তত ১ হাজার ৯০০। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র রয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০টির। বাকি ইটভাটার মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র গ্রহণ না করেই পেশিবলে ইটভাটা পরিচালনা করছেন। জানা গেছে, একটি ইটভাটায় গড়ে ৬ থেকে ১০ একর জমির প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে এ অঞ্চলের ইটভাটাগুলো প্রায় ২০ হাজার একর জমি গিলে খেয়েছে। প্রতি মৌসুমে একটি ইটভাটা গড়ে ১৫ থেকে ২০ লাখ পিস ইট প্রস্তুত করতে পারে। সূত্রমতে, একটি ইটভাটা প্রতি মৌসুমে গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে। সে হিসেবে প্রতি মৌসুমে ১৫-১৬ লাখ মেট্রিক টন কয়লা পুড়ছে।
রংপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রংপুরে বৈধ ইটভাটা মোট ইটভটার ২২ শতাংশ। বাকিগুলো অবৈধ। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।’ রাজশাহী বিভাগীয় (বগুড়া) উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিভাগে মোট ইটভাটার ৬০ শতাংই অবৈধ। এগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ একটি ইটভাটা গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ মেট্রিক টন কয়লা পুড়ছে বলেও জানান তিনি।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন