কর্মসংস্থানের জন্য এ বছরের প্রথম ছয় মাসে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন পাঁচ লাখেরও বেশি কর্মী। বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় সৌদি আরব। দেশটিতে গেছেন আড়াই লাখ অভিবাসী কর্মী। বাংলাদেশি ডিজিটাল প্ল্যাটফরম ‘আমি প্রবাসী’র প্রকাশিত অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।
প্ল্যাটফরমটি অভিবাসনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, অভিবাসন ব্যয় হ্রাস এবং অভিবাসনপ্রক্রিয়ায় গতিশীলতা আনতে কাজ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিবাসনের জন্য সৌদি আরব বেশির ভাগ কর্মীর প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে। সৌদি নীতিনির্ধারকরা স্থানীয় অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করছেন। এতে সেখানে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কর্মীর কাজের সুযোগ বেড়েছে।
দ্বিতীয় স্থানে আছে মালয়েশিয়া। কাজের জন্য দেশটিতে গেছেন ৯৩ হাজার বাংলাদেশি। তৃতীয় স্থানে থাকা কাতারে অভিবাসী হয়েছেন ৩৯ হাজার ৫১৭ জন। প্রতিবেদনে এসব অভিবাসী কর্মীর কাজের ধরন সম্পর্কেও নানা তথ্য দেওয়া হয়।
‘সাধারণ’ শ্রেণিতে অবস্থান করছেন প্রায় ৮০ শতাংশ অভিবাসী কর্মী, সংখ্যার হিসাবে যা দেড় লাখের মতো। এই শ্রেণিতে দক্ষ ও অদক্ষ উভয় ধরনের কর্মীই রয়েছেন। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে নির্মাণকাজ। এই খাতে ৬৩ হাজার ৪৬৯ অভিবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে কারখানার কাজ।
এই খাতে কাজ করছেন ৩৩ হাজার ৭৪৮ কর্মী।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মোট অভিবাসী শ্রমিকের ১০.৪ শতাংশ দক্ষ। এর মধ্যে সফটওয়্যার ডেভেলপারের মতো দক্ষ পেশাজীবীর হার ৩.২ শতাংশ। অভিবাসী কর্মীদের শীর্ষ ১০ কাজের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে অ্যাকাউন্ট্যান্সি। বছরের প্রথমভাগে ১৩ হাজার অ্যাকাউন্ট্যান্ট বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী হয়েছেন। অদক্ষ অভিবাসীর হার ৭ শতাংশ। বৈশ্বিক শ্রমবাজারে অদক্ষ থেকে দক্ষ অভিবাসনের এই পরিবর্তন দেশের জন্য ইতিবাচক।
অনেক বছর ধরেই অদক্ষ শ্রম রপ্তানির জন্য পরিচিত বাংলাদেশ। এ দেশের শ্রমশক্তির দক্ষ এবং বহুমুখী হয়ে ওঠার চিত্র ইতিবাচক অগ্রগতির বার্তা দেয়। বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ভবিষ্যতের জন্য এই পরিবর্তনের গুরুত্ব অনেক। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়ানোয় এবং সঠিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে।
প্রতিবছর অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়লেও নারীদের অংশগ্রহণ কম। বছরের প্রথমভাগে মাত্র ৬ শতাংশ নারী মোট শ্রমশক্তির অংশ হয়েছেন। শ্রমশক্তিতে অবদান রাখা ১৩ হাজার ১৯০ জন নারীই গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে বিদেশে গেছেন।
বিভিন্ন বিভাগের অভিবাসন প্রবণতা বিশ্লেষণ দেখা গেছে, ঢাকা থেকে এক লাখ ২১ হাজার ৫২০ জন অভিবাসী হয়েছেন। চট্টগ্রাম থেকে অভিবাসী হয়েছেন ৯১ হাজার ৫৩০ জন। খুলনা থেকে ৩৭ হাজার ২৯০ জন এবং রাজশাহী থেকে ৩৫ হাজার ৬৬০ জন অভিবাসী হয়েছেন। ময়মনসিংহ থেকে অভিবাসী হয়েছেন ২৬ হাজার ১০ জন। সিলেট থেকে অভিবাসী হয়েছেন ১৭ হাজার ৩৮০ জন। সবচেয়ে কম মানুষ অভিবাসী হয়েছেন রংপুর বিভাগ থেকে। বিভাগটি থেকে অভিবাসী কর্মী হয়েছেন ১৪ হাজার ৪১০ জন।
বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যক্তিগত ভিসা ইস্যু করা হয় এক লাখ ৮৩ হাজার ২৭৪টি। গ্রুপ ভিসার সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ২২৩। স্বয়ংক্রিয় বা ওয়ানস্টপ ভিসার সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ৬৩৮।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন