আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে জিম্মি অবস্থায় ছিল। তাই আমলারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। তবে অবস্থার বিপক্ষে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ কিছু কাজ করলেও তারা পেশাগতভাবে সমস্যায় ছিলেন।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সঙ্গে বৈঠকে সরকারের সচিব ও সিনিয়র সচিবেরা এসব অভিযোগের কথা তুলে ধরেন। রবিবার এ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির ১২ সদস্যই সরাসরি ও অনলাইনে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সরকারের উচ্চপদস্থ ৮৫ কর্মকর্তা বৈঠকে অংশ নেন। এর মধ্যে ৩২ জনই সিনিয়র সচিব ও সচিব ছিলেন।
সিনিয়র সচিব ও সচিবের আরও অভিযোগ করেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেশাভিত্তিক সমিতিগুলোও রাজনৈতিকভাবে জিম্মি ছিল। ফলে যারা নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অতিরাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার কারণে দলগতভাববে বা সমিতিগতভাবেও কিছু করতে পানেরনি কর্মকর্তারা।
ব্রিফিংয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘কিছু সুবিধাভোগী আমলা, ব্যবসায়ী এবং রাজনীতিবিদদের ত্রিমুখী সমন্বয়ের কারণে উন্নয়ন প্রশাসন ঠিক মতো কাজ করতে পারেনি। গত ১৫ বছরে উন্নয়ন প্রকল্পে লুণ্ঠন প্রক্রিয়া চলছিল। ওই সময় আমলারা রাজনীতি এবং তাদের সিনিয়রদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছেন।’
সরকারি প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সম্ভাব্যতা-সমীক্ষা ঠিক মতো করা হতো না উল্লেখ করে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান বলেন, ‘যে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ বারবার বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে ব্যয়ও।’
‘সচিবেরা জানান, সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় দেখানো হয় যেসব প্রকল্প টেকসই হবে, পরে দেখা যায় সেগুলো টেকসই হয়নি। অনেক সময় জমি অধিগ্রহণ করা হবে বলে আগেই জমি কিনে তিনগুণ দাম নেওয়া হয়েছে।’
দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আমলারা জানিয়েছেন, পেশাগতভাবে আমলাতন্ত্রকে ভঙ্গুর করে ফেলা হয়েছে। রাজনীতিকীকরণ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।’
তিনি জানান, বৈঠকে হাইটেক পার্ক, কর্নফুলী টানেল, জ্বালানি খাতের বিভিন্ন প্রকল্প, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, কর আহরণ, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা, ব্যাংকের পরিচালক নিযুক্ত করা এবং আগামীতে তাদের ভূমিকা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বৈঠকে সচিবেরা জানান, পেশাদারি উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা খুবই দরকার। উন্নয়ন প্রশাসনের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে স্বাধীনতা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, ‘সঠিকভাবে কাজ করতে আমলাদের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে সমন্বয়, সদিচ্ছা এবং সক্ষমতার ঘাটতি আছে।’
ব্রিফিংয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ড. জাহিদ হোসেন, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ফেরদৌস আরা বেগম, ড. সেলিম রায়হান, প্রফেসর তসলিম সিদ্দীকি এবং ড. এনামুল হক উপস্থিত ছিলেন।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আইএমইডি অনেক সময় খুব ভালো কিছু প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। সেখানে আরেকটি অনিয়মের তথ্যও তুলে আনা হয়। কিন্তু সেজন্য তাদের সরকারি রোষানলে পড়তে হয়েছিল।’
‘অনেক সময় সিনিয়র আমলারা জুনিয়রদের চাপ দিতেন। অনেক আমলাদের ভেতরে রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা যুক্ত হয়েছিল। এখন নতুন সরকারের সময় নানা সংস্কার হচ্ছে। ফলে মূল কাঠামো শক্তিশালী হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।’
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির আকে সদস্য ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘দেশের রাজনীতি ঠিক না থাকলে আমলাতন্ত্র ঠিক হবে না। রাজনীতি ঠিক করা হলে আমলাতন্ত্রও ঠিক হবে।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন