হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ১ ও ২-এর ক্যানোপি ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দুই ক্যানোপির ভেতরে শত শত যাত্রীর স্বজন, দর্শনার্থী হরহামেশাই প্রবেশ করে জটলা তৈরি করছেন। এতে প্রবাসীদের মালামাল হারানোসহ নিরাপত্তা শঙ্কাও তৈরি হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে সমস্যা হচ্ছে না। তারপরও সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানানো হবে।
শনিবার (২ নভেম্বর) সরেজমিন বিমানবন্দরের ক্যানোপিতে গিয়ে দেখা যায়—দুই ক্যানোপি ঘিরে নিরাপত্তার কোনও বালাই নেই। যে যার ইচ্ছেমতো প্রবেশ করছেন এবং বের হচ্ছেন। কে যাত্রীর স্বজন আর কে দর্শনার্থী তা বোঝার উপায়ও নেই। গেটের একটু সামনেই শেকল দিয়ে ঘেরাও দেওয়া, যেন কেউ পার হতে না পারে। শেকলের অপর প্রান্তে সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিরাপত্তা বিভাগ এভসেকের সদস্যরা রয়েছেন।
দেখা যায় অনেকে আবার নিরাপত্তা শেকল পার হয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টাও করছেন। তখন নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেককে আবার নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় লিপ্ত হতে দেখা গেছে। গাড়ির দালালরা অনায়াসে ভেতরে প্রবেশ করছেন, বের হচ্ছেন। শৃঙ্খলার কোনও বালাই নেই এখানে। সাংবাদিক পরিচয়ে গাড়ির দালালদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা সটকে পড়েন।
জানা যায়, নিরাপত্তার বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রায় ৩ বছরের বেশি সময় ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরের কনকর্স হল দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ রয়েছে। আগে ৩০০ টাকা টিকিট কেটে যাত্রীর স্বজনরা ভেতরে অর্থাৎ গ্রিন চ্যানেলের সামনে কনকর্স হলে যেতে পারতেন। এরপর একই কারণে যাত্রীর স্বজনদের জন্য ক্যানোপিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। অর্থাৎ যাত্রী বের হলে বাইরে থেকে তাকে তার স্বজন দেখতে পাবেন। এসময় যেকোনও একজন গিয়ে তাকে আনতে পারবেন। এতে লাগেজ হারানো কিংবা অন্যান্য যেকোনও নিরাপত্তা যাত্রীর জন্য সুসংহত থাকতো।
কিন্তু বর্তমানে এসবের কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। শত শত যাত্রীর স্বজনরা বিমানবন্দরের ভেতরে ঢোকার গেট ঘিরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকছেন। অনেকে আবার বসে খোশগল্প কিংবা খাবারও খাচ্ছেন।
এ অবস্থায় প্রবাসী কিংবা বিদেশি কোনও যাত্রী ভিড় ঠেলে কীভাবে বের হবেন, তাদের সেই চিন্তা করতে হচ্ছে। ঠিকমতো লাগেজ ধরে না রাখলে তা হারানোরও শঙ্কা থাকছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ক্যানোপির গেটের সামনে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন আনসার সদস্য ও এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সদস্য রয়েছেন। আর্মড পুলিশ সদস্যরা গাড়িগুলো সঠিকভাবে পার্কিং কিংবা দ্রুত যাত্রী নিয়ে চলে যাওয়ার জন্য বলছেন। চালকরা গাড়ি নিয়ে যেন দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে না থাকেন, সে জন্য মাইকিং করছেন তারা। অপরদিকে গেটে থাকা দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের খোশগল্পে মেতে থাকতে দেখা গেছে।
সাংবাদিক পরিচয়ে আনসারদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা বলেন, ‘এ বিষয়ে স্যারদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা কোনও কথা বলতে পারবো না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এপিবিএনের কয়েকজন সদস্য জানান, এখানে কাকে নিষেধ করবেন? কথা বলতে গেলেই সমস্যা। পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব এভসেকের। তারাই কিছু বলছে না, আমরা কী বলবো। আমাদের যতটুকু কাজ আমরা করে যাচ্ছি।
কথা হয় সৌদি থেকে আসা যাত্রী আব্দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে এত লোক কেন? ভেতরে মোবাইলের ব্যবস্থা আছে। একজন প্রবাসী এসে ফোন করে তার স্বজনদের অবস্থান জানতে পারছেন। সেভাবে তিনি তার স্বজনদের সঙ্গে চলে যাবেন। কিন্তু এত লোক এখানে! আমাকে ভিড় ঠেলে বাইরে আসতো হলো।‘ তিনি বলেন, ‘আমার কাছে লাগেজ ও হ্যান্ড লাগেজ রয়েছে। অনেকে টানাটানিও করছে। আমি শক্তভাবে না ধরলে কেউ নিয়ে যেতে পারতো।’
‘এটা কোনও শৃঙ্খলা হতে পারে না’, মন্তব্য এই যাত্রীর।
সৌদিফেরত আরেক যাত্রী সামিউল ইসলাম বলেন, ৭ বছর পর দেশে এলাম। আগে ফেসবুকে দেখেছি, এখন সরাসরি দেখছি বাইরে ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা। সহজেই লাগেজ পেলাম, ফোনে কথাও বললাম। কিন্তু গেট দিয়ে বের হবো উপায় নেই। এত লোকের ভিড়, যেন সমাবেশ হচ্ছে।’
তিনি লাগেজের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেন। বলেন, ‘যেভাবে ভিড় সামলে এলাম, তাতে আমি তো ভয় পেয়েছিলাম।’ এত লোক যেন ভেতরে না আসতে পারে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক সময় একসঙ্গে অনেক ফ্লাইট নামলে যাত্রীসহ তার স্বজনরা ভেতরে চলে আসেন। আবার অনেক সময় রাজনৈতিক দলের নেতারা এলেও এমন অবস্থা হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিতরা কাজ করছেন। এখানে সমস্যা হচ্ছে না। তথাপি আমি সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানাচ্ছি।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন