পিরোজপুরের জিয়ানগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান, পিরোজপুর-১ আসনে জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাসুদ সাঈদী বলেছেন, ইসলামের দৃষ্টিতে ইমামতি কোনো পেশা নয়, বরং এটা হচ্ছে একটি মহান দায়িত্ব। ইমামের কাজের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে নবী করীম (স.) ইমাম ও মুয়াজ্জিনের জন্য এই বলে দোয়া করেছেন, ‘ইমাম হচ্ছেন জিম্মাদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন আমানতদার। যেহেতু ইমামতি একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, তাই ইমামকে এ কাজের জন্য যেমন যোগ্য হতে হবে তেমনি তাকে মহৎ গুণের অধিকারীও হতে হবে। তাকে হতে হবে সৎ নিষ্ঠাবান তাকওয়াধারী আল্লাহওয়ালা আলেম। একজন ইমাম শুধু মসজিদের ইমামই নন; বরং তিনি সমাজেরও ইমাম। একজন ইমাম হলেন মানবতার পথপ্রদর্শক।’
জিয়ানগর উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি আয়োজিত উপজেলা ইমাম সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ইমামদের দ্বায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মাসুদ সাঈদী বলেন, সম্মানিত ইমামগণ জনসাধারণকে ইসলামের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞানদানের পাশাপাশি তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। মসজিদে নববিতে আখেরি নবী সাইয়্যেদুল মুরসালিন ইমামুল আম্বিয়া মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স.) আজীবন ইমামের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মসজিদে নববীকে তিনি শুধু নামাজের জন্য সীমাবদ্ধ রাখেননি, বরং সমাজ উন্নয়নের যাবতীয় কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি তা উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। আমরা যদি প্রতিটি মসজিদকে নবীজির দেখানো সেই মসজিদে নববীর রোলমডেল রূপে গড়ে তুলতে পারি তাহলে আমাদের সমাজ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবে, সমাজ থেকে নিরক্ষরতা দূর হবে, সমাজে ব্যাপকভাবে জনকল্যাণমূলক কাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, মসজিদের ইমামগণ যেমন জাতির আমলগত সংস্কারের যিম্মাদার, তেমনি আক্বীদাগত সংস্কার ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করারও পুরাপুরি দায়িত্বশীল। বাতিল আক্বীদা ও মতবাদকে খণ্ডন করা এবং ভ্রান্ত চিন্তাধারার মূলোৎপাটন করা তাদের প্রধান দায়িত্ব। যদি আল্লাহ তা'আলার একত্ববাদ পরিপন্থী কোনো আওয়াজ রাষ্ট্রে উঠে অথবা রাসূল (সা)-এর রিসালাতের অবমাননা করা হয় তাহলে বাতিল শক্তির এইসকল ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জাতিকে সতর্ক করা ও প্রতিবাদ প্রতিরোধ করা ইমামদের কর্তব্যও বলে তিনি উলেখ করেন।
মাসুদ সাঈদী আরো বলেন, আল্লাহর স্বার্বভৌমত্ব ও রাসুল (সা) এর আনুগত্যের পরিবর্তে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর থেকে এ যাবৎ দলের স্বার্বভৌমত্ব ও দলীয় নেতাদের আনুগত্য, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব চলছে। যার কারণে মানুষ সুশাসন ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, গুম-খুন, ধর্ষণ, মাদক ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধের সয়লাবে জাতীয় জীবনে চরম দুর্ভোগ ও অশান্তি চলছে।
আল্লাহর ভয় ও ধর্মীয় শিক্ষা না থাকার কারণে শেখ হাসিনা সমাজসেবক থেকে দানবে পরিণত হয়েছেন উল্লেখ করে মাসুদ সাঈদী বলেন, ক্ষমতার মোহে দেড় দশক ধরে শত শত মানুষকে গুম, খুন ও নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছে খুনি হাসিনা। কুণ্ঠাবোধ করেনি দেশের স্বার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিতে। বন্ধুত্বের নামে ভারতের দাসত্বের জিঞ্জিরে দেশের ১৮ কোটি মানুষকে আবদ্ধ করে রেখেছিল। দেশের প্রতিটি সেক্টরকে শেখ হাসিনা দুর্নীতি, লুটপাট এবং হাজারো অনিয়মে ধ্বংস করে দিয়েছেন। হাসিনা জুলাই অভ্যুত্থানের বীরদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। ৫ আগস্টের গণবিপ্লবের পর আমরা বাংলাদেশে আর কোনো দানব, আর কোনো স্বৈরাচার, আর কোনো খুনিকে দেখতে চাই না। দানব স্বৈরাচারদের হাত থেকে বাঁচতে আল্লাহভীতি সম্পন্ন সত্যিকারের জনগণের খাদেম ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মী যাকে যেখানে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে হবে। একটি শান্তিময় ইনসাফপূর্ণ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের লক্ষ্যে বেশি বেশি করে আলেম নির্বাচিত করে পার্লামেন্টে পাঠাতে হবে।
সময়ের দাবি অনুযায়ী খুৎবার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করার আবেদন জানিয়ে উপস্থিত ইমামদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ধরাবাধা ছাপানো বারো চান্দের একই খুৎবা বছরের পর বছর পড়া উচিত নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপট, সমসাময়িক অবস্থা ও ঘটনাবলি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি সামনে রেখে খুৎবার ভাষণ প্রস্তুত করা প্রয়োজন। পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে খুৎবা প্রদান প্রয়োজন। খুৎবায় আকীদার বিষয়বস্তুকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া বেশি প্রয়োজন। কারণ আকীদা শুদ্ধ হলে ইবাদত শুদ্ধ, আর তা ভুল হলে ইবাদতও ভুল হয়ে যায়। আকীদার বিভ্রান্তিতে একজন মুমিন কখনো কখনো ঈমান থেকেও খারিজ হয়ে যায়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের ইমামগণের অর্থনৈতিক দুরাবস্থার কথা উল্লেখ করে সাঈদীপুত্র মাসুদ বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নীতি নৈতিকতার অধঃপতনের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশের ইমাম মুয়াজ্জিন ও খাদিমগণ এক কঠিন সময় পার করছেন। নিতান্ত অল্প বেতনে বর্তমান সমাজে ইমামগণের জীবন নির্বাহ করাই দুঃস্কর। এর কারণ হলো আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ ইমাম মুয়াজ্জিনের জন্য কোনো বেতন স্কেল নেই, তেমনিভাবে নেই ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে তাদের মান-সম্মানের নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোনো আইন, নেই মসজিদ পরিচালনার শক্তিশালী কোনো নীতিমালা। এমতাবস্থায় দেশের প্রথিতযশা আলেমদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে দেশের সকল মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনের জন্য বেতন কাঠামো ও চাকরির নীতিমালা তৈরি করার জন্য আমি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির জিয়ানগর উপজেলার সভাপতি মাওলানা আব্দুল জলিল হাওলাদারের সভাপতিত্বে ও উপজেলার সেক্রেটারি মাওলানা জামাল হোসেনের সঞ্চালনায় উপজেলা ইমাম সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলা সভাপতি মাওলানা মুফতি আব্দুল হালিম। সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন টগড়া দারুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ মাওলানা মো. হারুন অর রশিদ, ওলামা বিভাগের জেলা সেক্রেটারী মাওলানা শওকত আলী, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা ইয়াহইয়া হাওলাদার, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির পিরোজপুর জেলার উপদেষ্টা মো. হাবিবুর রহমান, ইমাম সমিতির জিয়ানগর উপজেলার প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা মো. আলী হোসেন, উপদেষ্টা মো. তৌহিদুর রহমান রাতুল, উপদেষ্টা মাওলানা মো. ছারোয়ার হোসেন মোল্লা।
বিডি প্রতিনিধি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন