দুর্নীতি ও লুটপাট করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন শ্রমিকলীগের সুনামগঞ্জ জেলার যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস।
তিনি বিসিআইসির প্রতিষ্ঠান ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির সিবিএ (কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট) সভাপতি ও বিসিআইসি শ্রমিক কর্মচারি ফেডারেশনের সহসভাপতি। তিনি নোয়ারাই-ইসলামপুর গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের পুত্র।
আব্দুল কুদ্দুস ১৯৯১ সালের ১৮ নভেম্বর খালাসি পদে চাকুরি নেন সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে। এরপর তিনি চাকরিতে প্রমোশন নিয়ে প্রথমে সিবিএ সেক্রেটারি এরপর সিবিএ সভাপতি নির্বাচিত হন। গত ১৫ বছরে মুহিবুর রহমান মানিক এমপির ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে লুটপাট করেছেন। ফ্যাক্টরিতে এমন কোন দুর্নীতি নেই যা তিনি করেননি।
শ্রমিকদের নিয়ে ফ্যাক্টরিতে একটি বাহিনী গঠন করেন আব্দুল কুদ্দুস। এই বাহিনীকে দিয়ে কারখানার মালামাল চুরি, লুটপাট, শ্রমিক নির্যাতন, শ্রমিকের টাকা চুরি, সমবায় সমিতির টাকা আত্মসাৎ, সিমেন্ট ফ্যাক্টরির দোকান দখল, বাসা ভাড়া ও শ্রমিক বদলি করেছেন।
গত ৫ আগষ্ট দেশের পট পরিবর্তন হলে আব্দুল কুদ্দুস আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু তার বাহিনীর লোকজন এখনও রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করে শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন করে রেজিষ্ট্রেশনের জন্য দৌড়-ঝাপ শুরু করছেন।
আব্দুল কুদ্দুসের সহযোগিরাও ফ্যাক্টরিতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আব্দুল কুদ্দুস আত্মগোপেনে গেলেও তার সহযোগিরা এখনও কারখানায় স্বক্রীয় থেকে দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নতুন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে নিজদের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে মরিয়া।
ফ্যাক্টরিতে আব্দুল কুদ্দুস ও এমপি মানিকের ভাতিজা আজিজুর রহমানসহ তার সহযোগিদের অনিয়ম, দুর্নীতি, আত্মসাৎ, স্ক্যাপ চুরি, লুঠপাটের বিষয়ে ২৩টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ আগষ্ট বিসিআইসির চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ফ্যাক্টরির অস্থায়ী শ্রমিক আবু সুফিয়ান বাবুল।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিসিআইসি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গত ২০ অক্টোবর তদন্ত শেষ করে ঢাকায় চলে যায়। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- কর্মচারি বিভাগের উপ-প্রধান (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফার রহমান, অর্থ বিভাগের উপ প্রধান বিপুল কুমার মজুমদার, বিসিআইসির প্রতিষ্ঠান ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানার সাবেক উপ ব্যবস্থাপক মঈনুল ইসলাম।
অভিযোগকারী আবু সুফিয়ান বাবুল যুগান্তরকে জানান, সিবিএ সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস আত্মগোপনে থেকে তার একটি স্বক্রীয় গ্রুপ দিয়ে ফ্যাক্টরি পরিচালনা করে যাচ্ছে। তারা আওয়ামীপন্থী বর্তমানে অন্য দলের হয়ে ভিন্ন ব্যবস্থায় ট্রেড ইউনিয়ন পরিচালনায় ব্যস্ত।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের সকল বিষয় তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্ত কমিটির নেতৃবৃন্দ শীঘ্রই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
এ ব্যাপারে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুর রহমান বাদশাহ জানান, বিসিআইসিতে শ্রমিকদের দেওয়া একটি অভিযোগের ভিত্তিতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম ফ্যাক্টরিতে এসে তদন্ত করেছেন। সোমবার তদন্ত কমিটি সকল পক্ষ ও সাধারণ শ্রমিক এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করে সোমবার বিকেলে ঢাকায় চলে গেছে। বিসিআইসির প্রধান কার্যালয়ের ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি ১৫ দিনের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দেওয়া কথা। রিপোর্ট পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন