নির্বাচন কমিশন-ইসি গঠনে দ্রুত সার্চ কমিটি গঠন করার পরিকল্পনা নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আগামী মাসের মধ্যে ইসি গঠন হতে পারে। আওয়ামী লীগ সরকারের তৈরি করা আইন বাদ দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করে নতুন ইসি গঠনের চিন্তা করা হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইসি গঠনে আইন সংস্কারের বিষয়ক প্রস্তাবনা তৈরি করছে। সরকার চাইলে যে কোনো সময় তারা এই বিষয়ে সুপারিশ জমা দিতে পারবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আগে থেকেই ইসি গঠনে বিদ্যমান আইনকে ত্রুটিপূর্ণ বলে আসছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইসি নিয়োগ আইনের একটি খসড়া তৈরি রয়েছে। সরকার চাইলে আমরা দিতে পারব।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন সংস্কার করে ইসি পুনর্গঠনের চিন্তা ছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। তবে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার চাপ; ভোটার তালিকা তৈরি এবং নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার সুবিধার্থে দ্রুত ইসি গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ ছাড়া সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনাও শুরু করেছে সরকার।
সম্প্রতি একজন উপদেষ্টা সার্চ কমিটি গঠনের জন্য আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) কাছ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে নাম চেয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সার্চ কমিটির বিষয়ে একজন উপদেষ্টার সাথে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক দলের সাথে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে গত ১২ ও ১৯ অক্টোবর দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূস। গত ১৯ অক্টোবরের সংলাপ শেষে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করবে বলে জানান প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম। তিনি বলেছিলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনে শিগগিরই সার্চ কমিটি গঠন করা হবে এবং এই সার্চ কমিটি ঠিক করবে নির্বাচন কমিশনার কারা হবে।’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের এক মাসের মাথায় ৫ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) পদ থেকে কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারগণ পদত্যাগ করেন। এরপর প্রায় দুইমাস নির্বাচন কমিশন শূন্য রয়েছে। ইসি সচিবের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় রুটিনওয়ার্ক চালালেও অনেক কাজ নিয়ে জটিলতা হচ্ছে। ইসি শূন্য থাকায় সম্প্রতি আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ নিয়ে চট্টগ্রাম সিটির মেয়রের গেজেট প্রকাশ করেছে ইসি সচিবালয়। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, আইনি বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে প্রতি বছরের ২ জানুয়ারি ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করা হয়।
তার আগে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হয় ইসিকে। এছাড়া সংসদ নির্বাচনের আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। আইন অনুযায়ী ভোটার তালিকা হালনাগাদের খসড়া ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দায়িত্বও ইসির।
ফলে কমিশন না থাকায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি ইসি সচিবালয় নিতে পারছে না। ইসি নিয়োগে কোনও আইন ছিল না। ২০১২ সালে এবং ২০১৭ সালে পরপর দুবার সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে ২০১২ সালে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। একইভাবে ২০১৭ সালে সার্চ কমিটি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠন করে। পরে ২০২২ সালে ওই সার্চ কমিটি গঠনের বিধান রেখে ইসি নিয়োগে আইন করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। ওই আইনে ২০১২ ও ২০১৭ সালে গঠিত সার্চ কমিটির বৈধতা দেওয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন