মাইনাস টু ফর্মুলা নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কোনও চিন্তাভাবনা নেই জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, ‘আমাদের সরকার মাইনাস টু কী জিনিস এটা জানে না। মাইনাস টু নিয়ে সরকারের কোনও পর্যায়ে কোনও ধরনের আলোচনা হয়নি। ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আজাদ মজুমদার।
দেশের রাজনীতিতে মাইনাস টু ফর্মুলাটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সরকার সামনে এনেছিল। সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বাদ দেওয়ার পক্ষে দল দুটির কিছু নেতা সক্রিয় হয়েছিল। ওই নেতারা সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত দেশের রাজনীতিতে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিষয়টি নিয়ে আবারও কানাঘুষা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তার দল বিরাজনীতিকরণে বিশ্বাস করে না এবং আবার ‘মাইনাস টু’ দেখতে চান না।
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত ৫ আগস্ট বিএনপি, জামায়াতসহ বেশ কয়েকটি দলের সঙ্গে সংলাপ হয়েছিল। দুর্গাপূজার কারণে গত শনিবার সংলাপ হয়নি বলে সূত্রে জানা গেছে। এরই অংশ হিসেবে আগামী ১৯ অক্টোবর (শনিবার) আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার সংলাপে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব। শনিবার আমন্ত্রিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিষয়ে তিনি বলেন, গণফোরাম, এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, লেবার পার্টি, বিজেপির সঙ্গে সংলাপ হবে। এ ছাড়া আরও দু-একটি রাজনৈতিক দলকে হয়তো এ দফায় কিংবা পরবর্তী সময়ে আমন্ত্রণ জানানো হবে। সেটা প্রক্রিয়াধীন আছে।
সংলাপে জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ জানানো হবে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। অনেক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এরইমধ্যে আলোচনা হয়েছে। অন্য আর কার (দল) সঙ্গে আলোচনা হবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। উপদেষ্টা পরিষদ এটা নিয়ে কাজ করছে। পরবর্তী সময়ে আর কারও সঙ্গে আলোচনা করার সিদ্ধান্ত হলে সময়মতো জানিয়ে দেওয়া হবে।
দ্রব্যমূল্য সহনীয় করতে সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব। এর মধ্যে ডিমের শুল্ক ৩৩ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ কমিয়ে ১৩ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভোজ্যতেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট ভাঙা ও তাদের শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারা মূল্য কারসাজি করছে, মনোপলি পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, এ বিষয়ে সরকারকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করলে সেই বিষয়ে সরকার অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে। সরকারের পদক্ষেপে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে মনে করেন উপপ্রেস সচিব।
পরিবহন খাতের চাঁদাবাজির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আজাদ মজুমদার বলেন, পরিবহন ভাড়া কমানোর বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবে। আর পরিবহনের ভাড়ার সঙ্গে চাঁদাবাজিকে কাউন্ট করে এটি নির্ধারণ করা হয় না। চাঁদাবাজি অপরাধ। এটা নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই ভেবে দেখবেন। কারা চাঁদা চায়, কেন চাঁদা চায়—এ বিষয়ে তারা কাজ করবেন। কিন্তু ভাড়ার সঙ্গে চাঁদার বিষয়টি সম্পৃক্ত নয়।
৯৯ শতাংশ তৈরি পোশাক কারখানা চালু রয়েছে বলে জানিয়ে উপপ্রেস সচিব বলেন, দুই-একটা কারখানা নানাবিধ কারণে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষ এখন অনেকটাই প্রশমিত।
পোশাক কারখানায় চাঁদাবাজির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপপ্রেস সচিব বলেন, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নির্দেশ দেওয়া আছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংশ্লিষ্টদের মামলা, গ্রেফতার ও হয়রানি না করতে আদেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বলা হয়েছে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের ঘটনা খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিটি করতে। এতে সমন্বয়হীনতা আছে কিনা—এমন এক প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইতে পারেন। সরকারের অবস্থান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়ে দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই মুহূর্তে অগ্রাধিকার হচ্ছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার করা। যারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন তাদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। সেই লক্ষ্যে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং ভালোভাবে কাজ করছে।
সংলাপেও রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারকে প্রাধান্য দিয়েছে জানিয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, এটাই আমাদের কাছে এ মুহূর্তের অগ্রাধিকার।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি ও নাইম আলী।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে গত ৫ আগস্ট। তারপর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সরকার এরইমধ্যে দুই দফা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করেছে। তবে আগের দুই দফা ও আগামীতেও ‘ফ্যাসিবাদী শাসন’ ও ‘গণহত্যায়’ অভিযুক্ত আওয়ামী লীগকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং হবে না বলে আগেই সরকার জানিয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন