গ্রামাঞ্চলে অনেকে মনে করেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। সেইসঙ্গে বুদ্ধিও কমে। এজন্য বাচ্চাদের তেঁতুল খেতে বারণ করা হয়। এগুলো নিছক কুসংস্কার। বাস্তবে ঠিক উল্টো। তেঁতুল রক্ত পরিষ্কার করে। মস্তিষ্কে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তেঁতুলে আছে অনেক পুষ্টি। ভেষজগুণেও টইটম্বুর।
তেঁতুলের রস আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যাদুর মত কাজ করবে। সর্দি, কাশি, ফ্লু দুর করবে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। যা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। তেঁতুলে থাকা অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যগুলির কারণে শরীর থাকে জীবাণুমুক্ত।
সুতরাং আর এই ফলের থেকে দূরে দূরে থাকা চলবে না। বরং এর একাধিক চোখ ধাঁধানো উপকার সম্পর্কে জেনে এর সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি করুন। তাতেই আপনার সুস্থ থাকার পথ প্রশস্থ হবে।
ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়
ক্যানসার একটি ভয়ংকর অসুখ। এই রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর পাশাপাশি গোটা পরিবারের উপরই অন্ধকার নেমে আসে। তাই যেনতেন প্রকারে এই রোগটিকে প্রতিরোধ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে তেঁতুল।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এই ফল খেলে শরীরে উপস্থিত ফ্রি ব়্যাডিকেলস বা ক্ষতিকারক পদার্থ বেরিয়ে যেতে পারে। ফলে দেহের অন্দরে ক্যানসার কোষ জন্মের সুযোগ পায় না। তাই হেসেখেলে বাঁচতে চাইলে নিয়মিত এই ফল খাওয়া অভ্যাস করুন।
বাড়বে বুদ্ধির দাপট
বুদ্ধির গোড়ায় শান দিতে চাইলে সময় সুযোগ পেলেই তেঁতুল খেতে হবে। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বি ভিটামিন। এই উপাদান ব্রেন ও নার্ভের জন্য অত্যন্ত উপকারী। তাই নিয়মিত তেঁতুল খেলে বয়সজনিত ব্রেন ও নার্ভের সমস্যাও এড়িয়ে চলা যাবে। সুতরাং একটু বয়স্ক ব্যক্তিদের ডায়েটে মাঝে মাঝে তেঁতুল রাখতে ভুলবেন না যেন! শুধু এই কাজটা করতে পারলেই ফল পাবেন হাতেনাতে।
হাড় থাকবে সুস্থ-সবল
এখন কম বয়সেই অনেকে হাড়ের রোগের ফাঁদে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষত, অধিকাংশই হাড়ের ক্ষয়জনিত অসুখে আক্রান্ত। একবার এই অসুখের খপ্পরে পড়লে ভোগান্তি উঠছে চরমে। তাই বিশেষজ্ঞরা প্রথম থেকেই হাড়ের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে তেঁতুল। এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম ও ক্যালশিয়াম যা কিনা হাড়ের ক্ষয়রোধ করার কাজে একাই একশো।
হার্টের জন্য উপকারী
তেঁতুল ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হার্টের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এতে রয়েছে এমন কিছু পলিফেনলস যা কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইডস নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকরী। এই সমস্ত ক্ষতিকারক উপাদানকে স্বাভাবিকের গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে পারলে যে হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য ফিরবে, তা তো বলাই বাহুল্য! সুতরাং হার্ট অ্যাটাক, অ্যারিদমিয়া এবং হার্ট ফেলিওরের মতো রোগের ফাঁদ এড়িয়ে চলতে চাইলে নিয়মিত তেঁতুল খান। এতেই চটজলদি মিলবে উপকার।
ফ্যাটি লিভার রোগ সারায়
গবেষণায় দেখা গেছে, তেঁতুলের নির্যাস গ্রহণের ফলে লিভারের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস পায়। এতে থাকা প্রোকিয়ানিডিনগুলো লিভারের ফ্রি র্যা ডিকাল ক্ষতির বিরুদ্ধে লড়াই করে। তেঁতুল খনিজ সমৃদ্ধ। যা শরীরে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। এতে থাকা ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম লিভারের লিপিড সামগ্রীগুলোকে ফ্রি র্যা ডিকাল আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যারা ফ্যাটি লিভারের সমস্যায় ভূগছেন তারা নিয়মিত তেঁতুল খেতে পারেন। তেঁতুল খেলে দূর হয় ফ্যাটি লিভার।
শুধু ফ্যাটি লিভার নয়, যেকোনো ধরনের লিভারের সমস্যা থাকলে তেঁতুল সব থেকে উপকারী। তেঁতুল আমাদের শরীর থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াকে সঠিক রাখে। এছাড়া খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস করে। কিছুটা খোসা ছাড়ানো তেঁতুলের সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ভালোভাবে তৈরি হয়ে গেলে সেটি ছেঁকে নিন। এরপর ছেকে নেওয়া পানিতে সামান্য মধু মিশিয়ে সকাল-বিকাল দুই বেলা খান।
জীবাণু দমনে সিদ্ধহস্ত
আমাদের আশপাশেই রয়েছে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাসের মতো বিপজ্জনক সব জীবাণুর বসবাস। মুশকিল হলো, একটু সুযোগ পেলেই কিন্তু এইসব জীবাণু দেহের উপর আক্রমণ শানায়। তাই এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরের চারদিকে একটা অদৃশ্য রক্ষাকবচ তৈরি করে রাখাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে তেঁতুল। এতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা এসব জীবাণুর বিরুদ্ধে একাহাতে লড়াই করতে পারে। তাই নিয়মিত এই ফল খেতে ভুলবেন না।
ত্বক উজ্জ্বল এবং এক্সফোলিয়েট করে
তেঁতুলের পাল্প যুগ যুগ থেকে ত্বকের যত্নে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি স্ক্রাব হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তেঁতুলে আলফা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (এএইচএ) রয়েছে। এটি ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। তেঁতুলের এএইচএগুলোর মধ্যে রয়েছে সাইট্রিক অ্যাসিড, ম্যালিক অ্যাসিড, ল্যাকটিক অ্যাসিড এবং টারটারিক অ্যাসিড।
ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে এবং দাগমুক্ত উজ্জ্বল ত্বক পেতে তেঁতুলের রস ব্যবহার করুন। এই এএইচএগুলোর পাশাপাশি এতে চিনি এবং পেকটিনও রয়েছে। যা আপনার ত্বককে হাইড্রেট রাখে। ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রয়েছে। অকাল বার্ধক্য রোধ করতে তেঁতুল বেশ কার্যকর।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
ওজন কমানোর যাত্রায় তেঁতুল অনেক কার্যকর একটি উপাদান। বেশি ওজন হলে হৃদরোগ, কিডনি, লিভারের ব্যাধিগুলোর ঝুঁকি বেড়ে যায়। তেঁতুল খেলে শরীরের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়। তেঁতুল শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কাটাতে সাহায্য করে।
হজম জনিত সমস্যা দূর করে
নিয়মিত তেঁতুল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এটি ফাইবার সমৃদ্ধ। তাই আমাদের অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করে। প্রাচীনকাল থেকে তেঁতুল কোষ্ঠকাঠিন্যর ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ম্যালিক এবং টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। ডায়রিয়াজনিত পেটে ব্যথা কমাতে তেঁতুলের ছাল এবং মূলের নির্যাস কার্যকরভাবে নিরাময় করতে পারে।
হার্টের স্বাস্থ্যর উন্নতি করে
তেঁতুল রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ। এটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল হ্রাস করে। ফলে হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
তেঁতুলের পাল্পে কার্ব-ব্লকিং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি শরীরকে কার্বোহাইড্রেট শোষণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য তেঁতুল বেশ উপকারী। এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমায়। তেঁতুলে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা অগ্ন্যাশয়কে প্রদাহজনক ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে
তেঁতুলে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর ফলে এটি বিভিন্ন অঞ্চলে প্রধান ঔষধি উদ্ভিদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আফ্রিকান উপজাতিরা, প্রাচীন কাল থেকে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় জন্য এটি ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে অনেক সময় জ্বর হয়। এক্ষেত্রে, তেঁতুলের রস বেশ কার্যকর।
জয়েন্টে ব্যথা দূর করে
তেঁতুলে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য ফ্রি র্যা ডিকালগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এটিতে প্রচুর পরিমাণে টারটারিক অ্যাসিড রয়েছে। যা একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। তেঁতুল গলা ব্যথা বা জয়েন্টে ব্যথা দূর করতেও সহায়তা করে।
চোখের জন্য ভালো
তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়। এটি কনজেক্টিভাইটিসের চিকিৎসায় সহায়তা করে। প্রাচীনকালে চোখ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো মোকাবিলা করার জন্য তেঁতুল ব্যবহৃত হত।
চুলের যত্নে
তেঁতুল চুলের যত্নের জন্য একটি কার্যকর উপাদান। মাথার ত্বকে তেঁতুলের রস লাগান। এটি ফলিকলের বৃদ্ধি ঘটাবে। চুলকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। মাথার ত্বকের ফলিকলের বৃদ্ধি ঘতায়। তেঁতুলে থাকা ভিটামিন সি চুলকে ক্ষতিকারক ইউভি রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারে। চুলকে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করে তুলে।
শুক্রাণুর সংখ্যা বাড়াতে পারে
পুরুষেরা বন্ধ্যাত্বের শিকার, শুক্রাণু সংখ্যা বাড়াতে পারে তেঁতুল। তেঁতুলের ভিটামিন সি কন্টেন্টে সমৃদ্ধ এবং পুরুষদের শুক্রাণুর আয়ু বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এটিতে একটি খুব সমৃদ্ধ স্বাদ রয়েছে যা মনকে উদ্দীপিত করতে পারে এবং সেক্স ড্রাইভকে উন্নত করতে পারে।
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন