দেশে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে চালের আমদানি শুল্ক কমানোর কথা ভাবছে সরকার।
অর্থ, বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক বন্যায় ধান চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ সিদ্ধান্তের কথা ভাবা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লাসহ প্রধান কৃষি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বর্তমানে রংপুর, শেরপুর, লালমনিরহাট, নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ বন্যার কবলে পড়েছে। এই অঞ্চলগুলো দেশের ধান উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে স্থানীয় বাজারে চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তারা সঙ্কটে পড়েছেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন ধরনের চালের দাম বেড়েছে ৮-১০ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ অবস্থায় সরকারের লক্ষ্য চাল আমদানি করে দাম নিয়ন্ত্রণ ও বাজার স্থিতিশীল করা। চালের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’
বর্তমানে চাল আমদানিতে ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। এই শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। গত ২৯ সেপ্টেম্বর যুগ্ম সচিব লুৎফর রহমান এনবিআরকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠান।
উন্নত ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষকদের প্রণোদনা দিতে চলতি বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান ও ১ কোটি ৪৭ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
৩১ আগস্ট পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৭০ টন ধান ও ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৪৯৭ টন চাল। বর্তমানে সরকারি গুদামে ১২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ টন চাল ও ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৯২৮ টন গম মজুদ রয়েছে।
তবে বন্যার পর উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে চালের দাম ব্যাপক হারে বেড়েছে। এ কারণে খাদ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য অধিদফতর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদফতর এবং স্থানীয় প্রশাসন দাম নিয়ন্ত্রণে বাজার নজরদারি বাড়িয়েছে। সুষ্ঠু বাজার পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি অবৈধ মজুতের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। এরপরও খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয় আরো জানায়, সম্প্রতি ১৪টি জেলায় বন্যায় আউশ, আমনের চারা এবং আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চালের চাহিদা বাড়ার সাথে সরবরাহ কমে গেলে দাম আরো বাড়তে পারে। উপরন্তু ভারতের গম রফতানি নিষেধাজ্ঞা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গম আমদানির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম বৃদ্ধি শস্যের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে।
এ প্রেক্ষাপটে চালের বাজার স্থিতিশীল করা এবং সরকারের মজুদ বাড়ানো অপরিহার্য। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানিরও প্রয়োজন হতে পারে। এরই মধ্যে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন পেয়েছে সরকার।
যদিও বর্তমানে স্থানীয় বাজারের তুলনায় বৈশ্বিক বাজারে চালের দাম বেশি। তবে বিদ্যমান চালের আমদানি শুল্ক ৬২.৫০ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে কমানোর সিদ্ধান্তকে দাম স্থিতিশীল রাখতে একটি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে চালের আমদানিতে ২৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক, ২৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ শুল্ক, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর, ৫ শতাংশ অগ্রিম ট্যাক্স, ১ শতাংশ বীমা, ১ শতাংশ ল্যান্ডিং চার্জ এবং ০.৫ শতাংশ ডি এফ ভ্যাট প্রযোজ্য।
সম্প্রতি ভারত তাদের চাল রফতানি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করেছে। বাংলাদেশ যদি তার আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনে, তাহলে ভারত থেকে চাল আমদানির ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ সম্মিলিত শুল্ক প্রযোজ্য হবে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, এই শুল্ক হ্রাস আমদানিকারকদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে উৎসাহিত করবে। সরকারি-বেসরকারি আমদানিতে বাসমতি ছাড়াই অন্যান্য সিদ্ধ চাল ও সুগন্ধি ছাড়াই আতপ চালের শুল্ক কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে অনুরোধ জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সূত্র : ইউএনবি
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন