অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনবান্ধব পুলিশ গঠন করার চেষ্টা চলছে। দেশের সব থানার কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। তবে ৫ আগস্ট-পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের কারণে পুলিশের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। রাজারবাগে ক্ষোভের চরম বিস্ফোরণ ঘটনান বাহিনীর কিছু সদস্য।
সেই থেকে পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাসহ পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮৭ জন সদস্য গত দুই মাসেও কর্মস্থলে যোগ দেননি। তাঁদের অনেকে এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যাঁরা চাকরিতে ফিরতে পারবেন না তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে হওয়া ফৌজদারি মামলার তদন্ত ও বিচারকাজ আইন অনুযায়ী চলছে।
সব মিলে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে এনে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ মহাপরিদর্শক ময়নুল ইসলাম বলেন, চলমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে। পুলিশও মাঠ পর্যায়ে তাদের স্বাভাবিক কাজ শুরু করেছে।
জানা গেছে, শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর সারা দেশে পুলিশের ওপর ব্যাপক হামলা হয়।
ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা। হত্যা করা হয় অনেক পুলিশ সদস্যকে। এর পর থেকে অনেক পুলিশ সদস্য উধাও হয়ে যান।
ওই পরিস্থিতিতে রাজারবাগে ভুক্তভোগী মাঠ পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে নতুন আইজিপির বৈঠক শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুরে। কিন্তু পরিস্থিতি এতটাই খারাপ ছিল যে সেটা স্বাভাবিক করতে সময় লেগে যায় অনেকটা।
এক পর্যায়ে অনিয়ম দূর করার পাশাপাশি পুলিশ হত্যার বিচার চেয়ে মুহুর্মুহু স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধ পুলিশ সদস্যরা। এ সময় বিক্ষোভের মুখেই নতুন আইজিপি ময়নুল ইসলাম এক পর্যায়ে রাজারবাগ ছেড়ে চলে যান। তবে পরে আইজিপি সেখানে ফিরে এসে বলেন, ‘আপনাদের সব দাবিদাওয়া পূরণ করা হবে।’
এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। হত্যাযজ্ঞে জড়িত থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ তৈরি হয় পুলিশের বিরুদ্ধে। ৫ আগস্টের পর নিরাপত্তার স্বার্থে সেনানিবাসে আশ্রয় নেন ৫১৫ জন পুলিশ সদস্য-কর্মকর্তা।
এই পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গত ১৮ সেপ্টেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেন, পুলিশে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তবে যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি, লুকিয়ে আছেন, তাঁদের আর যোগ দিতে দেওয়া হবে না।
এরপর গত ১ অক্টোবর সচিবালয়ে মন্ত্রণালয় সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগদান করেননি, তাঁদের অপরাধী হিসেবে গণ্য করা হবে।’
কতজন পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘১৮৭ জনের মতো ছিল। এর পরে মনে হয় আর কেউ যোগদান করেননি। যাঁরা যোগ দেননি, তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে। তাঁদের আমরা পুলিশ বলব না, তাঁরা অপরাধী হিসেবে গণ্য হবেন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন