নির্বাচন অনুষ্ঠানে যত বিলম্ব হবে সমস্যা ততই বাড়বে। নয়া দিগন্তকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন অভিমত ব্যক্ত করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিরাজমান নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচনের চর্চা বাংলাদেশে কখনো হয়নি। এটা এই দেশে কাজে দেবে না। এটা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা এটাকে সমর্থন করব না।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজনীতির অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ। বিএনপির সঙ্কটকালীন এবং সঙ্কট উত্তরণের মহাসচিব হিসেবে তাকে অনেকে বিবেচনা করে থাকেন। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার আমলে তিনি একাধিকবার কারাগারে কাটিয়েছেন। প্রায় এক দশক ধরে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এই দীর্ঘ সময়টা রাজনীতি তথা বিএনপির জন্য ছিল খুবই কণ্টকাকীর্ণ। কঠিন এই সময়ে তিনি অত্যন্ত বিশ্বস্ততা ও দক্ষতার সাথে দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানে এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে স্বপ্ন দেখছেন তিনি। নয়া দিগন্তকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সাম্প্রতিক নানা বিষয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন।
সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :
নয়া দিগন্ত : ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আপনিই প্রথম যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করেছেন। নির্বাচন কি দ্রুত সময়ের মধ্যে হবে? যেখানে সরকার কোনো সময়ের কথা এখনো উল্লেখ করেনি এবং সেনাপ্রধান এক সাক্ষাৎকারে ১৮ মাসের কথা উল্লেখ করেছেন।
মির্জা ফখরুল : সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে এত বেশি জঞ্জাল রাষ্ট্রের ভেতরে বিগত সরকার করে গেছে যে, জঞ্জালগুলো না সরিয়ে তো সুষ্ঠু নির্বাচন করা যাবে না। আমরা এখন ভেতরে ঢুকে ঢুকে দেখছি একেবারে সব জায়গায় জঞ্জাল। একটি ডিপ স্টেট তৈরি করে ফেলেছে সব জায়গায়। সব জায়গায় বিষাক্ত অবস্থা তৈরি করে ফেলেছে। এখন সংস্কারগুলো ঘোষণা করেছে এই সরকার। আমরাও দু’বছর আগে ৩১ দফা দিয়ে এই সংস্কারগুলো চেয়েছি। সংস্কারগুলো করতে যাদেরকে দেয়া হয়েছে, তারাও যোগ্য মানুষ। একই সাথে জনগণ কি চায়, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো কী চায়, তাদের কী প্রস্তাব, সেগুলো জানতে হবে। একটি ঐকমত্য তৈরি করতে হবে। ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা সংস্কার গুলো চাই, সবাই চায়। সংস্কারগুলো আবার পরে সংবিধানে আনতে হবে। পরিবর্তিত বিষয়গুলো সংবিধানে আনতে হবে। আর সংবিধানে আনতে হলে একটা নির্বাচন দরকার হবে, সংসদ দরকার হবে। সে জন্য দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। আমরা যৌক্তিক সময়ের কথা বলেছি। যৌক্তিক সময়টা অস্পষ্ট রেখেছি। কারণ নির্বাচন যত দ্রুত করবেন তত সমস্যা কম হবে। নির্বাচন যত বিলম্বিত করবেন তত সমস্যা আরো বাড়বে। যারা বিপ্লবের বিরুদ্ধে, পরিবর্তনের বিরুদ্ধে, ফ্যাসিবাদের পক্ষে তারা কিন্তু সুযোগটা ব্যবহার করতে চাইবে।
নয়া দিগন্ত : ১৮ মাস কি তাহলে যৌক্তিক সময়?
মির্জা ফখরুল : এটা এ মুহূর্তে বলা খুব মুশকিল। আমি আপনাদের সুনির্দিষ্ট কোনো সময় বলতে চাই না। যদি আগে হয়ে যায় তাহলে ভালো।
নয়া দিগন্ত : রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেবেন ?
মির্জা ফখরুল : নির্বাচন প্রক্রিয়া, প্রশাসন ও বিচার বিভাগ- এই তিনটাকে যদি আপনি সংস্কার করে ফেলতে পারেন, নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেন, যাকে আমরা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলছি, উপযুক্ত পরিবেশ বলছি- সেটি করে ফেলতে পারলে ইলেকশনটা খুব সুন্দরভাবে করা যাবে। নির্বাচন হয়ে গেলে পার্লামেন্ট হয়ে গেলে সেখানে সরকারের বাকি যে বিষয়গুলো থাকবে সেখানে প্রস্তাব এলে, যদি আমরা সংসদে থাকি তবে সেই প্রস্তাব নিয়ে আসব।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচিত হলে আপনারা জাতীয় সরকার গঠন করার কথা বলছেন। জাতীয় সরকার গঠনের ফরম্যাট কী হবে? সেখানে কারা থাকবে?
মির্জা ফখরুল : আসলে জাতীয় সরকার ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে একটা জটিল প্রক্রিয়া। এখানে যারা অংশগ্রহণ করে তাদের একটা ব্যাপার আছে, যদি আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করে তাদেরকে নিয়ে তো সরকার গঠন করা যাবে না। আমাদের চিন্তা ও জনগণের চিন্তা হচ্ছে আওয়ামী লীগ হচ্ছে রাষ্ট্রদ্রোহী, দেশবিরোধী কাজ করেছে। তাকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমাদের কথা সুনির্দিষ্ট আছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে সরকার গঠিত হবে।
নয়া দিগন্ত : জাতীয় সরকারে কি জামায়াতে ইসলামী থাকবে?
মির্জা ফখরুল : তারা যদি সেভাবে আসে, তাহলে আন্দোলনকারী দলগুলো চিন্তা করে দেখবে। এটা নিয়ে এখন চূড়ান্ত কথা বলতে চাই না। তখন আমরা আলোচনা করে দেখব।
নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগকে অনেকে নিষিদ্ধ করার দাবি তুলছে। আপনার মতামত কি?
মির্জা ফখরুল : আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের অংশগ্রহণ করতে না দেয়ার বিষয়ে আমি একমত না। আপনি করতে দেবেন না কেন? গণতন্ত্র চাইলেন, পুরনো রাজনৈতিক দল তারা যদি নির্বাচন করতে চায় তাহলে জনগণ বিচার করবে তারা থাকবে কি থাকবে না। তবে আমি আওয়ামী লীগকে যতটুকু চিনি, বুঝি, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ১৯৭৫ সালের এত বড় পরিবর্তনের পরও তারা নির্বাচন বর্জন করেনি। আমি মনে করি, ওই একটা দিকে আওয়ামী লীগের কৌশল সঠিক। এই ধরনের বুর্জোয়া দলগুলোর নির্বাচন বর্জন সব সময় সঠিক হয় না। কখনো কখনো আন্দোলনের স্বার্থে বর্জন করতে হয়। যেমন আমরা করেছি, সঠিকভাবে করেছি। দল যখন খুব খারাপ করে তখন তাকে টেনে ধরার কয়েকটি রাস্তা থাকে। তার মধ্যে নির্বাচন একটা রাস্তা, যে রাস্তা দিয়ে দলকে পরিচালনায় করা যায়। দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে একটা প্রবণতা হয়েছে ও নির্বাচন করতে পারবে না, ওকে নিষিদ্ধ করো। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা কখনো ঠিক হয়নি। তার প্রমাণ কী হল, জামায়াত সামনে চলে এল। এই ধরনের চিন্তাগুলো আমরা উপর থেকে চাপিয়ে দেবো না। যদি প্রমাণিত হয় তারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত, এ ধরনের একটা খসড়া তৈরি হয়েছে। ঠিক আছে এটা করতে পারে। কিন্তু গণতন্ত্রের দিক থেকে কতটা সঠিক? আমার ব্যক্তিগত মত গণতন্ত্রকে গণতন্ত্রের মতো চলতে দিতে হয়। গণতন্ত্রের চর্চা রাখতে হবে। একটা দলকে আমি নিষিদ্ধ করলাম তারপর সে যে অন্য চেহারা নিয়ে ফিরে আসবে না তার নিশ্চয়তা কি? যেটা এখন পশ্চিমা বিশ্বে দেখা যাচ্ছে, ইউরোপে দেখা যাচ্ছে। ফ্যাসিবাদের সমর্থনকারী দলগুলো সামনের দিকে চলে আসছে।
নয়া দিগন্ত : তাহলে আমরা বলতে পারি আপনি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষে না।
মির্জা ফখরুল : আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে না।
নয়া দিগন্ত : নির্বাচন নিয়ে বিএনপির প্রস্তুতি কী?
মির্জা ফখরুল : আমরা কিন্তু সব সময় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত থাকা একটা দল। কারণ এই দল ক্ষমতায় যাওয়ার দল, ক্ষমতায় যাবে। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিতে চাই। এক একটা আসনে আমাদের প্রার্থী সব সময় থাকে পাঁচজন-দশজন, সে ক্ষেত্রে আমাদের সমস্যা হয় না। বিএনপি তো এমন দল না যে নির্বাচনের জন্য গোছাতে হবে। আন্দোলন মানেই দল গোছানো। আন্দোলন-সংগঠন-নির্বাচন- তিনটি একসূত্রে গাথা।
নয়া দিগন্ত : অনেকে বলছেন, ফ্যাসিবাদী সরকার সংবিধানকে নিজেদের মতো পরিবর্তন করে শেষ করে ফেলেছে। আপনার মন্তব্য কী?
মির্জা ফখরুল : সংবিধান তো অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে। এই সংবিধান তো শেষ, একেবারে শেষ। কিছু কিছু বিষয় আছে যা কখনো পরিবর্তন করা যাবে না। করতে গেলে আপনার ফাঁসি হবে। এমনভাবে ফ্যাসিবাদী সরকার এটাকে সাজিয়েছে।
নয়া দিগন্ত : সংবধান কি তাহলে নতুন করে লিখতে হবে?
মির্জা ফখরুল : হ্যাঁ, এটা নতুন করে লিখা উচিত। নতুন করে লিখতে গেলে জাতীয় পরিষদ লাগবে। সময় লাগবে। ওই সময়টা দিতে হবে। ন্যূনতম সংশোধনী এনে এখন নির্বাচন করা দরকার। পরে নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
নয়া দিগন্ত : আন্দোলনে কার কতোটুকু অবদান তা নিয়ে এক ধরনের আলোচনা শোনা যায়- এটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
মির্জা ফখরুল : এই আন্দোলনের মূল বিষয়টা অনেকেই হয়তো বুঝতে পারছে না। আন্দোলনের মূল বিষয়টা ছিল যে, সাধারণ জনগণ পরিবর্তন চায়। তারা সরকারের উপরে বিরক্ত ছিল, এ আন্দোলনে বিএনপিও ছিল। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা লড়াই করেছি। এ সরকারের বিরুদ্ধে আমরা কী করিনি! তার মানে এই না বিএনপি সব করে ফেলেছে। আমরা এই আন্দোলনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলাম, বিশাল আকারেই ছিলাম। আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের হয়েছে বলে আমার জানা নেই। যারা এখন কৃতিত্ব নেয়ার কথা বলে বেড়াচ্ছেন এটা একটা সংকীর্ণ রাজনীতি। কারণ এ আন্দোলনে এমন সব পরিবারের সদস্যরা, এমন সব পরিবারের সন্তানেরা রাস্তায় নেমেছিল, যারা কখনো কোনো আন্দোলনে, সংগ্রামে, মিটিং-মিছিলে যায়নি। এটি ছিল সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত একটি আন্দোলন। কারণ মানুষ দেখতে পাচ্ছিল যে এ সরকার খুনি একটা সরকার, এই সরকারকে আর রাখা যাবে না। আমি মনে করি, এ সরকার হটানোতে সবার অবদান আছে।
নয়া দিগন্ত : ৫ আগস্টের পর কোন কোন পক্ষ বিএনপিকে টার্গেট করে নেতিবাচক বক্তব্য দিচ্ছে। এর কারণ কী বলে মনে করেন?
মির্জা ফখরুল : এর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুটো পরিপ্রেক্ষিতই আছে। আমরা ওয়ান ইলেভেনের গন্ধ পাচ্ছি। বিরাজনীতিকরণের গন্ধ পাচ্ছি। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। দেখুন, রাজনীতি বাদ দিয়ে বাংলাদেশ সম্ভব না। আমরা এখানে বিরাজনীতিকরণ করব, আর আমলাতন্ত্রকে দিয়ে দেশ চালাব? এভাবে দেশ চলবে না। দেশ চলতে হবে জনগণের সাথে সম্পৃক্ত আছে যারা তাদেরকে নিয়ে। সে জন্য গণতান্ত্রিক পন্থা হচ্ছে উৎকৃষ্ট পন্থা। গণতন্ত্রকে তার পথে চলতে দিন। সবই যে সুন্দর হবে তা ঠিক না। পশ্চিমা বিশ্ব সবাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশ চালাচ্ছে। তার মানে এই নয়, তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সব কিছু পারফেক্ট আছে? হিউম্যান সিভিলাইজেশনে বা মানব সভ্যতায় সব সময় সব কিছু সঠিক হয় না। সবই সুন্দর, পবিত্র হয় না। সম্ভব না এটা। ক্ষমতার বেলায় এটা মোটেও হয় না। এখানে কথা হল, আপনাকে ডেমোক্র্যাটিক মাইন্ডেড (গণতন্ত্রমনা) হতে হবে। চাপিয়ে দিতে চাইলে ডিক্টেটরের (স্বৈরাচার) সাথে পার্থক্য কোথায়?
নয়া দিগন্ত : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আপনারা কোন প্রক্রিয়ায় এগোচ্ছেন?
মির্জা ফখরুল : ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেশে ফেরার দুইটা পথ আছে। এখানে প্রক্রিয়ার প্রথম বিষয়টা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো প্রত্যাহার করা। মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের অঙ্গীকার আছে। মামলা প্রত্যাহারে তারা ইতোমধ্যে কমিটি করে দিয়েছে। আমরা সরকারকে সব মামলা প্রত্যাহারের চিঠি দেবো। ২০০৭ সালের পর থেকে যত মামলা আছে সব প্রত্যাহার করতে হবে।
নয়া দিগন্ত : জামায়াত-বিএনপির দূরত্ব নিয়ে কেউ কেউ কথা বলছেন। আপনি কীভাবে দেখেন?
মির্জা ফখরুল : দূরত্ব নেই। বিএনপি এবং জামায়াতের রাজনীতি সম্পূর্ণ আলাদা। চিন্তা, আদর্শ ও উদ্দেশ্যও আলাদা। জামায়াত আর বিএনপিকে ব্র্যাকেট করার চেষ্টা করে কারা? যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তারা এটা করে। জামায়াতের সাথে আমরা আন্দোলন সংগ্রামের স্বার্থে জোট করেছিলাম, নির্বাচনের জন্য জোট করেছিলাম। এটা গণতান্ত্রিক চর্চা। আমাদের কৌশল নির্বাচনে জেতার জন্য, আন্দোলনের জয়ের জন্য। সে জন্য আমরা জোট করেছি। এইবার তো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটানোর জন্য বাম ডান সবার সাথেই আমরা জোট করেছি।
নয়া দিগন্ত : ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের একটি অংশ রাজনৈতিক দল গঠন করতে চায় বলে শোনা যাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল : যেকোনো রাজনৈতিক দলই আন্দোলন সংগ্রাম থেকে উঠে আসে। এটা তার মূল ভিত্তি। সরকারের প্রটেকশনে দল গঠন করতে হলে আলাদা বিপদের বিষয়ও থাকে। এখানে দল গঠনের পর রাজনীতিটাকে প্রচার করা মুখ্য বিষয়।
নয়া দিগন্ত : আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনা গণরোষে পালিয়ে গেছেন, এমন প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসাটা কি খুব সহজ হবে?
মির্জা ফখরুল : দেখুন, আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছিলাম যে, তারা রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। দলটি জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তারা আমলাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। আওয়ামী লীগ এখন তাদের মূল শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং রাজনীতিতে আবার তারা নাম নিয়ে ফিরতে আসতে পারেন, নির্বাচনে ফিরে আসতে পারেন। কিন্তু জনগণের মধ্যে তারা কতটুকু ফিরে আসতে পারেন- সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আপাতত অদূর ভবিষ্যতে তাদের সফলভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা কম দেখছি।
নয়া দিগন্ত : প্রশাসন এখনো স্বৈরাচারমুক্ত হয়নি বলে অনেকে বলছেন। আপনার পর্যবেক্ষণ?
মির্জা ফখরুল : আমরা লক্ষ্য করছি প্রশাসনের মধ্য থেকে একটা পক্ষ যারা গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল, সমর্থন দিয়েছে, ফ্যাসিবাদী সরকারের হয়ে কাজ করেছিল তাদেরকে রক্ষা করছে। তাদের সম্পদের কোনো হিসাব এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। তদন্ত হয়নি কার কাছে কত সম্পদ আছে।
নয়া দিগন্ত : বর্তমান সরকার দুই মাস অতিক্রম করছে। তারা কি গুছিয়ে উঠতে পেরেছে?
মির্জা ফখরুল : আমি আগেই বলেছি আওয়ামী লীগ সরকার একটা ‘ডিপ স্টেট’ তৈরি করে ফেলেছিল। সর্বক্ষেত্রে তারা নিজস্ব লোক নিয়োগ দিয়েছে। যেখানে যাবেন সেখানেই তাদের লোক পাবেন। সুতরাং এ জঞ্জালগুলো পরিষ্কার করা এত সহজ হবে না। একটু সময় লাগবে। ১৭ বছরের জঞ্জাল রাতারাতি বদলে ফেলা সম্ভব হবে না।
নয়া দিগন্ত : বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল করার কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
মির্জা ফখরুল : আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমাদের যত দ্রুত সম্ভব কাউন্সিল প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত- সেটা নির্বাচনের আগেই করা যেতে পারে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন