নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন আগেও হয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের সুফল আমরা পাইনি। এর কারণ হলো আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
বুধবার (০২ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘জাতীয় জরিপ ২০২৪: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন তিনি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, দেশ গঠনে নাগরিক সমাজ থেকে রাজনৈতিক দল সবাই যদি দায়িত্বশীল আচরণ করে, তারপর কি হবে? এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন না হলে রাজনৈতিক দলগুলো যে-সব অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় গিয়ে সেসব বাস্তবায়ন না করলে সবই হবে পণ্ডশ্রম। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে চাইলে আমাদের মন-মানসিকতা থেকে রাজনৈতিক দল সবকিছুই গণতান্ত্রিক হতে হবে।
‘জাতীয় জরিপ ২০২৪: বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে নাগরিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক জরিপের ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠান
তিনি বলেন, অতীতে আমাদের কয়েকটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ১৯৯১ সালে, ১৯৯৬ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে। ২০০১ সাল আর ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও নিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকদের মতে সেগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই ছিল। কিন্তু তার সুফল আমরা পাইনি। এর সুফল পেতে হলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে।
সুজন সম্পাদক আশা প্রকাশ করেন, ভেঙ্গে পড়া রাষ্ট্র ব্যবস্থা মেরামত করতে বিভিন্ন সংস্কার কমিশন সুপারিশ দিবে যা সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঐক্যমতে পৌঁছার চেষ্টা করবে। এরপর হয়ত একটি রোডম্যাপের মাধ্যমে নির্বাচনের একটা সম্ভাব্য সময়কাল নির্ধারিত হবে।
”পূর্বেও রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ হয়েছিল কয়েকবার বিভিন্ন রূপরেখার মাধ্যমে। কিন্তু আমরা তা অর্জন করতে পারি নি। এবারও যদি এ অর্জন (জুলাই অভুত্থ্যান) ছিনতাই হয়ে যায় তা দেশের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে। আমার তরুণদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে চিন্তা করতে হবে।”
জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পূর্বেও রাষ্ট্র মেরামতের সুযোগ হয়েছিল কয়েকবার বিভিন্ন রূপরেখার মাধ্যমে। কিন্তু আমরা তা অর্জন করতে পারি নি। এবারও যদি এ অর্জন ছিনতাই হয়ে যায় তা দেশের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে। আমার তরুণদের জন্য, আমাদের ভবিষ্যতের জন্য সবাইকে চিন্তা করতে হবে।
বিভিন্ন সরকারের সময়েই জরিপে সরকারের প্রতি ব্যাপক আস্থা দেখা যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের কাছে মানুষের আশা থাকে আকাশ চুম্বী। এই আশা প্রত্যাশার একটা বিপরীত দিকও আছে। এটাকে আমরা বলি 'এক্সপেকটেশন ম্যানেজমেন্ট'। মানুষের যে আকাশচুম্বী প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে সেই এক্সপেকটেশনটা ম্যানেজ করাটাই কিন্তু এই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, এক্সপেকটেশন ম্যানেজ করতে হবে দুই ভাবে। একটা হলো ‘থ্রু ডেলিভারি’। মানুষ অনেক কিছু চায়, মানুষের এই চাওয়াটা পূরণ করতে হবে। আরেকটা হলো ‘কমিউনিকেশন’। নিয়মিত কমিউনিকেশনের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে মানুষের মধ্যে যেন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি না হয়, মানুষ যাতে বিপথগামী না হয়। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে বহুভাবে বহুরকম প্রচারণা চালানো হচ্ছে যাতে মানুষ সহজেই বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে।
সেমিনারে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভর্নেন্স (এসআইপিজি)-এর একটি জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। গত ৯ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ৮টি বিভাগের ১৭টি জেলায় মোট ১ হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এ জরিপ করা হয়। এতে দেখা যায়, ৯৬ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত করার সমর্থন করেন। ৪৬ শতাংশ রায় দেয় সংবিধান সংস্কার এবং ১৬ শতাংশ অংশগ্রহণকারী সংবিধান নতুন করে তৈরির পক্ষে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন