সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় আগুনে পুড়ে একই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনা দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও ইতিমধ্যে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে এলাকাবাসীসহ সচেতন মহলে। সেই রহস্যই খুঁজছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (০১ অক্টোবর) উপজেলার শিমের খালের আশ্রয়ণ প্রকল্পে দিনভর নানা আলামত সংগ্রহ করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
রহস্যময় অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা বের করতে পুলিশের দুটি বিশেষ শাখা সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ও পিবিআইকে কাজে লাগানো হয়েছে। তারা ঘটনাস্থলে কাজ করছেন।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে জেলার ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের সোনামড়ল হাওড়ের পশ্চিম পাড়ের শিমের খাল গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায় এমারুল (৫০), তার স্ত্রী পলি আক্তার (৪৫) এবং তাদের চার শিশুসন্তান ওমর ফারুক (৩), ফাতেমা বেগম (৫), পলাশ (৯) ও ফরহাদ (৭)।
নিহত এমারুল উপজেলার জয়শ্রী ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি পেশার একজন জেলে।
স্থানীয় এলাকাবাসী সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের সুরক্ষিত একটি স্টিলের দরজায় ভেতর থেকে তালা দিয়ে ঘুমাতে যান। তালা দেওয়া থাকায় আগুন লাগার পর ভেতর থেকে কেউ বের হতে পারেন নি।
স্থানীয়রা জানান, অভাব অনটনের কারণে এমারুল ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত।
এদিকে দরজা জানালা ঠিক থাকা অবস্থায় ভেতর থেকে তালা মেরে ঘুমানোর কী প্রয়োজন সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন পুলিশসহ স্থানীয়রা।
ধর্মপাশার সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আলী ফরিদ বললেন, অগ্নিদগ্ধ হয়ে ছয় জনের মৃত্যু নিয়ে আমাদের সন্দেহ আছে। যেহেতু প্রত্যক্ষদর্শী কেউ নেই, তাই পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমানেই রহস্য উদঘাটন করতে হবে আমাদের। তবে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগার মতো কিছু পাওয়া যায়নি। পেছনের রান্নাঘরও অক্ষত আছে।
ফরেনসিক আলামত নেওয়ার জন্য সিলেট থেকে স্পেশাল দুটি টিমকে আনা হয়েছে। ঘরের দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল। আমি নিজে এসে দরজার ভেতর দিকে থাকা তালা উদ্ধার করেছি। হয়ত ঘরের ভেতরেও কিছু একটা ঘটতে পারে। তদন্ত করে ঘটনা বের করার চেষ্টা হচ্ছে।’
পুলিশ সুপার আ. ফ. ম আনোয়ার হোসেন খান জানান, মর্মস্পর্শী এই ঘটনাটির আগে এমারুল প্রতিদিনের মত খেয়ে রাতে চার পুত্র কন্যাসহ ঘুমোতে যান। রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে তারা কেউই জীবিত নেই। আগুনের ভয়াবহতায় লাশও এখন চেনার কোনো উপায় নেই। সিআইডি, পিবিআই ও পুলিশ ঘটনার তদন্তে কাজ শুরু করেছে।’
নিহত এমারুলের মা তাসমিনা আক্তার আহাজারি করতে করতে বলেন, ‘ও আল্লা কেনে যে আমার পুতের এই সর্বনাশ হইল, পুরা বংশই শেষ হইয়া গেল।’
এমারুলের বড় ভাই রাহাত আলী বলেন, ‘দেশ বিদেশ ঘুরে রোজগার করে চলি আমরা। তাদের কোনো সমস্যা থাকলে, বলত আমরা তাদের দেখতাম।’
প্রতিবেশী শাপলার বাবা কামাল হোসেন বলেন, ‘পাড়ার লোকজন এনে কয়েকশ কলস পানি দেওয়া হয়। কিন্তু আগুন নিভানো যায়নি। দরজা ভেঙে দেখা যায় তারা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
এমারুল ও তার স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাঁটি হতো বলে জানান কামাল হোসেন।
একই গ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী বাবুল মিয়া বলেন, ‘প্রতিবেশী কামালের ডাক শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখি এমারুলের ঘরের ভেতরে আগুন জ্বলছে। পরে দরজা ভেঙে দেখা যায় সবাই পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
একই আশ্রয়ণ পল্লির অন্যপাশে বসবাসকারী এমারুলের শ্বশুর চেরাগ আলী জানান, ‘এমারুল সোমবার তাদের দাওয়াত দিয়েছিল। কিন্তু দাওয়াতে যেতে পারিনি। তার স্ত্রী মেয়ের বাড়ি থেকে তরকারি নিয়ে এসেছিল। এমারুল ও তার স্ত্রীর মধ্যে টুকটাক ঝগড়াঝাঁটি হতো আবার নিজেরাই মীমাংসা করত। তবে এমন কোনো ঝগড়া হয়নি, যার জন্য এতো বড় ঘটনা ঘটাবে ওরা।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন