এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের শুনানি চলাকালে আজ বুধবার আদালতে হট্টগোল করেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। এ সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আপনাদের (আইনজীবী) আচরণে আমি লজ্জিত।’
শুনানির শুরুতে বিচারক বলেন, ‘আপনারা কেউ আমার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না। কোর্ট চলাকালীন সময়ে এদিক থেকে একজন, ওই দিক থেকে একজন, এভাবে কথা বললে আমি চলে যাব।’
এরপর বিচারক বলেন, ‘গ্রেপ্তার কখন করেছেন? এর মাঝে জিজ্ঞাসাবাদ হয়নি? তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে?’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারের মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে তার পরিচয় আছে।’ বিচারক বলেন, ‘পরিচয় থাকলেই তাকে রিমান্ডে পাঠাতে হবে?’
এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা কিছুই বলতে পারেননি। এরপর আদালতের সামনে হট্টগোল শুরু করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। আইনজীবীরা বলেন, ‘আপনি এতো প্রশ্ন কেন করছেন? এ সময় আরও কয়েকজন কথা বলে ওঠেন।’
অতিরিক্ত আওয়াজ সৃষ্টিকারী একজন আইনজীবীর পরিচয় জানতে চান বিচারক। তখন ওই আইনজীবী বলেন, ‘জজ কোট বারের সিনিয়র আইনজীবী।’ বিচারক বলেন, ‘নাম বলেন।’ এ সময় আশেপাশের আরও কয়েকজন আইনজীবী বলেন, ‘নাম কেন বলতে হবে? তিনি আপনার চেয়ে সিনিয়র। সম্মান দিয়ে কথা বলেন। নাম কেন বলতে হবে?’
বিচারক বলেন, ‘আপনারা কোর্টের সঙ্গে যে আচরণ করছেন তাতে আমি লজ্জিত। আদালতকে যদি আপনারা কথা বলতে না দেন, তাহলে আমরা কীভাবে কাজ করব? আদালতে ঔদ্ধত্য পোষণ করলে আদালত চলবে কীভাবে? আমি কী রকম মানুষ আপনারা জানেন। আমিও চাই, যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হোক।’
এ সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক ফারুকী বলেন,‘আপনার আচরণ সংযত করতে হবে। আপনারা বারবার প্রশ্ন করলে অডিয়েন্স (আইনজীবীরা) ক্ষুব্ধ হয়। এমন কোন প্রশ্ন করবেন না যাতে অডিয়েন্স ক্ষুব্ধ হয়। সকলকে কনভেন্স করেই আপনাদের চলতে হবে। এটা গ্রামের আদালত নয়। এটা ঢাকার আদালত। এখানে যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন না।’
এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মাহাবুল ইসলাম কেন ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছেন, সেটি ব্যাখ্যা করেন। বিচারক আবারও প্রশ্ন করেন। তখন আবার হট্টগোল শুরু করেন কয়েকজন আইনজীবী। তাদের থামানোর চেষ্টা করেন, বিএনপিপন্থি সিনিয়র আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী।
বিচারক বলেন, ‘আপনাদের যদি আমাকে ভালো না লাগে, তাহলে জানান, আমি চলে যাই। ঢাকার আদালতে আমরা থাকতে আসিনি। আদালতের কাজ করতে দিন।’
এরপর এই আসামিপক্ষের আইনজীবী শামীম আল সাইফুল রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানিতে বলেন, ‘আসামি একজন ব্যবসায়ী। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। অসুস্থ বিবেচনায় রিমান্ড বাতিল করে জামিনের প্রার্থনা করছি।’
বিচারকের কাছে সকলের পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘সকলের পক্ষ থেকে আমি ক্ষমা চাচ্ছি। অনেকেই বিগত সরকারের কারণে ৩ বার মারাত্মকভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে। অনেকের ভেতরে ক্ষোভ রয়েছে। এগুলো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।’
এরপর বিচারক বলেন, ‘আপনাকে (ফারুক) আমি চিনি। ওনাকে চিনতাম না। আমার আদালতে কখনো দেখিনি, সেজন্য নাম জানতে চেয়েছি। আমাদের সম্মান দেন। আমরা এইটুকু সম্মান পাওয়া আশা করতেই পরি।’ এরপর আদালত নজরুল ইসলামকে ৭ দিনের রিমান্ড আদেশ দেন।
এর আগে গতকাল রাতে রাজধানীর গুলশান থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আওয়ামীলীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০০৭ সাল থেকে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম মজুমদার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান পদ থেকে তাকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া প্রায় দেড় দশক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। সেখান থেকেও তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন