পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অন্যতম প্রতাপশালী উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যিনি সময়ের ব্যবধানে হয়ে ওঠেন অন্যতম ক্ষমতাবান ব্যক্তি ও ব্যবসা বাণিজ্য জগতের অপ্রতিরোধ্য কারিগর। পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালাতে পারলেও বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার পারেননি। সুরত পাল্টে নৌ পথে পালাতে চাইলেও ধরা পড়েন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে।
ব্যাংকিং সেক্টরের মাফিয়া সালমান এফ রহমানকে থামাতে গতকাল বৃহস্পতিবার জনস্বার্থে রিট করার পর আদেশ হয়েছে, ছয় মাসের মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি এক সাথে করে প্রশাসক নিয়োগ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অর্থ পাচারের ফিরিস্তি
সালমান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পরই বেরিয়ে আসতে থাকে ঋণের টাকায় গড়ে ওঠা তার প্রতিষ্ঠানের সাম্রাজ্যের ফিরিস্তি। এর মধ্যে বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সিআইডির অনুসন্ধানের হাজার কোটি টাকা পাচারের সত্যতা মিলেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস, অটাম লুপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস, কোজি অ্যাপারেলস, প্যাটনাম গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিং ফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশনস এবং উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস লিমিটেড। এর মধ্যে গত বুধবার সালমান এফ রহমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।
গত সাড়ে ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলো। আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখানোর কারণে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর সালমান এফ রহমানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ খেলাপি করতে পারছিল না সরকারী ব্যাংক গুলো। কিন্তু আর রক্ষা হলো না। অবশেষে গত সপ্তাহে বড় অঙ্কের ঋণ খেলাপি হলেন বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান। এই প্রথমবারের মতো ঋণ খেলাপির তালিকাভুক্ত করা হলো তাকে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান শুধু জনতা ব্যাংকের এক শাখা থেকেই ঋণের নামে বের করেছেন প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা, যা ওই শাখার মোট ঋণের ৬৫ শতাংশ। এরই মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকার বেশি খেলাপি হয়ে গেছে। এসব ঋণের অধিকাংশই ছিল বেনামি। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিয়ে বেনামি ঋণগুলো তার নামে সংযুক্ত করেছে। চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ও জনতা ব্যাংকের নথি ঘেঁটে পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে এক ব্যাংকার নাম না জানানো শর্তে বলেন, বেনামি ঋণের জনক ছিলেন সালমান এফ রহমান। যা ধীরে ধীরে পুরো ব্যাংক খাতে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের বেশিরভাগ ঋণই বেনামি। এখন প্রায় সব অসাধু ব্যবসায়ীর বেনামি ঋণ রয়েছে।
সালমানে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে গত ৫ সেপ্টেম্বর জনস্বার্থে রিট করেন এক আইনজীবী। ছয় মাসের মধ্যে সব সম্পত্তি এক সাথে করে প্রশাসক নিয়োগ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। রিটকারী আইনজীবী ব্যারিষ্টার মাসুদ আর সোবহান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অনুসন্ধান করবে ব্যাংক থেকে কত টাকা নিয়েছে। এই ঋণগুলো নিয়েছিল সেইটাই বা কিভাবে পরিশোধ করবে।
তিনি আরো বলেন, বেক্সিমকো ফার্মা চালাবার জন্য যত কাঁচামাল আমদানি প্রয়োজন, তা করতে পারবে। কোন ধরনের বাধা নাই। এখানে যারা চাকুরী করছেন, তারা সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাবে । এই অর্ডার তাদের কোন ধরনের সমস্যায় ফেলবে না।
এই অর্ডারে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয় কত টাকা দেশের বাইরে পাচার করেছে। সেই পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে। কোর্টের নিদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ের সুযোগ পাবে বেক্সিমকো।
এদিকে পাচার কৃত অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান আদালতের নির্দেশনা অবশ্যই পরিপালনীয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের আদালতের এই আদেশ পরিপালন না করার কোন সুযোগ নেই।
তিনি আরো বলেন, গর্ভনর মহোদয় আমাদের জানিয়েছেন এই রকম একটা নির্দেশনা এসেছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন