ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপর নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কারের। তারই অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারের দায়িত্ব পেয়েছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুদক সংস্কার কমিটির প্রধান হিসেবে গত ১১ সেপ্টেম্বর তার নাম ঘোষণা করেন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
দুদক সংস্কারের বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন ড. ইফতেখারুজ্জামান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সাইফুল হক মিঠু
জাগো নিউজ: অভিনন্দন, দুদক সংস্কার কমিটিতে থাকার বিষয়টি কখন জানতে পারলেন?
ইফতেখারুজ্জামান: ধন্যবাদ। গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আনুষ্ঠানিক কিছুই জানি না। দুদক সংস্কারে কমিশন গঠন করা হবে। যে কমিটি দুদকের কোন কোন বিষয় সংস্কার প্রয়োজন সে প্রস্তাবনা দেবে। পাশাপাশি অন্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি সংস্কারেও কাজ করবে।
জাগো নিউজ: দুই দশকে দুদক জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা কতটা পূরণ করতে পেরেছে?
ইফতেখারুজ্জামান: দুর্নীতি দমন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুদক জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। নতুন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের সংস্কার প্রয়োজন। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। যেসব কারণে দেশে কর্তৃত্ববাদ বিকশিত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম দুর্নীতি। ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে একটা বড় অংকের সম্পদ আত্মসাৎ করা হয়েছে। দেশের বাইরে সম্পদ পাচার করার মাধ্যমে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করেছে একটা গোষ্ঠী। এখন নতুন বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়টি মনে হতে পারে যে যখন কেউ ক্ষমতার বাইরে থাকেন তখন তারা দুদকের হয়রানির শিকার হন। অন্যদিকে দুদক যেটা বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। এই দুদক দিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনির্মাণ করা যাবে না।
জাগো নিউজ: ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যারা ছিলেন তারা সবসময় দুদকের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। এখন আবার যারা ক্ষমতার বাইরে তাদের বিরুদ্ধে ঢালাও অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। এমন বাস্তবতায় দুদকের প্রাথমিক সংস্কার কীভাবে হবে?
ইফতেখারুজ্জামান: যেসব কারণে দুদক কার্যকর হয়নি তার মধ্যে একটি যৌক্তিক কারণ হলো, যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের বিরুদ্ধে দুদক কখনোই পদক্ষেপ নেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করেনি। তার প্রমাণ অতি সম্প্রতি দুদক তার কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই দেখিয়েছে। সাবেক সরকারের অনেকের বিরুদ্ধেই অনুসন্ধান, তদন্ত শুরু করেছে সংস্থাটি। যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ও দালিলিক তথ্য-প্রমাণ দুদকের কাছে ছিল। আমরাও অনেকের তথ্য পাঠিয়েছি, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যখনই ক্ষমতার পটপরিবর্তন হয়েছে, তখন অতি সক্রিয়তার একটা প্রয়াস সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করবো দুদক সফল হবে, কিন্তু তারা কতটা সফল হবে এটা এখন দেখার বিষয়।
বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে আমলাতন্ত্রের হাতে দুদক জিম্মি। রাজনৈতিক প্রভাবের হাতে জিম্মি। যার ফলে যখন যার হাতে বা যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের অনুসারীদের সুরক্ষা দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে দুদক ব্যবহৃত হয়েছে।
দীর্ঘদিন দুদকের হাতে যেসব মামলা জমে ছিল, তাদের অনেকেই বোধহয় কোনো না কোনোভাবে মুক্ত হয়ে গেছেন। অথবা মামলা উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। এতে এ বিষয়টি মনে হতে পারে যে যখন কেউ ক্ষমতার বাইরে থাকেন তখন তারা দুদকের হয়রানির শিকার হন। অন্যদিকে দুদক যেটা বলছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা যখন ক্ষমতায় থাকেন তখন দুদক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না। এই দুদক দিয়ে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন বিনির্মাণ করা যাবে না। কাজেই দুদকে আমাদের হাত দিতে হবে।
যারা ক্ষমতায় যান তারা তো জনগণের কথা ভুলে যান। তার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত আপনারা দেখেছেন। এখন অনেক ক্ষেত্রেই পালাবদল শুরু হয়েছে, তবে আচরণের বদল হয়নি। দলবাজি, দখলবাজি হচ্ছে। এমনকি আমলাতন্ত্রেও দখলাবাজির মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে।
দুদকে নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে নির্বাচন করতে হবে যার পেশাগত, ব্যক্তিগত জীবন অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত। বিশেষ করে তাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। দুদকের সব পর্যায়ের নিয়োগ বিশেষ করে, উচ্চ পর্যায়ে বা কমিশনার নিয়োগ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হতে হবে। এরপরও যদি দুদকে আদর্শ নেতৃত্ব পেয়ে যাই, তাহলেও অন্য দেশের মতো বাংলাদেশে দুর্নীতি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে না- যতক্ষণ পর্যন্ত না যারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় থাকবেন, আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতায় থাকবেন তাদের মধ্যে এই মানসিকতা সৃষ্টি না হয় যে দুর্নীতি যেই করুক না কেন তাকে বিচারের আওতায় আসতে হবে। এই মানসিকতা সৃষ্টি না হলে যারা ক্ষমতায় থাকবেন তারা নানানভাবে দুদকে চাপ সৃষ্টি করবেন।
দুদকের সংস্কারের পাশাপাশি একাধিক প্রতিষ্ঠানের সংস্কারও করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গন ও আমলাতন্ত্রে সংস্কার অত্যন্ত অপরিহার্য।
জাগো নিউজ: উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে হবে। এটা বলতে দুদক চেয়ারম্যান বা কমিশনারদের বুঝিয়েছেন?
ইফতেখারুজ্জামান: আমি তাদেরই বুঝিয়েছি। দুদকে একজন চেয়ারম্যান ও দুইজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়। একেবারে প্রথম থেকেই দুদকে যাদের কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। যদিও নিয়োগের জন্য প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু সেটা নামমাত্র অনুসরণ করা হয়। আবার অনেকক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয় না।
কমিশনের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব বা চিফ এক্সিকিউটিভ অথরিটি কমিশনাররা। অর্থাৎ দুইজন কমিশনার ও একজন চেয়ারম্যান। তারা কিন্তু দলীয়ভাবে প্রভাবিত হতে পারেন। আবার দুদক সচিব বা পরিচালকদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় ঘটতে পারে। যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের আনুগত আমলা বা ব্যক্তিদের নিয়োগ করা হয়। ফলে বিষয়টি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে আমলাতন্ত্রের হাতে দুদক জিম্মি। রাজনৈতিক প্রভাবের হাতে জিম্মি। যার ফলে যখন যার হাতে বা যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তাদের অনুসারীদের সুরক্ষা দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে দুদক ব্যবহৃত হয়েছে। দুদক নিজেকে ক্ষমতাসীনদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হতে দিয়েছে।
দুদকে যারা কমিশনার হিসেবে আসেন, সে মুহূর্তে তাদের রাষ্ট্রের কাছ থেকে প্রত্যাশা করার কিছু থাকার কথা নয়। নিয়োগ পাবার পর তাদের নিজেদের রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে ভাবা উচিত। নিয়োগদাতাদের ভুলে গিয়ে জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করা উচিত। তবে সেটি কেউ করতে পারেননি।
জাগো নিউজ: দুদকের উচ্চপর্যায়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোন ধরনের পরিবর্তন আসবে?
ইফতেখারুজ্জামান: নিয়োগ প্রক্রিয়াটা কাগজে-কলমে সঠিক আছে। আমরা কিছু নতুন ধারণা বিবেচনা করছি। যেমন যাদের নাম প্রস্তাব হয় তাদের বিষয়ে গণশুনানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এই চর্চাটা অনেক দেশেই আছে। আমরা সেটা করতে পারি। দুদকের স্ট্যাটাসটা যেন সাংবিধানিক হয়। সেটি এখন পর্যন্ত করা হয়নি। প্রথমে এটা করার কথা ছিল, করা হয়নি। এখন সুযোগ আছে। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে অনেক সাংবিধানিক পরিবর্তন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া উচিত।
জাগো নিউজ: দুদকের আইনজীবী রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। সংস্থাটির নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট নেই। এ বিষয়ে কোন ধরনের সংস্কার আনা হবে?
ইফতেখারুজ্জামান: সার্বিকভাবে সবকিছুরই সংস্কার হবে। দুদকের পক্ষ থেকেও একাধিকবার নিজস্ব প্রসিকিউশন ইউনিট চাওয়া হয়েছে। সেখানে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হলে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারবে দুদক। দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার এখতিয়ারও দুদকের হাতে দেখতে চাই। এই এখতিয়ার দুদকের কাছে আংশিক রয়েছে। সেজন্য দুদক আইনের সংস্কার প্রয়োজন।
অর্থপাচার রোধে অন্য সংস্থারও দায়িত্ব আছে। তারা দুদকের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে পারে। এনবিআর, বিএফআইইউ, পুলিশের সিআইডি, এটর্নি জেনারেল অফিস- এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার প্রয়োজন। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে টাকা ফেরত আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্কারের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা, স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ ও পারস্পরিক সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করার বিষয় আছে। এগুলো কীভাবে সম্ভব হবে সেগুলো অবশ্যই আমাদের বিবেচনায় আসবে।
জাগো নিউজ: দুদকের মাথার ওপর থাকেন আমলারা। তাদের কারণে অনেক দুর্নীতিবাজ আমলাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে কী ভাবছেন?
ইফতেখারুজ্জামান: আমলাতন্ত্রের মধ্যে সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের দায়িত্ব দুদকের সংস্কার প্রস্তাবনা করা। সে প্রস্তাবনার ওপর নতুনভাবে দুদক প্রতিষ্ঠিত হলেও সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। সরকারের হাতে কর্তৃত্ব থাকবে। সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত হয় দুদক। যদিও সরকার মানে জনগণের সরকার (প্রতিনিধি)।
তবে বাংলাদেশে আমরা যা দেখেছি, যারা ক্ষমতায় যান তারা তো জনগণের কথা ভুলে যান। তার বিভিন্ন দৃষ্টান্ত আপনারা দেখেছেন। এখন অনেক ক্ষেত্রেই পালাবদল শুরু হয়েছে, তবে আচরণের বদল হয়নি। দলবাজি, দখলবাজি হচ্ছে। এমনকি আমলাতন্ত্রেও দখলাবাজির মত ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক প্রভাবের সুযোগ নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে এটা হয়েছে।
এসবের প্রভাব দুদকের ওপর দুইভাবে পড়ে। প্রথমত তার নিজস্ব কার্যক্রমে পড়ে। কারণ আমলাদের অনেককেই দুদকে প্রেষণে আনা হয়। তারা এখানে এসে আমলাতন্ত্রের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রাধান্য দেন। ফলে দুর্নীতিবাজ আমলাদের সুরক্ষার হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেন তারা।
দ্বিতীয় বিষয় হলো এসব কারণে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রবণতা বাড়তে থাকে। কারণ আমলারা জানেন তারা সুরক্ষা পেয়ে যাবেন। এই সংস্কৃতি চললে যে স্বপ্ন আমরা দেখছি তা ধূলিসাৎ হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: বর্তমানে দুদকের পুরো কমিশন আছে। আপনাদেরও একটা সময় আছে সংস্কারের জন্য। সবমিলিয়ে দুদক কীভাবে চলবে? এ বিষয়ে আপনাদের কোনো প্রস্তাব থাকবে কি?
ইফতেখারুজ্জামান: আমি মনে করি না দুদকে এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি হয়নি যে প্রতিষ্ঠানে কোনো জনবল নেই। দুদক যে অবস্থায় এতদিন চলছে, সে অবস্থায় চলতে পারে। যদি না সরকার উচ্চ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত না নেয়। পরিবর্তনের চিন্তা সরকারের বিবেচনায় রয়েছে বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুদক মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বলে বলছেন। আপনারা এমন কী করবেন যাতে সংস্থাটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে?
ইফতেখারুজ্জামান: সংস্থাটিকে এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে যাতে এর যে আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা আছে তা কার্যকর হয়। যতটুকু ক্ষমতা থাকবে সেটা যেন দুদক কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারে, কাউকে ভয় বা করুণা যেন না করে। আইনের চোখে সবাই সমান, এই মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে দুদক কাজ করবে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
জাগো নিউজ: বর্তমান কমিশনের কি পদত্যাগ করা উচিত?
ইফতেখারুজ্জামান: সেটা কমিশনের নিজেদের বিবেচনা করা উচিত। যে অবস্থায় তারা আছেন, এখন তো সরকারের পক্ষ থেকে একটা বার্তা এসেছে। দুদক সংস্কারের জন্য একটা কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। এই বার্তাটা কমিশনের পাওয়া উচিত। তারা বিবেচনা করতে পারেন, তাদের কী করা উচিত।
জাগো নিউজ: দুদকের জবাবদিহি নিশ্চিত করা ও প্রতিষ্ঠানটির নিবর্তনমূলক আইন সংস্কারে কোন ধরনের পদক্ষেপ নেবেন?
ইফতেখারুজ্জামান: দুদক সচিবের হাতে পদায়ন ও বদলির ক্ষমতার বিরোধিতা আমরা করেছি। এটা পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু কিছুই হয়নি। কলমের খোচায় কমিশনের হাতে থাকা ক্ষমতার সিংহভাগ সচিবের হাতে অর্থ্যাৎ আমলাতন্ত্রের হাতে নিয়ে নিয়েছে। এটা করা হয়েছে আমলাতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এমন বিষয় চিরতরে বন্ধ করার সুযোগ আমাদের সৃষ্টি করতে হবে।
সম্প্রতি দুদকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। সেখানে তাদের বলেছি, আপনারা যে ঢালাওভাবে মামলা উঠিয়ে নিচ্ছেন- এর পেছনে কিছু যৌক্তিকতা নিশ্চয়ই বিবেচনায় নিয়েছেন। কোন যুক্তিতে এতদিন পর্যন্ত এসব মামলা পরিচালনা করলেন বা মামলা পরিচালনার নামে হয়রানি করলেন? আবার এখন হঠাৎ করে ঢালাওভাবে মামলা প্রত্যাখ্যান করছেন কোন যুক্তিতে? এটা দেশবাসীকে জানানো উচিত। এটা না করায় মানুষের আস্থার অভাব দুদকের ওপর যতটা ছিল তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
তখন দুদক কর্মকর্তারা বললেন, এটা আমাদের ভুল হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনা করবো। কিন্তু এরই মধ্যে দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। কোনো অগ্রগতি আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
জাগো নিউজ: অনেক সময় দুদক গণমাধ্যমকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহে বাধা দেয়। প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে আপনাদের কোনো সুপারিশ থাকবে কি না?
ইফতেখারুজ্জামান: দুদকে সংবাদকর্মীরা অনেক প্রতিকূলতা নিয়ে কাজ করেন। শুধু দুদক না, অনেক প্রতিষ্ঠান যখন নিজেদের ঝুঁকি দেখে তখন তারা সাংবাদিকদের প্রবেশ বন্ধ করে দেয়। এটা কোনো ভালো সংস্কৃতি না। এটা যেন আগামীতে না হয় সে প্রস্তাবনা আমাদের থাকবে।
জাগো নিউজ: অর্থপাচার রোধে দুদকের ক্ষমতা বাড়াতে সংস্কার কমিশন কী ব্যবস্থা নেবে?
ইফতেখারুজ্জামান: ঘুস লেনদেনের মাধ্যমে অর্থপাচারের বিষয়টি হলে তখন তা দুদকের এখতিয়ারে আসে। শুধু তখন এটা দেখতে পারে দুদক। তাদের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে খর্ব করা হয়েছে, মানি লন্ডারিং অ্যাক্টের মাধ্যমে। দুদকের হাত থেকে সরিয়ে এই ক্ষমতা সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। এটা সিআইডির এজেন্ডা ছিল না। এসব বিষয় আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।
একইভাবে আয়কর আইন, কালোটাকা সাদা করার বিষয় আছে। সরকারি কর্মচারী আটকের ক্ষেত্রে পূর্বানুমতির বিষয় আছে। এ ধরনের বিষয় রেখে কেবল দুদককে সংস্কার করবো, তাহলে তো হবে না। দুদকের সংস্কারের এজেন্ডা আরও অনেক ব্যাপক। এটা কেবল দুদক সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর বাইরেও আছে অনেক কিছু। সেগুলো আমরা চিহ্নিত করবো। যতটুকু আমাদের এখতিয়ার থাকবে সে অনুযায়ী আমরা সুপারিশ করবো।
জাগো নিউজ: আপনাকে ধন্যবাদ।
ইফতেখারুজ্জামান: জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন