‘আমার ছেলে রহমত উল্লাহ গুম হয়েছে। ছেলেকে আমার বুক থেকে নিয়ে গেছে। অসুস্থ শরীর নিয়ে কোথায় আছে। ছেলেকে ফেরত চাই।’
সোমবার (১২ই ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন মা মমতাজ বেগম। গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর আয়োজনে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গুম হওয়া রহমত উল্লাহকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে’ এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে ২০ বছর বয়সী মোহাম্মদ রহমত উল্লাহর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না বলে জানান তাঁর মা। তাঁর অভিযোগ, র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকের একটি দল তাঁর ছেলেকে তুলে নিয়ে গেছে।
রহমত উল্লাহর মা বলেন, তাঁর ছেলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। কারও সঙ্গে কোনো বিবাদও নেই। কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘কিছুই আমি জানি না। কোনো খোঁজ দেয় না।’
রহমত উল্লাহর বোন রাজিয়া আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তাঁদের বাড়ি মানিকগঞ্জের ধামরাই উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বড়নালাই গ্রামে। রহমত উল্লাহ বৈদ্যুতিক মিস্ত্রির কাজ করতেন। তাঁদের বাবা অনেক আগেই মারা গেছেন। তাঁরা তিন ভাইবোন।
রাজিয়ার অভিযোগ, ২০২৩ সালের ২৯শে আগস্ট দিবাগত রাত প্রায় ১২টার দিকে র্যাবের পোশাক এবং সাদা পোশাকের একটি দল তাঁদের বাড়িতে যায়। রহমত উল্লাহর জ্বর থাকায় তিনি মায়ের পাশে শুয়ে ছিলেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা বাড়ি এলে তাঁর মা দরজা খুলে দেন। এ সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কয়েকজন সদস্য ঘরের ভেতরে ঢুকে রহমত উল্লাহকে জোর করে ধরে নিয়ে যায়।
কারণ জানতে চাইলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানায়।
রহমত উল্লাহকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় মমতাজ বেগমও পেছন পেছন যান। তিনি বাইরে র্যাবের একটি গাড়ি এবং একটি হায়েস মাইক্রোবাস দেখতে পান। মাইক্রোবাসটিতে রহমতকে তোলা হয়।
রাজিয়া আরও অভিযোগ করেন, পরদিন ৩০শে আগস্ট রহমত উল্লাহর খোঁজে তাঁরা মানিকগঞ্জ র্যাব ক্যাম্পে গেলে ধামরাই থানায় খোঁজ নিতে বলা হয়। কিন্তু ধামরাই থানা কোনো তথ্য দেয়নি। নবীনগর র্যাব ক্যাম্প ও সাভার গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়েও তাঁরা খোঁজ নিতে যান। ধামরাই থানা প্রথমে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে নেয়নি অভিযোগ করে পরিবার জানান, স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর গত ৭ই অক্টোবর জিডি নেওয়া হয়।
রাজিয়া আরও বলেন, তাঁরা র্যাব, ডিবির কার্যালয় এবং কারাগারে ভাইয়ের খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু কোনো হদিস পাননি।
রাজিয়া বলেন, ‘ভাই যদি কোনো অপরাধে যুক্ত থাকে, তবে প্রচলিত আইনে বিচার হোক। কিন্তু গুম করে রাখবে কেন?’ তিনি সুস্থ অবস্থায় ভাইকে ফেরত চান।
তাঁদের অভিযোগের ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের কারও সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে গুম হওয়া লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা বিএনপির (পূর্ব) সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের ছেলে ইমন ফারুক, বিএনপি নেতা মো. কাওসার হোসেনের মেয়ে লামিয়া মিম এবং নিহত ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান ওরফে বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার বক্তব্য দেন।
মায়ের ডাকের মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন, সংগঠনের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম এবং সংহতি প্রকাশ করেন মনোচিকিৎসক আবদুল হক পিনাক।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন