মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গ্রুপের মধ্যের সংঘাতে সীমান্তের এপারে বাংলাদেশে সীমান্তঘেঁষা এলাকাগুলোতে আগের মতো গোলাগুলির শব্দ না শোনা গেলেও আতঙ্ক কাটেনি বাসিন্দাদের।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিয়ানমার অংশ থেকে দেয়া যায় কালো ধোঁয়া। দিনের বেলা গোলাগুলির শব্দ না থাকলেও রাতে ভেসে আসে গুলির শব্দ। আতঙ্কেই কাটে রাতদিন। স্কুলগুলো এখনও বন্ধ রয়েছে। সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র।
বাসিন্দারা আরও জানিয়েছেন, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের সীমান্তের ওপারে দিনের বেলা গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা বাড়ি-ঘরেই আছেন। এই এলাকায় এখনও আতংক রয়েই গেছে। দিনের বেলাতেও ভয়ে অনেকেই ঘরের বাইরে বেড় হতে ভয়ে থাকেন।
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) সকালেও সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির আওয়াজ শুনেছি। আর আমাদের এখানের বাসিন্দারা বাড়ি-ঘরেই আছেন। গোলাগুলি হচ্ছে নদীর ওপারে। এখানে বিপুলসংখ্যক বিজিবি মোতায়ন আছে। নদীতে কোনো নৌকা নেই।’
এদিকে বান্দরবানের তুমব্রু ইউনিয়নের সীমান্তের ওপার থেকে রাতে গুলির শব্দ ভেসে আসছে। নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণে এসএসসি পরীক্ষার একটি কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রটি হলো, ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ভেন্যু পরিবর্তন করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ১ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ২ নম্বর উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। যেকোনো মুহূর্তে পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বান্দরবান জেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত তবে রাতের বেলা তুমব্রু ইউনিয়নের সীমান্তের ওপার থেকে গুলি শব্দ ভেসে আসে। এখানে স্কুলগুলো এখনও বন্ধ আছে। এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি কী হবে বুঝা যাচ্ছে না। আশ্রয় কেন্দ্রে এখন নেই। তবে যেকোনো মুহূর্তে আক্রমণ হতে পারে, এই আতঙ্কে আছি।’
বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মান্নান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখন আমাদের এখানের অবস্থা ভালো আছে। আমরা বিজবির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আদনান চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘হোয়াইক্যং বর্ডারে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। রবিবার বেশি গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। আজকে (সোমবার) কম শোনা গেছে গোলাগুলির শব্দ।’
মিয়ানমারের রাখাইনে গোলাগুলি ও সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা যাতে প্রবেশ না করতে পারে সে বিষয়ে নাফ নদে সর্বোচ্চ সতর্ক পাহারায় রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি-২) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আজকে (সোমবার) পরিস্থিতি ভালো। নাফ নদীতে নৌকায় অপেক্ষারত কেউ নেই। আর গোলাগুলির শব্দও নেই। আমরা গত ১৩ নভেম্বর থেকে আমাদের জোরদার টহল আছে। এরপর আবার গোলাগুলি শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা সর্বচ্চ জোরদার টহল আছে। হোয়াইক্যং থেকে শুরু করে শাহপরীর দীপ পর্যন্ত আমার এলাকার পরিস্থিতি ভালো আছে।’
সীমান্ত এলাকায় খোজ নিয়ে জানা গেছে, পুরো বান্দরবান জেলা এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রাখা হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরাও এলাকাবাসির নিরাপত্তায় কড়া নজরদারি রাখছেন।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। প্রশাসনিক সব ধরণের ব্যবস্থা তদারকি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী বাকি ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন