দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০টি আসনের বিপরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ২৯টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৯৬৬ জন। এবার সর্বাধিক ৭৪৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এবার মোট প্রার্থীর এক চতুর্থাংশই স্বতন্ত্র। আর প্রতি আসনে গড়ে প্রার্থী হয়েছেন ৯ জন। গত বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন। গতকাল শুক্রবার থেকে মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শুরু হয়েছে। আগামী ৪ ডিসেম্বর সোমবার পর্যন্ত যাচাই-বাছাই চলবে। বর্তমানে ৪৪টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপিসহ সমমনা ও সরকারবিরোধী ১৫টি দল নির্বাচনের বাইরে রয়েছে। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ প্রাথমিকভাবে ২৯৮টি আসনে দলের মনোনয়ন জমা দেয়। পরে পাঁচটি আসনে দুটি করে মনোনয়ন জমা পড়ে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি-জাপা মনোনয়ন জমা দেয় ২৮৬টি আসনে। পরে ১৮টি আসনে দুটি করে দলীয় মনোনয়ন জমা দেয়। শুক্র থেকে সোমবার পর্যন্ত এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই চলবে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল চলবে ৫ থেকে ৯ ডিসেম্বর। সেগুলো নির্বাচন কমিশনে নিষ্পত্তি হবে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হওয়ার আগে দলীয়ভাবে জানাতে হবে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী কারা। যেসব আসনে একাধিক মনোনয়ন এখন রয়েছে সেখানে চূড়ান্ত প্রার্থী থাকবে, বাকিরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যাবেন। এরপর ১৭ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলে জানা যাবে, কারা থাকছেন ৭ জানুয়ারি ভোটের লড়াইয়ে। অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জেপি (বাইসাইকেল) ২০টি, জাকের পার্টি (গোলাপ ফুল) ২১৮টি, তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ) ১৫১টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি—এনপিপি (আম) ১৪২টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) ১১৬টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (মশাল) ৯১টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা) ৮২টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (ছড়ি) ৭৪টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফোরাম—বিএনএফ (টেলিভিশন) ৫৫টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন—বিএনএম ৪৯টি (নোঙর), বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন—বিটিএফ (ফুলের মালা) ৪৭টি, ইসলামী ঐক্যজোট (মিনার) ৪৫টি, ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার) ৩৯টি, বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্ট (মোমবাতি) ৩৭টি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা) ৩৪টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টি (হাতুড়ি)৩৩টি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এছাড়াও গণফ্রন্ট (মাছ) ২৫টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি (হাতঘড়ি) ১৮টি, বিকল্পধারা ১৪টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ) ১৪টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (কাঁঠাল) ১৩টি, গণতন্ত্রী পার্টি (কবুতর) ১২টি, গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য) ৯টি, সাম্যবাদী দল (চাকা) ছয়টি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—ন্যাপ (কুঁড়েঘর) ছয়টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ—বিএমএল (হাত পাঞ্জা) পাঁচটি ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (হারিকেন) দুইটি করে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে।
এদিকে বিএনপিসহ (ধানের শীষ) নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি—এলডিপি (ছাতা), ইসলামী আন্দোলন (হাতপাখা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি—সিপিবি (কাস্তে), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জেএসডি (তারা), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল—বাসদ (মই), বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি—বিজেপি (গরুর গাড়ি), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (খেজুরগাছ), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি—বাংলাদেশ ন্যাপ (গাভী), বাংলদেশ খেলাফত মজলিস (রিক্সা), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (কোদাল), খিলাফত মজলিস (দেওয়াল ঘড়ি), জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন—এনডিএম (সিংহ), ইনসানীয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ (আপেল) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (মোটরগাড়ি) নির্বাচনের অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মনোনয়নপত্র দাখিলের তথ্যের বিভ্রান্তি: নির্বাচনে কতজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তার সঠিক তথ্য বিগত ৩০ ঘণ্টায় সরবরাহ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে কতটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তার হিসাবও একেক সময় একক রকম। তথ্যের গরমিল নিয়ে ক্ষুব্ধ গণমাধ্যমের সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, গত ৩০ নভেম্বর বিকাল ৪টায় শেষ হয় মনোনয়নপত্র দাখিল। এরপর রাতে ইসির জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে ২ হাজার ৭৪১ জন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ইসির নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি অংশ নিচ্ছে। তবে কোন রাজনৈতিক দলের কতটি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও কত—সেটি জানাতে পারেনি।
গত বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র দাখিল শেষ হওয়ার পর ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম জানিয়েছিলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩০০টি আসনে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের কাছে সম্মানিত পদ প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আমরা রাতে (বৃহস্পতিবার) জানতে পারব, কোন আসনে কোন রাজনৈতিক দলের কোন কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারপর আসলে আমরা বলতে পারব, কতগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। এর আগে সত্যিকার অর্থে বলা সম্ভব নয়। আমরা শুক্রবার এটা সংগ্রহ করে আপনাদের বলতে পারব।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে ইসি থেকে জানানো হয়, মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭৪১ জন। আজ শুক্রবার আবার বলছে, ২ হাজার ৭১৩ জন। কিছু পরে আবার জানানো হয় মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ২ হাজার ৭১১ জন। একইভাবে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছিল ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। গতকাল শুক্রবার ইসি বলেছে, ৩২টি রাজনৈতিক দল। এরপর আবার ইসি বলছে, ২৯টি রাজনৈতিক দল। আসলে কোন তথ্যটি তথ্য—তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান গণমাধ্যমকর্মীরা।
ইত্তেফাক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন