দেশের তিন বিভাগের (রংপুর, সিলেট ও বরিশাল) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের প্রথম পর্বের নিয়োগ পরীক্ষা আগামী ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে। অন্যদিকে একই দিনের একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) পদের লিখিত পরীক্ষা। এতে বিপাকে পড়েছেন ওই তিন বিভাগের চাকরিপ্রত্যাশীরা। একটি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও আবেদন করেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
এদিকে এ বিষয়ে কথা বলতে গতকাল শুক্রবার ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের পরিচালক মো. সাঈদুর রহমান খানের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এ ছাড়া রাত ১০টা পর্যন্ত কোনো নিয়োগ পরীক্ষা পেছানোর খবর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে, আগামী ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের প্রথম পর্বের নিয়োগ পরীক্ষা। এই ধাপে তিনটি বিভাগের (রংপুর, সিলেট ও বরিশাল) পরীক্ষায় অংশ নেবেন তিন লাখ ৬০ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী।
একই দিনের একই সময়ে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হবে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসার (সাধারণ) পদের লিখিত পরীক্ষা। ৯২২টি পদের বিপরীতে সারা দেশের সাড়ে ১০ হাজারের বেশি প্রার্থী এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন।
নিয়োগ পরীক্ষার জটিলতা নিয়ে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেছেন ওই তিন বিভাগের কয়েকজন চাকরিপ্রত্যাশী। তাঁদের দাবি, ওই তিন বিভাগের অন্তত তিন হাজার প্রার্থী এই দুই পরীক্ষায় অংশ নিতে উত্সুক হয়ে আছেন।
এরই মধ্যে এক হাজার প্রার্থী একটি পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি গ্রুপে একমত পোষণ করেছেন। তাঁরা জানান, যেহেতু ব্যাংকের পরীক্ষার সময়সূচি পরে দেওয়া হয়েছে, তাই এই পরীক্ষা অন্তত এক দিন পেছানোর দাবিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
রংপুরের চাকরিপ্রত্যাশী সোহাগ রানা বলেন, ‘বর্তমান চাকরির বাজার খুবই কঠিন হচ্ছে। এত প্রতিযোগিতা করে যেখানে প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলাম, অথচ একই দিনে দুই পরীক্ষার কারণে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা খুবই বেদনাদায়ক। প্রাথমিকে বিশাল জনবল নিয়োগ দেওয়া হবে, ফলে এর গুরুত্বও কম না।
অন্যদিকে ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদমর্যাদায় এগিয়ে। এই অবস্থায় একটি পরীক্ষায় অংশ নিলে অন্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া আমাদের অধিকার।’
মোস্তফা কামাল নামের আরেক প্রার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা দুটি আমার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বয়স ৩০-এর বেশি হয়ে গেছে। এর পর থেকে এসব পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারব না।’
নারীদের সমস্যা আরো প্রকট জানিয়ে চাকরিপ্রত্যাশী সায়মা সুলতানা কেয়া বলেন, ‘প্রাথমিকে নারীদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা আছে। আবার অবরোধ কর্মসূচির মধ্যেও ব্যাংকের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছি। আমি কোনো পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাই না। আমার মতো অনেক নারী অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও একটি চাকরির প্রত্যাশায় সংসারজীবন শুরু করতে পারছেন না। অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজেদের পরিবারের বোঝা মনে করছেন। আবার সংসারজীবনে নানা প্রতিকূলতা দূর করতে একটি চাকরির আশায় নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন, এমন নারীও আছেন।’
চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, দেশের চাকরির ক্ষেত্র খুবই ছোট। প্রতিযোগিতা অনেক বেশি। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার সময়সূচি আগে প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকের পরীক্ষা এক দিন বা এক সপ্তাহ পিছিয়ে নিতে হবে। ডিসেম্বর মাসজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এই পরীক্ষায় কোনো প্রভাব পড়বে না। একই দিনে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ করতে হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন