সিরিয়ার বিদ্রোহীরা রোববার সকালেই জানায়, 'স্বৈরশাসক' প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং সিরিয়া এখন মুক্ত। এর আগে বার্তাসংস্থা রয়টার্স সিরিয়ার দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছে, প্রেসিডেন্ট আসাদ রাজধানী দামেস্ক ছেড়েছেন। এরপর গতকাল সারাদিনব্যাপী আসাদের অবস্থান সম্পর্কে বিভিন্ন জল্পনা চাউর হয়।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, আসাদকে বহনকারী উড়োজাহাজ সম্ভবত বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রোববার রাতে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়া তাস জানায়, আসাদ ও তার পরিবার মস্কোতে অবস্থান করছেন। ক্রেমলিনের বরাত দিয়ে তাস বলেছে, আসাদ রাশিয়ার কাছে মানবিক আশ্রয় চেয়েছে এবং মস্কো তাতে অনুমোদন দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, দামেস্ক থেকে মস্কোতে কীভাবে পালালেন আসাদ, কারাই তাকে সাহায্য করলেন পালাতে?
সিএননের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসাদের বিরুদ্ধে গত ২৭ নভেম্বর থেকে যখন বিদ্রোহ শুরু হয় তখন নিজেকে একটু আড়াল করে রাখছিলেন তিনি। তবে গত সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন আসাদ। এরপর তিনি অঙ্গীকার করেন যে তিনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।
গত শনিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ঘিরে ফেলে বিদ্রোহীরা। তখনই একটি সূত্র সিএনএনকে জানায়, শহরের কোথাও আসাদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আসাদের বাসভবনেও ছিল না তার রক্ষীরা। তখন থেকেই জল্পনা চাউর হয়, শহর ছেড়ে পালিয়েছেন আসাদ।
তবে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট কার্যালয় প্রাথমিকভাবে এই তথ্য প্রত্যাখ্যান করে। বলা হয়, কিছু বিদেশি মিডিয়া ভুয়া খবর এবং গুজব ছড়াচ্ছে। এরপর বিদ্রোহীরা রোববার যখন দামেস্ক দখল করে তখন তারা আসাদকে খোঁজা শুরু করে। কিছু যোদ্ধা আসাদের বাসভবনে ভাঙচুর চালায়।
এরপরেই রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, আসাদ প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে এবং সিরিয়া ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেইসঙ্গে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, রাশিয়া এসব আলোচনায় অংশ নেয়নি। এরপরেই রাশিয়া জানায়, আসাদ মস্কোতে পৌঁছেছেন। বিদ্রোহীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র সিএনএনকে বলেছেন, রাশিয়ার নিরাপত্তায় আসাদ দামেস্ক ছাড়েন।
আরেকটি সূত্র জানায়, সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় লাতাকিয়ায় যান আসাদ- যেখানে রাশিয়ার একটি বিমানঘাঁটি আছে।
ফ্লাইটরাডার ২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, দামেস্ক থেকে ছাড়া ইলিউশিন৭৫ উড়োজাহাজটি প্রথমে সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে উড়ে যায়। কিন্তু সেখান থেকে পরে ইউ-টার্ন নিয়ে উড়ে যেতে শুরু করে এবং কয়েক মিনিট পর সেটি মানচিত্র থেকে অদৃশ্য হয়ে যায়। অদৃশ্য হওয়ার সময় উড়োজাহাজটি হোমসের ওপর ছিল।
২৩ বছরের বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছেন বাশার আল-আসাদ। তাকে সমর্থন দিয়ে আসছিল ইরান ও রাশিয়া। তবে গত ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) অভিযানে কার্যত আসাদ যুগের অবসান হলো।
ইত্তেফাক
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন