হঠাৎ সামরিক আইন জারির ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা দক্ষিণ কোরিয়া। তীব্র বিক্ষোভের মুখে তা প্রত্যাহার করতেও বাধ্য হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওল। সেই তিনি অভিশংসনের মুখেও পড়ছেন।
এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে বর্তমানে দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইউন সুক–ইওল প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম ইয়ং–হিউনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে চৌ বাইয়ুং–হাইউকের নামও ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি সৌদি আরবে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার বর্তমান রাষ্ট্রদূত।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী কিম বুধবার তার পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, সামরিক আইন জারি করার পেছনে তিনি ছিলেন অন্যতম কুশীলব। সরকারের কিছু শীর্ষ কর্মকর্তাকে বিরোধী দলগুলো অপসারণ বা ইমপিচ করার চেষ্টা করার পর প্রেসিডেন্ট ইউন চরম ব্যবস্থা নেন বলে বিরোধী সংসদ সদস্যরা অভিযোগ করছেন।
প্রেসিডেন্ট ইউনকে নিয়ে বিতর্ক
দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন। সামরিক আইন জারি করা ছিল সর্বশেষ বিতর্ক। তার প্রশাসন বেশ অনেকগুলো কেলেঙ্কারির ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে একটিতে জড়িত ছিলেন ফার্স্ট লেডি কিম কিওন হি। গোপনে ধারণ করা ভিডিওতে দেখা গেছে, তিনি একজন প্যাস্টরের কাছ থেকে বিলাসী একটি ডিওর হাতব্যাগ গ্রহণ করছেন।
ওই ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ার পর ফার্স্ট লেডির বিরুদ্ধে অনুচিত কাজের অভিযোগ ওঠে। সাধারণ মানুষ তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্টের প্রশাসন যে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তারই একটি প্রতীক হিসেবে ঘটনাটিকে দেখেন সমালোচকেরা।
এই বিতর্কের সঙ্গে আরও যোগ হয়েছিল ফার্স্ট লেডির কর ফাঁকি ও শেয়ার কারসাজির অভিযোগ। পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া প্রেসিডেন্টের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করে। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে বিরোধী দলগুলো উদ্যোগ নেয়। ফলে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের প্রতি মানুষের আস্থা আরও কমে যায়।
চলতি বছরে আরও আগের দিকে সরকারের ভর্তুকি মূল্যের বাজারে যে দামে পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল, তাকে ‘বাস্তবসম্মত’ বলে প্রশংসা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। তার এই মন্তব্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। অনেকে একে ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির সময় প্রেসিডেন্টের মূক–বধির হয়ে পড়ার সঙ্গে তুলনা করেন। বিরোধী নেতারা এ নিয়ে হাসিঠাট্টা করেছেন। একজন বলেছেন, “একটি পিঁয়াজই প্রেসিডেন্টের সর্বনাশ করতে পারে।”
পতনের দ্বারপ্রান্তে প্রেসিডেন্ট ইউন
প্রেসিডেন্ট ইউনের কর্মকাণ্ডকে এখন সমর্থন করছে ২০ শতাংশেরও কম কোরীয়। ক্ষমতার স্বার্থে তার বিভাজনের রাজনীতি অনেক মানুষকে বিমুখ করেছে। আর নির্বাচনে যেসব প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা পূরণ করতে না পারার কারণে তার অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক কিম জুনিল বলেন, “প্রেসিডেন্ট সম্ভবত বিচ্ছিন্নতা বোধ করছেন এবং তার ক্ষমতা হুমকির মুখে।”
প্রেসিডেন্টকে অপসারণ করার জন্য অভিশংসন প্রস্তাব ভোটাভুটিতে আসছে, পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে জন–অসন্তোষও বাড়ছে। সূত্র: ইকোনমিক টাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন