প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর দলবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এখনো অপসারণ-অব্যাহতি প্রদান করা হয়নি। প্রায় ৪২০০ জন কর্মকর্তা ন্যায়বিচার ও বঞ্চনা নিরসনের আবেদন করেছে। কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১৫৪৬ জনের আবেদনকে প্রাথমিকভাবে আমলে নিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এসব দুষ্ট ক্ষতগুলো সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রত ও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কেউ কেউ গোপনে বিগত স্বৈরাচারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ইন্ধন যোগাচ্ছে। এ কারণে শত চেষ্টা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজে গতিশীলতা আসছে না, জনমনে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ৩৪ জন বিতর্কিত জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার, বিতর্কিত ১৬ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল এবং সাবেক ফ্যাসীবাদী সরকারের দোসর, ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িত সেচ্ছাচারী, দুর্নীতিবাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ কাজে লিপ্ত ১৯ জন কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম। দলবাজ, অদক্ষ ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের অপসারণ-অব্যাহতি প্রদান গত ৫ আগস্টের পর দীর্ঘদিনের বঞ্চিত কর্মরত যে সমস্ত কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েও এখনো পদায়ন পাননি তাঁদেরকে দ্রুত উপযুক্ত পদে পদায়ন করতে হবে। জনপ্রশাসনকে দ্রুত সচল করতে ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে কর্মরত বিতর্কিত জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে নিরপেক্ষ, সৎ, দক্ষ কর্মকর্তাকে পদায়ন করা এবং বৈষম্যের শিকার ও পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতপেক্ষ জ্যেষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা প্রদানসহ পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে জারির দাবিতে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের মাধ্যমে দাবি সম্বলিত একটি স্মারকলিপি প্রধান উপদেষ্টাকে দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এ বি এম আব্দুস সাত্তারের নেতৃত্ব একটি প্রতিনিধি দল এ স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের দাবি জানিয়ে যে আবেদন করেছে তা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো।
বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের আহ্বায়ক এ বি এম আব্দুস সাত্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম বাংলাদেশের সর্বস্তরের সরকারি কর্মচারীগণের একটি সংগঠন। এ সংগঠন সব স্তরের সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে সব প্রকার বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার। বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে বিশেষ করে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ‘ঐক্য ফোরাম’ মাঠে থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। মানববন্ধন ও আন্দোলনের পক্ষে বিবৃতি প্রদানসহ সব মিছিল-মিটিংয়ে সশরীরে উপস্থিত থেকেছে ফোরামের সদস্যগণ। জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মযজ্ঞে অংশ নিয়ে বিপ্লবের সুফল জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেয়ার কাজে নিয়োজিত আছে। ইতোমধ্যে ঐক্য ফোরামের আহ্বানে প্রধান উপদেষ্টা বঞ্চিত চাকরিরতদের পদোন্নতি ও পদায়ন করেছেন। এ জন্যে ঐক্য ফোরাম প্রধান উপদেষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে এবং আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের বঞ্চনার অবসান এখনো হয়নি। প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসর দলবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারীদের এখনো অপসারণ/অব্যহতি প্রদান করা হয়নি। এসব দুষ্ট ক্ষতগুলো সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকারকে বিব্রত ও বিভ্রান্ত করে চলেছে। কেউ কেউ গোপনে বিগত স্বৈরাচারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের ইন্ধন যোগাচ্ছে। এ কারণে শত চেষ্টা সত্ত্বেও সরকারের বিভিন্ন দফতরে কাজে গতিশীলতা আসছে না, জনমনে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছে। জনপ্রশাসনকে দ্রুত সচল করতে ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়ন করা আবশ্যক। বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার কর্তৃক চার সহস্রাধিক নিরপেক্ষ, সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা বিনা কারণে চাকরি চ্যুতি, বাধ্যতামূলক অবসর, ওএসডি ও পদোন্নতি বঞ্চিতসহ নানা হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বঞ্চিত কর্মকর্তারা ন্যায় বিচারের দাবিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আবেদন জানান। সরকার সদয় হয়ে সাবেক সচিব ড. জাকির আহমেদ খান নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। প্রায় ৪২০০ জন কর্মকর্তা ন্যায়বিচার ও বঞ্চনার নিরসনের আবেদন করেন। কমিটি যাচাই-বাছাই করে ১৫৪৬ জনের আবেদনকে প্রাথমিকভাবে আমলে নিয়ে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছেন। এ কমিটি নিরলস পরিশ্রম করে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করায় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে আমরা পরম শ্রদ্ধাভাজন ড. জাকির আহমেদ খানসহ উল্লেখিত কমিটির সব সদস্যগণকে মোবারকবাদ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান-এর আন্তরিক ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কয়েকজন কর্মকর্তার নেতিবাচক মনোভাবের কারণে তিনি বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারছেন না। এসব কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা নানা অপ্রাসঙ্গিক ইস্যু সৃষ্টি করে বিলম্ব করছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং নিন্দনীয়। এটা বর্তমান সরকারকে বিব্রত এবং বিতর্কিত করার একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ বলে আমরা মনে করি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পূর্বে সিভিল-পুলিশসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি, আধা-সরকারি সংস্থার, দলীয় বিবেচনায় লক্ষাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছিল, সুপারিশকৃত প্রার্থীদের অধিকাংশই ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী পরিবারের সদস্য। এদের নিয়োগ প্রদান করলে প্রশাসনে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে। আমরা এক্ষেত্রে ৪৩ বিসিএসসহ চূড়ান্ত পর্যায়ে সুপারিশকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করার জোর দাবি জানাচ্ছি। গত ২০০৭ সালে ১১ই জানুয়ারি ফখরুদ্দিন ও মইনুদ্দিন-এর নেতৃত্বে অসাংবিধানিক সরকার প্রতিষ্ঠা এবং ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পূর্ববর্তী সরকারের সুপারিশকৃত বহু নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল বাতিল করা হয়েছিল। এমনকি ২৭ বিসিএস পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃপরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। দাবিগুলো অনতিবিলম্বে বাস্তবায়নের জন্য আমরা প্রধান উপদেষ্টার সানুগ্রহ হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ফ্যাসীবাদী সরকার কর্তৃক পদোন্নতি বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সব স্তরের পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মচারীদের প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা ও জ্যেষ্ঠতাসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির ‘প্রজ্ঞাপন’ অবিলম্বে জারি করতে হবে। ফ্যাসীবাদী আওয়ামী সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত সব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এবং বর্তমান সরকার কর্তৃক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বিতর্কিত ১৬ জন কর্মকর্তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। বর্তমানে কর্মরত সাবেক ফ্যাসীবাদী সরকারের দোসর, ছাত্র-জনতা হত্যায় জড়িত স্বেচ্ছাচারী, দুর্নীতিবাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ কাজে লিপ্ত ১৯ জন কর্মকর্তাকে অবিলম্বে প্রত্যাহারপূর্বক আইনের আওতায় আনতে হবে। দলবাজ, অদক্ষ ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের অপসারণ-অব্যাহতি প্রদান পূর্বক ৫ আগস্ট দীর্ঘদিনের বঞ্চিত কর্মরত যে সমস্ত কর্মকর্তা পদোন্নতি পেয়েও এখনো পদায়ন পাননি তাদেরকে দ্রুত উপযুক্ত পদে পদায়ন করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ৩৪ জন বিতর্কিত জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে নিরপেক্ষ, সৎ, দক্ষ কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে হবে। পূর্বের ফিট লিস্ট বাতিল করে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পুনরায় ফিট লিস্ট করতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা বাংলাদেশ ও গোটা বিশ্বের প্রাণপুরুষ নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিহাসের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ও জননন্দিত সরকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক। সে লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার জন্যে বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানানো হয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন