মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কারের জন্য সোমবার (৭ অক্টোবর) দুই বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুন ক্ষুদ্র আরএনএ অণুর নতুন একটি শ্রেণি মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার করেছেন। এই আবিষ্কারের মাধ্যমে কোষের কার্যকারিতা ও বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত সৃষ্টি হলো।
মাইক্রোআরএনএ। এখন নিশ্চয়ই ভাবছেন, এই মাইক্রোআরএনএ আবার কী? এটা কি আরএনএর ছোট ভাই? এটা জানার জন্য আরএনএ এবং মাইক্রোআরএনএর সংজ্ঞা ও পার্থক্য জানতে হবে।
আরএনএ হলো উচ্চ আণবিক ওজনের জটিল যৌগ যা সেলুলারপ্রোটিন সংশ্লেষণে কাজ করে। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে জেনেটিক কোডের বাহক হিসেবে ডিএনএ প্রতিস্থাপনও করে থাকে। আর মাইক্রোআরএনএ হলো একক স্ট্র্যান্ডেড নন-কোডিং আরএনএ অণু।
সোজা কথায় আরএনএ হলো একটি নিউক্লিক অ্যাসিড যা সরাসরি প্রোটিন সংশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে মাইক্রোআরএনএ হলো ছোট, একক স্ট্র্যান্ডেড ও নন-কোডিং যাতে ২১-২৩টি নিওক্লিওটাইড থাকে। উদ্ভিদ, প্রাণী ও কিছু ভাইরাসে মাইক্রো আরএনএ পাওয়া যায়।
অনলাইন জার্নাল সায়েন্সডিরেক্টের একটি গবেষণা প্রবন্ধে মাইক্রোআরএনএ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। মাইক্রো আরএনএ হলো ক্ষুদ্র আরএনএ অণু যা বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া বিশেষ করে জিন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মাইক্রোআরএনএ নিয়ে ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রুভকুনের গবেষণার মধ্য দিয়ে মাইক্রোআরএনএ পোস্ট-ট্রান্সক্রিপশনাল জিন নিয়ন্ত্রণের রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। তাদের এই আবিষ্কার কোষের কার্যকারিতা ও বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে। বিশেষ করে ক্যান্সার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ ও স্নায়বিক উপসর্গসহ আরও অনেক রোগের চিকিৎসায় নতুন ধরনের চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
চিকিৎসায় দুই বিজ্ঞানীকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা
নোবেল কমিটির সভার কথা তুলে ধরে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, নোবেল পাওয়া ওই দুই বিজ্ঞানীর যুগান্তকারী এই আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারণা নিয়ে এসেছে। যা মানুষসহ বহুকোষী অন্যান্য জীবের জন্য অপরিহার্য।
এখন আমরা জানতে পেরেছি, মানব জিনোম এক হাজারেরও বেশি মাইক্রো আরএনএ কীভাবে কাজ করে। তাদের বিস্ময়কর এই আবিষ্কার জিন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। এই আবিষ্কারের ফলে এখন এসব জীব কীভাবে বিকাশ লাভ করে এবং তার জন্য মাইক্রোআরএনএগুলোর মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও আমরা জানতে পারবো।
নোবেল কমিটির সভায় নোবেল চিকিৎসা কমিটির সাধারণ সম্পাদক থমাস পার্লাম্যান বলেন, ‘এখনো ভিক্টর অ্যাম্ব্রসের সঙ্গে আলাপ হয়নি আমার। মোবাইল ফোনে আমি তাকে মেসেজ পাঠিয়ে রেখেছি। আশা করছি, তিনি খুব দ্রুতই আমার সঙ্গে কথা বলবেন। এ ছাড়া গ্যারি রুভকুনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি আমার। আমি মনে করছি, তারা দুজনেই আমার সঙ্গে কথা বলবেন।’
নোবেল পাওয়া দুই বিজ্ঞানীর পরিচয়
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যামশায়ারে ১৯৫৩ সালে জন্ম ভিক্টর অ্যাবব্রোসের। ১৯৭৯ সালে ম্যাসাচুয়েটস ইনস্টিটিউট থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া ১৯৭৯-১৯৮৫ পর্যন্ত একই প্রতিষ্ঠানে পোস্ট ডক্টরাল গবেষণা করেন। ১৯৮৫ সালে হার্ভার্ড, ক্যামব্রিজ ও ম্যাসাচুয়েটসের প্রধান গবেষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি ম্যাসাচুয়েটস মেডিকেল স্কুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যাচারাল সাইন্সের প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
অন্যদিকে গ্যারি রুভকুনের জন্ম ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। ১৯৮২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৫ সালে ম্যাসাচুয়েটস জেনারেল হাসপাতাল ও হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের প্রধান গবেষক হন তিনি। অদ্যাবধি এখানেই গবেষণাকর্মে নিয়োজিত রয়েছেন তিনি।
ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুনের মাইক্রো আরএনএ আবিষ্কার চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ও সুদূরপ্রসারী সাফল্যের স্বাক্ষর।
রোগ নিয়ন্ত্রণে মাইক্রো আরএনএর ভূমিকা
কোষের কার্যকারিতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোআরএনএ-র সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে। ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুনের এই আবিষ্কারের ফলে কীভাবে মানুষের ডিএনএর ভেতর থাকা একই জিনগত তথ্য থেকে মানুষের হাড়, স্নায়ু, ত্বক ও হৃদপিণ্ডের কোষসহ বিভিন্ন ধরনের বিশেষ কোষের জন্ম হয়- সেই বিষয়ে সবিশেষ জানা সম্ভব হবে। পাশাপাশি অভিন্ন জিনগত উপাদান হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে বিভিন্ন টিস্যু বিকশিত হয়, সেই জটিল প্রক্রিয়াও এখন অনায়াসে ব্যাখ্যা করতে পারবেন চিকিৎসকরা।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুনের মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার নতুন যুগের সূচনা করেছে। কোষের কার্যকারিতা নির্ণয় ও রোগ নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোআরএনএ চিকিৎসকদের কাজে অনেক বড় সহায়ক হয়েছে। এই আবিষ্কারের কারণে এ বছর ভিক্টর অ্যামব্রস ও গ্যারি রুভকুনকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে তাদের এই আবিষ্কার গোটা চিকিৎসা জগতের উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এই আবিষ্কার একবিংশ শতাব্দীর মাইলফলক বললেও অত্যূক্তি হবে না।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন