Image description
চার মাস ধরে বন্ধ নিয়মিত মুদ্রণ বিদেশে চাকরিপ্রার্থীরা বড় বিপদে নতুন ঠিকাদার চূড়ান্ত হয়নি

পরীক্ষায় পাস করেও রাজধানী ঢাকারসহ দেশের কমপক্ষে ১১ লাখ পেশাদার ও অপেশাদার গাড়িচালক স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) তা সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে এসংক্রান্ত কাজে ঠিকাদার নিয়োগ দিতে না পারায়। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, চার মাস ধরে এই কার্ড মুদ্রণও হচ্ছে না। সর্বশেষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চার মাস আগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।
নতুন ঠিকাদার নিয়োগ ঝুলছে দরপত্র প্রক্রিয়ায়। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দরপত্র আহবানসহ আগাম সব প্রক্রিয়া এগিয়ে রাখলে আজ এই দুরবস্থা দেখা দিত না। বারবার এই সংস্থার চেয়ারম্যান বদল হওয়ায় কাজের ধারাবাহিকতাও ঠিক থাকছে না।

অবস্থা এমন যে জরুরি দরকারেও হাজার হাজার গাড়িচালক স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না।
এ কারণে অনেকেই বিদেশে চাকরি করার সুযোগ পেলেও তাতে সায় দিতে পারছেন না।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, গত নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ লাইসেন্স মুদ্রণের জন্য জমা হয়ে আছে। বিআরটিএর কর্মকর্তারা বলছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ডিসেম্বরে তা ১২ লাখ ছাড়াবে।

জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই মেয়াদ শেষ হয়েছে এই স্মার্ট কার্ড মুদ্রণকাজে যুক্ত ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের (এমএসপি)।
প্রতিষ্ঠানটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিল। চুক্তি শেষ হওয়ায় এই প্রতিষ্ঠানের গত ২৯ জুলাই থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স মুদ্রণ বন্ধ রয়েছে। তবে বিআরটিএ বিশেষ ব্যবস্থায় আবেদনকারীদের আঙুলের ছাপ নেওয়াসহ পুরো বায়োমেট্রিক নেওয়ার ব্যবস্থা সচল রেখেছে বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে।

জানা গেছে, মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্সের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, পাঁচ বছরে ৪০ লাখ স্মার্ট কার্ড লাইসেন্স দেওয়ার কথা ছিল। এ ছাড়া পেশাদার চালকদের জন্য ৫০ হাজার এবং অপেশাদার চালকদের জন্য আরো ৫০ হাজার কার্ড মজুদ রাখার কথা ছিল।
কিন্তু বিআরটিএর তথ্য অনুযায়ী, পাঁচ বছরে প্রায় ৩৩ লাখ আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ২৬ লাখ গ্রাহক লাইসেন্স পেয়েছেন; বাকি সাত লাখ এখনো পাননি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো নতুন জমে থাকা উত্তীর্ণ গাড়িচালকের স্মার্ট কার্ড।

জানা গেছে, সাত লাখ লাইসেন্স মুদ্রণই করতে পারেনি এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিদিন আট হাজার কার্ড সরবরাহের লক্ষ্য থাকলেও কোনো দিনই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০১১ সালে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল স্মার্ট কার্ড ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু করে বিআরটিএ। শুরুতে বিআরটিএ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রকল্পে যুক্ত ছিল টাইগার আইটি। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত আবারও ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের দায়িত্ব পায় টাইগার আইটি। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় ২০১৯ সালের আগস্টে এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বিআরটিএ। চুক্তির মেয়াদ পর্যন্ত স্মার্ট কার্ডের সার্ভার ও ডেটা বেইস হস্তান্তরে গড়িমসি করে টাইগার আইটি। এটির মেয়াদ শেষে প্রায় ১২ লাখ ৪৫ হাজার লাইসেন্সের আবেদন ঝুলে থাকে। এ অবস্থায় সংকট থেকে রেহাই পেতে ২০২৩ সালের আগস্টে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রবর্তন করে। এই নির্দেশনা অনুসরণ করে আপাতত ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করছে বিআরটিএ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ই-লাইসেন্স বৈধ হিসেবে গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অনুরোধও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। ফলে বৈধ গাড়িচালকরাও রাস্তায় বিপদে পড়ছেন।

কিছু ক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে স্মার্ট কার্ড নিজেদের তত্ত্বাবধানে মুদ্রণ করছে বিআরটিএ। রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে গত কয়েক দিন গিয়ে দেখা যায়, স্মার্ট কার্ড লাইসেন্সের আশায় ভিড় করছেন বিদেশ যেতে আগ্রহী অনেকে। ‘জরুরি প্রয়োজন’ ছাড়া স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে না। সৌদি আরব যেতে প্রস্তুতি গ্রহণকারী আলী হোসেন বলেন, ‘অনেক ভোগান্তির পর কার্ড বুঝে পেয়েছি। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় বহু মানুষের কষ্ট হচ্ছে। জানা গেছে, এভাবে লাইসেন্স পাওয়ার হার খুবই কম।’

বিআরটিএর পরিচালক (প্রকৌশল) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে দরপত্র আহবান করা হবে। বিদেশগামীদের জরুরি স্মার্ট লাইসেন্স আমরা নিজেরাই প্রিন্ট করছি। সরকারের নির্দেশনায় ই-লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে এবং তা সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য।’